চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

জীবনযুদ্ধে সফল রাঙ্গুনিয়ার ৫ নারীর গল্প

কে. জি. ইসলাম, রাঙ্গুনিয়া

১৯ নভেম্বর, ২০২০ | ৩:০৯ অপরাহ্ণ

উপজেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের বিবেচনায় এ বছর রাঙ্গুনিয়ার ৫ সফল নারী হলেন পারভিন আক্তার, পারমিতা বড়ুয়া, দিলু আরা বেগম, শাহাজান বেগম ও শামিমা আক্তার।

অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জনকারী পারভিন আকতার: পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড দক্ষিণ ইছামতি গ্রামের নুরুল ইসলামের মেয়ে পারভিন আক্তারের জন্ম ১৯৭৯ সালে রাঙ্গুনিয়ার গোয়াচপাড়ায়। ৬ বছর বয়সে পোলিওতে আক্রান্ত হয়ে তার পা দুটি বেঁকে যায়। বিয়ের ৪ বছর পর স্বামী ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। স্বামী মারা যাওয়ার পর শ্বশুর-শ্বাশুড়ি ও সন্তানদের নিয়ে অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েন পারভিন। সবার আহার জুটাতে তিনি একটি এনজিও সংস্থা থেকে সেলাই কাজ ও হাতের কাজ শেখেন। এরপর কাঁথা বুনন, বেতের মোড়া বানানোসহ সেলাই কাজ করে সংসারের অভাব অনটন দূর করে ধীরে ধীরে সচ্ছলতা আনেন সংসারে।

শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী পারমিতা বড়ুয়া: পৌরসভার দক্ষিণ ঘাটচেক ৪ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার রনজিৎ কুমার বড়ুয়ার স্ত্রী পারমিতা বড়ুয়ার জন্ম ১৯৬৭ সালের ৩১ অক্টোবর উপজেলার ঘাটচেক গ্রামে। এইচএসসি পাস করার পর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন চবির প্রাচ্যভাষা বিভাগের অধ্যাপক ড. রনজিৎ কুমার বড়ুয়ার সাথে। অনেক বাধা বিপত্তি পেরিয়ে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে রাঙ্গুনিয়া হাসিনা জামাল ডিগ্রি কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পেশাজীবনে সুনাম অর্জন করায় বর্তমানে তিনি সেই কলেজের অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছেন।

সফল জননী দিলু আরা বেগম: উপজেলার শিলক ইউনিয়নের রফিক আহমদের স্ত্রী দিলু আরা বেগমের সাথে ১৯৮০ সালে বিয়ে হয় রফিক আহমদের। তাদের তিন কন্যা সন্তানকে গড়ে তোলেন যোগ্য নারী হিসেবে। বর্তমানে তার বড় মেয়ে রাশেদা বেগম রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স ও বিএড করে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ অফিসে উপজেলা সমন্বয়কারী ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। মেজ মেয়ে রাজিয়া সুলতানা প্রাণিবিদ্যায় অনার্স, মাস্টার্স করে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার আধুরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। আর ছোট মেয়ে রেহেনা আকতার ইংরেজিতে অনার্স, মাস্টার্স করে উপজেলার সরফভাটা ছৈয়দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।

নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করা শাহাজান বেগম: উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের ছৈয়দুরখীল এলাকার সরুফ আলীর মেয়ে শাহাজান বেগম মাত্র ১৪ বছর বয়সে বাবা হারান। ২০ বছর বয়সে শাহাজান বেগমের বিয়ে হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য! বিয়ের পর হতে স্বামীর সংসারে যৌতুকের জন্য মারধর ও নির্যাতনের শিকার হন। বিয়ের ৩ বছর পর তাদের ১ মেয়ে (৩ বছর) ও ১ ছেলে (১ মাস) সন্তান রেখে স্বামী নিরুদ্দেশ। সেলাই কাজের পাশাপাশি ব্র্যাক ওয়াশ অফিসে অফিস সহায়কের কাজ নেন। বর্তমানে তার সংসারের খরচ মিটিয়ে ভাই বোনদের আত্মনির্ভরশীল করে তোলার জন্য চেষ্টা করছেন।

সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখা শামীমা আকতার: উপজেলার চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আদর্শগ্রামের ছমদ উদ্দিন শাহ বাড়ির মৃত নুর মোহাম্মদের স্ত্রী শামীমা আক্তার চন্দ্রঘোনা কদমতলী ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ড হতে মহিলা সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এলাকার মহিলাদের পারিবারিক বিবাদ মিটানোসহ নারী নির্যাতন, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি করেছেন। নিজে উদ্যোগী হয়ে স্যানিটেশন সচেতনতা সৃষ্টিসহ অনেকগুলো বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, বহুবিবাহ রোধ ও যৌতুকসহ বিভিন্ন সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছেন।

উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা সোনিয়া সফি জানান, জয়িতারা বাংলাদেশের বাতিঘর। জয়িতাদের দেখে অন্য নারীরা অনুপ্রাণিত হলে ঘরে ঘরে জয়িতা সৃষ্টি হবে। আর তা হলেই বাংলাদেশ তার গন্তব্যে পৌঁছে যাবে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট