চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

প্রিপেইড মিটার: টাকা কামানোর ‘মেশিন’

প্রিপেইড মিটার: টাকা কামানোর ‘মেশিন’

তাসনীম হাসান 

৫ ডিসেম্বর, ২০২০ | ৪:৩১ অপরাহ্ণ

দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ না আসায় হালিশহরের ঈদগাঁ এলাকার বাসিন্দা নুর নবী বাড়ির নিচ তলায় প্রিপেইড মিটার যেখানে স্থাপন করা হয়েছে সেখানে যান। গিয়ে দেখেন অন্যান্য মিটারগুলো সচল থাকলেও তাদেরটি বন্ধ। পরে বাড়ির তত্ত্বাবধায়ককে জানালে তিনি যোগাযোগ করেন বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-রামপুর দপ্তরে। সেখান থেকে বলা হয় ব্যাটারির চার্জ শেষ হওয়ায় মিটার বন্ধ হয়ে গেছে। পরদিন দুপুর ১২টার দিকে এক কর্মী এসে দেখে যান মিটারটি। প্রায় ২০ ঘণ্টা পর সেদিন বিকেলে অবশেষে বিদ্যুৎ আসে। তবে এ জন্য ওই কর্মীকে দিতে হয়েছে ৯০০ টাকা।

নুর নবী পূর্বকোণকে বলেন, ‘আরও বেশি টাকা দাবি করা হয়েছিল। অনেক দফারফার পর ৯০০ টাকা নেন। কিন্তু ব্যাটারির চার্জ শেষ হলে তো নতুন ব্যাটারি বিদ্যুৎ অফিসেরই দেওয়া উচিত। কারণ আমরা প্রতি মাসে মিটার ভাড়া, ডিমান্ড চার্জ, সার্ভিস চার্জ ও ভ্যাটসহ নানা খাতে টাকা দিচ্ছি’।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রামের অধীনে ২১টি পৃথক দপ্তর রয়েছে। এরমধ্যে ১২টিই পড়েছে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায়। প্রতিদিন এসব দপ্তরে অন্তত ২০ থেকে ৩০ জন গ্রাহকের মিটারের ব্যাটারি চার্জ শেষ হওয়ার বিষয়ে অভিযোগ আসছে। পরে দপ্তর থেকে দাবি করা টাকা দিয়ে গ্রাহকেরা নতুন ব্যাটারি সংযুক্ত করে নেন। গ্রাহক পরিচয়ে একটি দপ্তরে ফোন করে টাকা নেওয়ার বিষয়টির প্রমাণও মেলে। অথচ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী মো. শামছুল আলম বলেছেন, ‘মিটারের ব্যাটারি নষ্ট হলে গ্রাহককে কোনো টাকা দিতে হয় না। নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁরা নিজ উদ্যোগে নতুন ব্যাটারি যুক্ত করে দেন। তবে এ জন্য অফিসে গিয়ে আবেদন করতে হবে’।

কিন্তু আবেদনের বিষয়টি অনেক গ্রাহকেরই অজানা। আবার যারা জানেন তাঁরাও ব্যস্ততা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়ার শঙ্কায় আবেদনে আগ্রহী হন না। কারণ শুক্রবারে ব্যাটারি নষ্ট হলে অফিসে গিয়ে আবেদন করার সুযোগ সবসময় থাকে না। এ জন্য অপেক্ষা করতে হয় রোববার পর্যন্ত। এর আগে করতে পারলেও নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তাই ঝামেলা এড়াতে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে তারা বিষয়টির সমাধান করেন।

অভিযোগ রয়েছে অফিসে গিয়ে আবেদন করতে গেলেও সর্বনিম্ন ৩০০-৪০০ টাকা দাবি করা হয়। কয়েকদিন আগে বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ, রামপুর কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আবদুল কাদের গনির সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হলে তিনিও আবেদন করে নতুন ব্যাটারি সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে ৩০০ টাকা নেওয়া হয় বলে জানান।

গতকাল গ্রাহক পরিচয়ে এই প্রতিবেদক বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ, স্টেডিয়াম দপ্তরের অভিযোগ কেন্দ্রে ফোন করেও একই চিত্র পান। সেখান থেকে বলা হয় শুক্রবারে অফিসে গিয়ে আবেদন করার সুযোগ নেই। যেতে হবে রোববার। তবে অফিসে গিয়ে আবেদন করলেও ৩০০-৪০০ টাকা নেওয়া হবে। আর এখন করতে গেলে সেখানেরই কিছু কর্মী এসে ঠিক করে দেবেন। তবে এ জন্য ১ হাজারের ওপর টাকা নেবেন তারা।

কয়েকমাস আগে মিটারের ব্যাটারির চার্জ নষ্ট হওয়ার ভোগান্তিতে পড়েন আসকারদিঘির পশ্চিম পাড়ের আহমদ রওশন নিবাসের বাসিন্দা জমির উদ্দিন। পরে তিনি স্টেডিয়াম দপ্তরে যোগাযোগ করলে সেখান থেকে বলা হয় ১ হাজার ২০০ টাকা লাগবে। অনেক অনুরোধের পর ১ হাজার টাকা দিলে, একজন এসে নতুন ব্যাটারি সংযুক্ত করে দেন।

জমির উদ্দিন বলেন, ‘প্রিপেইড মিটার আসার পর ভেবেছিলাম ভোগান্তি কমবে, অর্থও সাশ্রয় হবে। কিন্তু এখন দেখছি প্রতিমাসে নানা খাতে প্রায় ১০০টাকা কেটে ফেলা হচ্ছে। আবার মিটারের ব্যাটারি নষ্ট হলেও টাকা আদায় করা হচ্ছে। এখন তো মনে হচ্ছে প্রিপেইড মিটার বিদ্যুৎ অফিসের টাকা কামানোর মেশিন’।

গ্রাহকদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী মো. শামছুল আলম পূর্বকোণকে বলেন, ‘কিছু দালাল এই কাজের সঙ্গে জড়িত। তাই যেসব গ্রাহক এমন ভোগান্তিতে পড়েন তারা যেন আমার দপ্তরে আসেন’।

 

 

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট