চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

প্রতিবন্ধী শানুর দিন বদলের গল্পগাথা

প্রতিবন্ধী শানুর দিন বদলের গল্পগাথা

মরিয়ম জাহান মুন্নী

১৬ নভেম্বর, ২০২০ | ৭:৪৯ অপরাহ্ণ

‘প্রতিদিন সকালে চকবাজারের বিভিন্ন স্থান ঘুরে শিশুদের খেলনা ও খাবার বিক্রি করি। আমার দুই পা ও এক হাত দিয়ে কিছু করতে পারি না। অন্য হাত দিয়ে গাড়ির প্যাডেল চালাই। এই এক হাত দিয়েই সব কাজ করি। আগে কাপাসগোলার স্কুলগুলোর সামনে বিক্রি করতাম। এখন স্কুল বন্ধ হওয়ায় একটু কষ্ট করতে হচ্ছে। এদিক-ওদিক ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছি। এই আয় দিয়ে চলে তিনজনের সংসার।’

কথাগুলো বলছিলেন শারীরিক প্রতিবন্ধী শানু বিশ্বাস। ইচ্ছাশক্তির কারণে শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও পরিবারের বোঝা হয়ে ওঠেননি শানু। বরং মায়ের সাথে পরিবারের হাল ধরেছেন তিনি। দিয়েছেন বড় বোনের বিয়ে ও ছোট বোনকে করাচ্ছেন পড়ালেখা। একে তো শারীরিক প্রতিবন্ধী, তার উপর অল্প বয়সেই বাবাকে হারান শানু। তাই জীবন বড্ড কঠিন হয়ে উঠে শানু ও তার পরিবারের জন্য।

দুইবোন ও মা-সহ চারজনের সংসার শানুর। বাবা মারা যাওয়ার পরে ভাই শানুই পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। কিন্তু সে-ও শারীরিকভাবে অসুস্থ। এমন অবস্থায় প্রায় দিশেহারা শানুর মা লক্ষ্মী বিশ্বাস। উপায় না পেয়ে পোশাক কারখানায় চাকরি করেন মা। কিন্তু মায়ের একার উপার্জনে সংসার চলে না। সংসারে অভাব লেগেই থাকে। এমন অবস্থায় শানুও খুব চিন্তিত হয়ে পড়েন।

শানু বলেন, আমরা ছোট থাকতেই বাবা মারা যান। তাই মাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। এখনো করতে হচ্ছে। আবার আমার বড় বোনও বিয়ের উপযুক্ত হয়ে উঠেছেন। মায়ের চিন্তা আরো বেড়ে যাচ্ছে। আমিও শারীরিকভাবে অসুস্থ। পরিবারের জন্য কিছু করতে পারছি না। নিজের কাছে খুব খারাপ লাগতো। আবার এভাবে ঘরে বসে থাকতে খুব কষ্ট হত।

পরে ‘স্বপ্নযাত্রী ফাউন্ডেশন স্বাবলম্বী প্রজেক্ট-০৬’ তারা কিছু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে কিছু আর্থিক সহায়তা করে। আমাকেও তারা কিছু পুঁজি দেয়। আমি সেই টাকা দিয়ে হাতে চালানো এই গাড়িটি কিনি। সেখানে শিশুদের খাবার পণ্য কিনে ব্যবসা শুরু করি। বিভিন্ন স্কুলের সামনে বসতাম। পাঁচ বছর ধরে আমি এ ব্যবসা করছি। মা আর আমার আয়ের টাকায় বড় বোনকে বিয়ে দিয়েছি। ছোট বোন এখনো পড়ছে। এখন আগের চেয়ে ভালো আছি। কারো করুণার পাত্র হতে হচ্ছে না আমাকে। আমার ইচ্ছে আছে মাকে আর কাজ করতে দিব না। ছোট বোন এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। করোনার জন্য তো পরীক্ষা আর হচ্ছে না। এখন ভাবছি ছোট বোনকে স্নাতকে ভর্তি করাবো। তারপরে তাকে বিয়ে দিয়ে দিবো। মা-ছেলে দুই বেলা খেয়ে পরে চলতে পারলেই হল। আর বেশি কিছু চাই না।

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট