চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

চট্টগ্রাম বিকেএসপি: দু’চোখে রঙিন স্বপ্নের ঝিলিক

গতকাল চট্টগ্রাম বিভাগের ১৬০ প্রশিক্ষণার্থী অংশ নেন

চট্টগ্রাম বিকেএসপি: দু’চোখে রঙিন স্বপ্নের ঝিলিক

মিটু বিভাস

৬ ডিসেম্বর, ২০২০ | ৫:৩৭ অপরাহ্ণ

কুয়াশা ভেদ করে ভোরের সূর্যের আলো উঁকি দেয়নি তখনও। এর মধ্যে সাগরপাড়ে সাগরিকায় শুরু কোলাহল। ভোর রাত থেকে দূর-দুরান্তর থেকে আসতে শুরু করে ভবিষ্যতের নারী এথলেটরা। ধীরে ধীরে উৎসবের আবহে পরিণত হয় পুরো প্রাঙ্গণ।

নগরীর বিকেএসপিতে গতকাল সকালে নারী প্রশিক্ষণার্থীদের বাছাইয়ে অংশ নেয়া ভবিষ্যত নারী এথলেট ও তাদের সাথে আসা অভিভাবকদের পদচারণায় মুখরিত ছিল পুরো এলাকা। প্রমিলা প্রশিক্ষণার্থীদের উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সারাদেশ হতে নির্বাচিত ২০০ জন ক্রীড়া সম্ভাবনাময় প্রমিলা খেলোয়াড়দের ২ বছর মেয়াদী বিজ্ঞানভিত্তিক আধুনিক প্রশিক্ষণ প্রদানের সুযোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)।

এর অংশ হিসেবে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে ক্রিকেট, ফুটবল, হকি ও আর্চারিতে নারী এথলেটদের বাছাই কার্যক্রম। দেশের ৮টি বিভাগের মধ্যে গতকাল প্রথম দিন ছিল চট্টগ্রাম বিভাগের বাছাই পরীক্ষা। ভোররাত থেকে চট্টগ্রাম বিভাগের চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, ফেনী, নোয়াখালী, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটিসহ বিভিন্ন জেলা থেকে এথলেটরা আসতে শুরু করে।

সকাল নয়টার আগেই আগত এথলেট ও তাদের অভিভাবকে সাগরিকা জহুর আহমেদ চৌধুরী বিভাগীয় স্টেডিয়ামের উত্তর পাশে অবস্থিত বিকেএসপির প্রধান ফটকের বাইরে পুরো রাস্তা পরিপূর্ণ হয়ে যায়। কেউ এসেছেন একাডেমির কোচ ও সতীর্থদের সাথে, কেউবা পরিবারের সাথে। রাঙামাটির দুর্গম জুরাছড়ি উপজেলা থেকে এসেছেন ক্ষুদে নারী এথলেট কৃষ্ণা চাকমা।

অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া ক্ষুদে এথলেটের দু’চোখে ঝিলিক দিচ্ছিল রঙিন স্বপ্ন। কৃষক পিতা ও গৃহিনী মায়ের এ সন্তান ক্রিকেট খেলে মাতাতে চায় পুরো দেশ। জুরাছড়ির দুর্গম এলাকায় বসবাস করলেও গত দুই বছর ধরে প্রতিদিন উপজেলায় ক্রিকেট একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেয়।

দৈনিক পূর্বকোণকে এ ক্ষুদে এথলেট বলেছে, বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন আমাদের। উপজেলা ক্রিকেট একাডেমি থেকে আমরা ১৩ জন সতীর্থ একসাথে এসেছি এ বাছাইয়ে অংশ নিতে’। ফেনী থেকে আসা ক্ষুদে এথলেট ওয়াফা বিনতে আমিন বলেন, ‘বিকেএসপিতে প্রশিক্ষণ নেয়ার এ সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই না। তাই বাবাকে সাথে নিয়ে চলে এসেছি’। ফেনী সদরে রবিন ক্রিকেট একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেয় এ ক্ষুদে ক্রিকেটার। হকি বাছাইয়ে চট্টগ্রাম হকি কেন্দ্রে ১৩ এথলেটকে দেখা গেল একসাথে। ফুটবলে সুদুর ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে এসেছে একঝাঁক কিশোরী। ক্যাপ্টেন তাজুল ইসলাম ফুটবল একাডেমি থেকে আসা এ এথলেটদের লক্ষ্য ক্রীড়ায় সুন্দর আগামী গড়ার। বিকেএসপিতে ভর্তি হয়ে একজন পরিপূর্ণ এথলেট হতে চায় তারা।

সঙ্গে আসা একাডেমির কোচ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ২০১৫ সাল থেকে মেয়েদের কোচিং করাচ্ছি। আমি চাই, আমার এ শিষ্যরা বিকেএসপিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে একজন দক্ষ ফুটবলার হিসেবে গড়ে উঠবে এবং দেশের সুনাম উজ্জ্বল করবে।

চারটি বিভাগের বাছাইয়ে গতকাল চট্টগ্রামের ১৬০ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশ নেন। এরমধ্যে ক্রিকেটে ৬৫ জন, ফুটবলে ৬১ জন, হকিতে ১৮ এবং আর্চারিতে ১৬ জন্য এথলেট বাছাই পরীক্ষায় অংশ নেন। সংখ্যাটা কম মনে হতেও পারে। তবে, চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হল নারীদের বিশেষ প্রশিক্ষণের এ বাছাই।

এছাড়া চট্টগ্রামে নারী এথলেটদের প্রশিক্ষণের তেমন কোন একাডেমি নেই। আর তাই চট্টগ্রামের জন্য এটা বিশেষ পাওনা মনে করেন, বিকেএসপি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আবু তারেক।

তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে নারী প্রশিক্ষণের এ বাছাই কার্যক্রম প্রথম। এর আগে বিকেএসপিএতে সাধারণ ভর্তি কার্যক্রমেও এমন আশারনুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি।

তিনি জানান, চারটি বিভাগের মধ্যে ক্রিকেটে চট্টগ্রামের মেয়েরা দারুণ দক্ষতা দেখিয়েছে।’ চট্টগ্রামসহ দেশের আটটি বিভাগের বাছাই কার্যক্রম শেষে উত্তীর্ণ এথলেটদের নাম প্রকাশ করা হবে। করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই গতকাল অনুষ্ঠিত হয়েছে নারী প্রশিক্ষণার্থীদের এ বাছাই কার্যক্রম।

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট