চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিদ্যুৎ যাচ্ছে সেই বরফকল-হিমাগারে!

রাজাখালী খালের তীর হ খুঁটি ও তার টানা হয়েছে হ বৈধ হলে সংযোগ দেওয়া হবে, অবৈধ হলে দেওয়া হবে না: পিডিবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৩ জুন, ২০১৯ | ২:০৩ পূর্বাহ্ণ

কর্ণফুলী নদী ও রাজাখালী খালের মোহনায় সেই আলোচিত বরফকল ও হিমাগারে এবার বিদ্যুৎ সংযোগের প্রক্রিয়া চলছে। ইতিমধ্যেই চাক্তাই মেরিনার্স ড্রাইভ সড়ক থেকে বৈদ্যুতিক খুঁটি পুঁতে তার টানা হয়েছে। এখন শুধু সংযোগ দেওয়ার অপেক্ষা। বরফকল ও হিমাগারের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ দাবি করেছে, বরফকল ও হিমাগার অবৈধ জায়গায় হলে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে না।
কর্ণফুলী নদীর চাক্তাই-রাজাখালী খালের তীরে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও বিধি-বিধানের তোয়াক্কা না করে মৎস্য অবতরণকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। সরকারি দলের শীর্ষ এক নেতার প্রত্যক্ষ ইন্ধনে ধরাকে সরা জ্ঞান করে এই মাছ বাজার গড়ে ওঠেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ কর্ণফুলী নদীর তীরে স্থাপনা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে চাক্তাই ও রাজাখালী খালের তীরেও স্থাপনা নির্মাণের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এছাড়াও নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর পরিবেশ অধিদপ্তদর, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও (সিডিএ) নোটিশ দিয়েছে। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও সরকারি বিধি-বিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে বরফকল ও হিমাগার নির্মাণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সেই হিমাগার ও বরফকলে এখন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার টানানো হয়েছে। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর সংযোগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য অবতরণকেন্দ্রের নেতারা।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পাথরঘাটা বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল হোসেন গতকাল পূর্বকোণকে বলেন, ‘বরফকল ও হিমাগারের আগ পর্যন্ত বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন ও তার টানানো হয়েছে। বরফকল পর্যন্ত যায়নি। তবে এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি। কাগজপত্র দেখে জায়গা বৈধ হলে সংযোগ দেওয়া হবে। অবৈধ জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে না।’
মাছ বাজার নির্মাণের জন্য জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিকে ভূমি ইজারা দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ।
গত ২ ফেব্রুয়ারি বন্দরের ডেপুটি ম্যানেজার (এস্টেট) জিল্লুর রহমান বরফকল ও হিমাগার নির্মাণ কাজ বন্ধ করার জন্য নোটিশ দিয়েছেন। নোটিশে বলা হয়েছে, চবক’র সংরক্ষিত জায়গায় অবৈধভাবে হিমাগার নির্মাণ করা হচ্ছে। ৭ দিনের মধ্যে অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ ও নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। ইজারাদাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের নোটিশ অমান্য করে বরফকল ও হিমাগার নির্মাণ করেছে।
তবে বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অমান্য করে নির্মাণ কাজ চলে আসলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বন্দর। শুধু নোটিশ দিয়ে দায় সেরেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। অথচ ইজারা শর্তে উল্লেখ রয়েছে যে, ইজারা গ্রহীতা ইজারা শর্ত ভঙ্গ করলে ইজারা বাতিল বলে গণ্য করা হবে।
জানা যায়, রমজানের ও ঈদের ব্যস্ততার মধ্যে কৌশলে বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার টানা হয়েছে। বিদ্যুতের বৈধ সংযোগ পেতে যেখানে মানুষে গলদঘর্ম অবস্থা সেখানে অবৈধ স্থানে কিভাবে বিদ্যুতের খুঁটি ও তার টাঙানো হয়েছে সেই প্রশ্ন এখন এলাকাবাসীর।
গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কর্ণফুলী নদীর রাজাখালী খালের তীরে এই বরফকল ও হিমাগার নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু দৈনিক পূর্বকোণে এই প্রসঙ্গে সংবাদ প্রকাশের পর জেলা প্রশাসন ও বন্দর ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। একাধিকবার কাজ বন্ধ থাকার পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ডামাঢোলের মধ্যে কৌশলে তা কাজ শেষ করা হয়। এমনকি নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর বন্দর কর্তৃপক্ষ কাজ বন্ধ করে নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে নেওয়ার জন্য নোটিশও দিয়েছিল। বন্দর কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন বার বার অভিযান চালিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিলে কৌশলে বন্দরের কাছে নতুন করে আবেদন করে ইজারা গ্রহীতা সংস্থা।
এলাকাবাসী জানায়, নদীর তীর দখল করে গড়ে ওঠা বাস্তুহারা, ভেড়া মার্কেট বস্তিতে শত শত বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে। মিটার ও মিটারবিহীন অবস্থায় বস্তিঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে মিটারবিহীন ও মিটার সর্বস্ব সংযোগ দেওয়া বিদ্যুৎ বিল কোথায় যাচ্ছে সেই প্রশ্ন এলাকাবাসীর। শুধু অবৈধ বস্তি নয়, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের অবৈধ স্থাপনাতেও বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। যা এখন সরকারের জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ বসবাসকারী উচ্ছেদে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছিল জেলা প্রশাসন। এজন্য সড়ক অবরোধও করা হয়েছিল। এছাড়াও এসব সংযোগ নিয়ে নানা গোঁজামিল পেয়েছিলেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ৯০ দিনের মধ্যে দুই হাজার ১৮৭টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের রায় দেন আদালত। উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত ৪ ফেব্রুয়ারি কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করেছিল জেলা প্রশাসন। প্রথম ধাপে ৫ দিনের অভিযানে ২৩০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করে ১০ একর জায়গা উদ্ধার করা হয়েছিল। প্রথম ধাপের পর থেকে অবৈধ উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট