চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ফারোয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা গুলিবিদ্ধ হন, প্রাণ হারায় কয়েকজন পাকসেনা

বিশ্বজিৎ রাহা, ফটিকছড়ি

৩ ডিসেম্বর, ২০২০ | ১২:৫৭ অপরাহ্ণ

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস শুক্কুর। সময়টা একাত্তর সালের এপ্রিলের শেষের দিকে। তখন তিনি এশিয়াটিক কটন মিলে চাকরি করতেন। ১৯/২০ বছরের মত বয়স।

২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। যুদ্ধে যাবার জন্য তার মনটা আনছান করছিল। একদিন বাড়িতে এসে পাড়ার সমবয়সী যুবক আবুল কালাম পাখী, নুরুল ইসলাম, ওবায়দুল হক সওদাগরের ছেলে জাগির, মল্লার বাড়ির জাগিরের সাথে কথা বলে ভারতের উদ্দেশ্যে বাড়ি ছেড়ে রওনা হন আব্দুস শুক্কুর। তাদের গাইড হিসেবে সার্বিক সহযোগিতা করে  প্রথমে কাঞ্চননগর ইউপির ছমুরহাটে নিয়ে যান আরেক আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম (ট্রাভেল কালাম)। সেখানে একরাত থাকার পর এক উপজাতীয়  গাইডের সাথে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হন। একদিন একরাত হাঁটার পর তারা ভারতের সাব্রুম হয়ে হরিণা গিয়ে পৌঁছেন। সেখানে ১৫/১৬ দিন থাকার পর শেখ ফজলুল হক মনিও বিএলএফ কমান্ডার আনোয়ারুল আজিমের তত্ত্বাবধানে তাদের প্রায় ৭০ জনকে ট্রাকে করে পাঠানো হয় আসামের হাফলং ট্রেনিং সেন্টারে। সেখানে মাসব্যাপী রাইফেল, এসএলআর, এলএমজি, স্টেনগান ইত্যাদি অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অতঃপর সেখান থেকে আব্দুস শুক্কুর সহ ১৫/২০ জনকে বাছাই করে আরো ১২ দিনের গেরিলা ট্রেনিং দেওয়া হয়।

ট্রেনিং শেষে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী (প্রয়াত সাবেক সিটি মেয়র) এর নেতৃত্বে ৭০/৭৫ জনের একটি দলকে বাংলাদেশ সীমান্তের  কাছে দেমাকগিরি পাহাড়ের দিকে পাঠানো হয়। মুক্তিযোদ্ধা দলটি দেমাকগিরি পাহাড়, ঠেকার পাহাড় পার হয়ে রাঙামাটি সীমান্ত দিয়ে এপারে এসে কাপ্তাই থেকে প্রায় ৩০ মাইল উত্তরে একটা ছোট নদী পার হয়ে ফারোয়া নামকস্থানে বিশ্রাম নেবেন, এমন সময় পাক সেনারা তাদের আক্রমণ করে বসে। তখন মুক্তিযোদ্ধারা দুই তিন দিনের অভুক্ত ছিলেন বলে জানান আব্দুস শুক্কুর।  পাক সেনাদের আক্রমণের মুখে মুক্তিযোদ্ধারা অনেকটা অপ্রস্তুত অবস্থায়ই মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন। সেই যুদ্ধে ফটিকছড়ির এম.জহুরুল, হক, (ফটিকছড়ি উপজেলা আ. লীগের সভাপতি ও পরে ঘাতকের হাতে নিহত),বর্মা তাহের, বোয়ালখালীর আবুসহ আরো কয়েকজন ছিলেন। বেলা ১১টা নাগাদ উভয় পক্ষে গোলাগুলি শুরু হয়ে বিকেল চারটা পর্যন্ত উভয় পক্ষে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। এক পর্যায়ে খবর পেয়ে ভারতীয় সেনা বাহিনীর মাউন্টেন ডিভিশনের একদল সৈন্য এসে মুক্তি যোদ্ধাদের সাথে যুক্ত হলে মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তি সাহস বহুগুণ বেড়ে যায়। কিন্তু তার আগে অনেক মুক্তিযোদ্ধা মুল দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধা আর  ভারতীয় সেনা বাহিনীর যৌথ আক্রমনের মুখে এক পর্যায়ে পাক সেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। এ যুদ্ধে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। (তাদের নাম এতোবছর পর সঠিকভাবে তিনি মনে করতে পারেন না)।

পক্ষান্তরে বেশ কয়েকজন পাক সেনা হতাহত হয়  এবং পাক সেনাদের বেশ কিছু অস্ত্রশস্ত্র গোলা বারুদ মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। সেখানে সেদিন রাত এবং পরদিন সকাল বেলা একে অপরকে খোজাখুঁজি করে নিয়ে পরদিন তারা কাপ্তাইয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। দলনেতা মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল আগের দিন রাতেই কাপ্তাইয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। একদিন পর তারা সবাই কাপ্তাই এসে মিলিত হন। এর কয়েকদিন পর ঢাকায় পাক সেনাদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়ে যায়। বর্তমানে জীবন সায়াহ্নে এসে  ক্ষেত কৃষি করে জীবন কাটে বীর সেনানী আব্দুস শুক্কুরের। এ ছাড়া তিনি ফটিকছড়ি পৌরসভা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডারের দায়িত্বও পালন করছেন। বর্তমান সরকার সম্পর্কে তিনি বলেন, জীবনভর এ দলের হয়ে কাজ করেছি। যতদিন বেঁচে থাকি ততদিন এ দলেরই থাকবো। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য সকলের নিকট দোয়াও কামনা করেন।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট