চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

শুধু সদস্যদের কাছ থেকে নেয়া হবে বারভিডা লেভি

সারোয়ার আহমেদ 

২০ নভেম্বর, ২০২০ | ১২:৫৬ অপরাহ্ণ

সদস্যদের আপত্তির মুখে শুধুমাত্র সদস্যদের কাছ থেকেই ‘লেভি’ আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স এন্ড ডিলারস এসোসিয়েশন (বারভিডা)। ইতোপূর্বে বারভিডা’র এই লেভি দেশের দুই বন্দর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রতিটি গাড়ি থেকে আদায়ের সিদ্ধান্ত ছিল। সে মোতাবেক মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি চুক্তিও হয়েছিল। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকেও লেভি আদায় করে দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। যদিও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ তাতে সায় দেয়নি।  এদিকে, ‘বারভিডা লেভি’ আদায়ের সিদ্ধান্তের বিরোধিতাকারী এক সদস্যের সদস্যপদ বাতিল করেছে সংগঠনটি। এ নিয়ে আরও অনেক সদস্যের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।

জানা যায়, বারভিডা সদস্য মেসার্স কে কে কর্পোরেশনের (সদস্য নং-২৯১) মালিক দীনুল ইসলাম গত ১৭ নভেম্বর ‘লেভি’র বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী বরাবর চিঠি দেন। এ বিষয়ে তিনি পূর্বকোণকে বলেন, প্রতি বছর আমি সংগঠনের সদস্য পদের জন্য নির্ধারিত চাঁদা দিচ্ছি। আর গাড়ি আমদানিতে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সব ফি দিচ্ছি। তাহলে কেন গাড়িপ্রতি অতিরিক্ত এক হাজার টাকা চাঁদা দিতে হবে?

দুই বন্দরকে বারভিডার পাঠানো প্রস্তাব থেকে জানা যায়, বন্দর দিয়ে দেশে আমদানি করা প্রতিটি গাড়ি সরকারি সকল রাজস্ব ও শুল্ক পরিশোধ করার পর অতিরিক্ত এক হাজার টাকা ‘বারভিডা শুল্ক’ আদায় করবে সংশ্লিষ্ট বন্দর কর্তৃপক্ষ। সেই এক হাজার টাকা থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষ সার্ভিস চার্জ রেখে বাকি টাকা বারভিডার ব্যাংক একাউন্টে জমা দিবে।

এমন প্রস্তাবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এখনো সম্মতি না দিলেও মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ রাজি হয়ে যায়। মংলা বন্দরে সেই চার্জ আদায়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে গত ৫ নভেম্বর। তবে উদ্বোধনের পরেই শুরু হয় বিভিন্ন গাড়ি আমদানিকারক ও গাড়ি ডিলারের আপত্তি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বারভিডার একজন সিনিয়র সদস্য জানান, আমরা প্রতি বছর বারভিডার সদস্য পদ সচল রাখতে প্রয়োজনীয় অর্থ জমা দেই। আর গাড়ি আমদানির সরকারি সব ধরনের চার্জ পরিশোধ করার পরেই গাড়ি বন্দর থেকে বের হতে পারে। তাহলে ওই অতিরিক্ত এক হাজার টাকা শুল্ক কেন দিতে হবে! বারভিডা কোন বিশেষ কাজে বা কোন ঘোষণা দিয়ে সদস্যদের থেকে সম্মতি নিয়ে কোন নির্দিষ্ট সময়ে বা কোন নির্দিষ্ট অনুষ্ঠান বা কাজে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। কিন্তু প্রতিটি গাড়ির জন্য এক হাজার টাকা চার্জ নির্ধারণ করা এবং সরকারি সংস্থা দিয়ে সেই অর্থ আদায় করা কোনো আইনে নেই।

আইনি নোটিশ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আমান উল্লাহ পূর্বকোণকে বলেন, কোম্পানি এক্ট, ১৯৯৪ এবং ট্রেড অর্গানাইজেশন অর্ডিনেন্স ১৯৬১ অনুযায়ী কোন সংগঠন তাদের সদস্যদের কাছ থেকে আমদানি পণ্যের উপর ‘লেভি’ আদায় করতে পারে না। এছাড়া পোর্ট এক্ট ১৯০৮ এবং মংলা পোর্ট অর্ডিনেন্স ১৯৭৬ অনুযায়ী সরকারি সংস্থা বেসরকারি সংস্থার পক্ষ হয়ে আলাদা কোন শুল্ক আদায় করতে পারে না। এছাড়া বার্ষিক সাধারণ সভা কিংবা ইসি মিটিং এর সিদ্ধান্ত কতগুলো চুক্তি। আইন অনুযায়ী অবৈধ চুক্তি কোন চুক্তি হয়। তাই ‘বারভিডা লেভি’ নামে অতিরিক্ত এক হাজার টাকা আদায় করা সম্পূর্ণ বেআইনি। আর বারভিডাকে এই ধরনের সুবিধা দেয়া মানে বৈষম্য সৃষ্টি করা। কারণ বন্দরের অন্যান্য স্টেকহোল্ডারও এমন চার্জ আদায়ের আবদার করে বসতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বারভিডার সভাপতি আবদুল হক পূর্বকোণকে বলেন, আমাদের বার্ষিক সাধারণ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ‘বারভিডা লেভি’ আদায়ের সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী শুধু আমাদের সদস্যদের কাছ থেকে এই লেভি আদায় করা হচ্ছে। আর আমাদের সহ-সভাপতি আনোয়ার সাহাদাত সংগঠনের নিয়ম না মানায় নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্তে ওনার সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে। আমরা যে লেভি আদায় করছি সেটি নিয়ম মেনেই করছি।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট