চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ভুল জায়গায় ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসার উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে

১৩ নভেম্বর, ২০২০ | ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ

রাজধানী ঢাকার পরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রাম। এই শহরেই ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রায় ৫ কোটি জনগোষ্ঠীর চিকিৎসার বৃহত্তম ভরসাস্থল। দেশের প্রথম মেডিকেল কলেজ হিসেবে হৃদরোগের শল্য চিকিৎসা ব্যবস্থা চমেকে শুরু হয়েছে, তা-ও এক দশককাল ধরে।
চট্টগ্রাম শহরে অন্যান্য বিশেষায়িত বিষয়ে চিকিৎসার জন্য কোন প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। সব ধরণের চিকিৎসার জন্যই রোগীদের নির্ভর করতে হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপর। এই অবস্থায় বর্তমান সরকার চট্টগ্রাম শহরে বিশেষায়িত ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার যুগান্তকারী সিদ্বান্ত গ্রহণ করেছেন। চট্টগ্রামের চিকিৎসক সমাজের নির্বাচিত প্রতিনিধি/প্রাক্তন শিক্ষার্থী, প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে এই সুসংবাদ আমাদের আনন্দের জোয়ারে ভাসিয়েছে। চট্টগ্রামবাসীর পক্ষে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি এজন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
কিন্তু এই আনন্দের ভিতরেও একটি শংকা জন্ম নিয়েছে। তা হলো, ক্যান্সার হাসপাতালের জন্য যে স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে সেটির যৌক্তিকতা নিয়ে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রোগী, রোগীর স্বজন, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থী মিলিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার লোক সমাগম হয়। কলেজ সংলগ্ন অপরিসর সড়কটি জনতার চাপ সামলাতে যে অসমর্থ হচ্ছে, সেটি ইতিমধ্যেই চট্টগ্রামবাসী উপলব্দি করতে পারছেন। ক্যান্সার হাসপাতালের জন্য প্রস্তাবিত স্থান সংলগ্ন হাসপাতালের অপরিসর সড়ক সারাদিন জনতা ও যানবাহনের চাপে স্থবির হয়ে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে একই সড়কের অপর পাশে আরেকটি ১৫ তলা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণ পুরো এলাকাকে ইট-কাঠের বস্তিতে পরিণত করবে এটা বলাই বাহুল্য।
আমরা সকলেই জানি, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীগণ শারীরিকভাবে খুবই নাজুক অবস্থায় থাকেন। এই রকম যানজট ও জনজটপূর্ণ সড়ক দিয়ে হাসপাতাল ভবনে পৌঁছানোই তাদের জন্য দায় হয়ে পড়বে।
২০০৭ সালের নভেম্বর মাসে তৎকালীন কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ ওয়াহাব চৌধুরীর সময়ে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কলেজের ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণের মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী কলেজের একাডেমিক ভবন হবে ইংরেজি ‘ট’ আকৃতির। এই মাস্টারপ্ল্যান কলেজের বর্তমান একাডেমিক ভবনের পুরাতন অংশ ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রস্তাবিত হাসপাতাল ভবন ২০০৭ সালের নভেম্বর মাসের মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী একাডেমিক ভবনের অংশে নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এটা হলে ‘ট’ আকৃতির একাডেমিক ভবন নির্মাণ সম্ভব হবে না।
এছাড়া কলেজ ভবনের ভিতরে হাসপাতাল ভবন নির্মিত হলে একাডেমিক কার্যক্রম বিঘিœত হবে। এছাড়াও যেহেতু ক্যান্সার চিকিৎসায় উচ্চমাত্রার তেজষ্ক্রিয়তা নির্গত হওয়া যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় সেহেতু উচ্চমাত্রার তেজষ্ক্রিয়তার ঝুঁকির মুখে পড়বেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। বর্তমান প্রস্তাবিত স্থানে ক্যান্সার হাসপাতাল হলে ভবিষ্যতে এই ক্যান্সার হাসপাতাল এবং মূল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সম্প্রসারণ সম্ভব হবে না।
ক্যান্সার আক্রান্তদের জন্য ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণ অত্যাবশ্যক। এই হাসপাতাল তুলনামূলক ফাঁকা জায়গায় নির্মিত হলে সবার মঙ্গল নিশ্চিত হবে। সেখানে রোগী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও সহজে জনগণ ও যানবাহনের চলাচলের সুবিধা থাকবে।
বৃহত্তর চট্টগ্রামবাসীর জন্য ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণ এক অতিপ্রয়োজনীয় সুখবর। কিন্তু হটকারী সিদ্বান্তের মাধ্যমে ভুল স্থানে এক ত্রুটিপূর্ণ ভবন নির্মাণ ক্যান্সার চিকিৎসার এই সুমহান উদ্দেশ্যকেই ব্যাহত করবে।

লেখক : প্রাক্তন শিক্ষার্থী ২০তম ব্যাচ, চমেক

অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুল হক খান
সভাপতি, চট্টগ্রাম বিএমএ
প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ
প্রাক্তন অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইএনটি,
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট