চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কাঁকরোল চাষে সফল কৃষকের গল্প

অনুপম কুমার অভি , বাঁশখালী

১৪ জুন, ২০১৯ | ১:১০ পূর্বাহ্ণ

বাঁশখালী কালীপুরের কৃষক মুন্সি মিয়া কাঁকরোল চাষ করে পরিবারে সচ্ছলতা এনেছেন। তার ১০ বছর ধরে সফল ব্যবসা পদ্ধতি অনুকরণ করে এলাকার অনেক কৃষক কাঁকরোল চাষে ঝুঁকে পড়েছে।
কালীপুর ইউনিয়নের কোকদ-ী গ্রামের মৃত কবির আহমদের ছেলে আজিজ আহমদ প্রকাশ মুন্সি মিয়া (৪৫) চার সন্তান নিয়ে সুখেই দিন অতিবাহিত করছেন। বছরে নয় মাসেই কাঁকরোল বিক্রি করে তার সংসার চলে। খরচের অতিরিক্ত টাকা ব্যাংকে জমা রেখেই তার দিন অতিবাহিত হচ্ছে। প্রতি মৌসুমেই এক কানি জমিতে কাঁকরোল চাষ করে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কাঁকরোল বিক্রি করে থাকেন।
সবজির মধ্যে কাঁকরোল চাষের মূল কারণ হিসেবে মুন্সি মিয়া জানান, ‘কাকরল ক্ষেত খেইত্যাল্লেরে ন’ মারে, গুলা ধরে গীরজ লাভবান অয়।’
অর্থাৎ কাঁকরোল ক্ষেত কৃষককে মারে না, ক্ষেতে কাঁকরোল ধরে কৃষক লাভবান হয়। অন্যান্য সবজি ফসল যেমন শসা, ঝিঙ্গা, বরবটি, শিম চাষ করলে সবজিতে পঁচন ধরে কৃষকরা ক্ষতির ঝুঁকিতে থাকে।
কৃষক মুন্সি মিয়া জানান, ১০ বছর পূর্বে ধান চাষ করে এক কানি জমিতে ৮/১০ হাজার টাকা আয় আসত। বর্তমানে প্রতি মৌসুমে ২০ গুণ টাকা ঘরে আসে। এক কানি জমিতে কাঁকরোল চাষ করতে শ্রমিক, সার, খুঁটি, বাঁশ ব্যবহারে খরচ পড়ে ৩০ হাজার টাকা কিন্তু আয় হয় প্রায় ২ লক্ষ টাকা। অগ্রহায়ণ মাসে উত্তোলন করা কাঁকরোলগুলো প্রতি কেজি ১১০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে ১০-১২ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। ১ম পর্যায়ে ৩ মাসেই ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার কাঁকরোল বিক্রি করা হয়েছে। প্রতিবছর ৩ থেকে প্রায় ৪ লক্ষ টাকার কাঁকরোল বিক্রি হয়ে থাকে। কোকদ-ী মৌজাটি কৃষকদের জন্য কাঁকরোল নির্ভর একটি গ্রামে পরিণত হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, কালীপুর ইউনিয়নের কোকদ-ী কাঁকরোল চাষে ভরপুর। এ গ্রামের কৃষক নুর হোসেন (৬৩) জানান, এই এলাকাটি কৃষকদের জন্য খুব পরিচিত গ্রাম। পাহাড়ি ছড়ার পানিতে কৃষকরা প্রতিমাসেই সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করেন। পাহাড়ি এলাকায় ও উঁচু জমিতে অগ্রহায়ণ মাস থেকে কাঁকরোল চাষের জন্য কৃষকরা জমিতে মাটির বেড তৈরি করতে হয়। অন্যান্য সবজি ফসল একমাসেই তুলে নিতে হয়। কিন্তু কাঁকরোল চার মাসই ফলন ধরে কৃষকদের লাভবান করে থাকে।
প্রতিদিন ভোর সকাল থেকে কৃষকরা শিলকূপ টাইম বাজার, পুইছড়ি প্রেম বাজার, জলদি মিয়ার বাজার, বৈলছড়ি বাজার, রামদাস হাট, সাধনপুর, সাহেবের হাটে ও চাম্বল নতুন বাজারে কাঁকরোল বিক্রি করে থাকেন। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছ থেকে কাঁকরোল সংগ্রহ করে দূর-দূরান্তে নিয়ে যায়। প্রথম পর্যায়ে প্রতি কেজি কাঁকরোল ১শ’ টাকা দামে বিক্রয় হয়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি ১২-১৫ টাকা দামে মণ হিসেবে কাঁকরোল বিক্রি হচ্ছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বাঁশখালীর উপজেলার কালীপুর, বৈলছড়ি, শীলকূপ, সাধনপুর, জলদি, চাম্বল, পুঁইছড়ি এলাকায় ১৮শ’ থেকে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়। কাঁকরোল চাষ হয় ১৪শ’ হেক্টর জমিতে।
বাঁশখালী উপজেলার সদ্য বদলি হওয়া কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, বাঁশখালীর কাঁকরোলের মান খুবই ভালো। বাঁশখালীর কাঁকরোলের রং সুন্দর ও মান ভালো হওয়াতে চাহিদাও প্রচুর। বাঁশখালীর সদ্য যোগদানকৃত কৃষি কর্মকর্তা আবু ছালেক জানান, কৃষকরা সবজি চাষে আগ্রহী বেশি। হাটবাজারে প্রচুর পরিমাণে সবজি পাওয়া যাচ্ছে। তবে বাঁশখালীর কাঁকরোলের তুলনাই হয় না।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট