চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস আজ

নিউমোনিয়ায় দেশে বছরে ২৪ সহস্রাধিক শিশু মারা যায়

মরিয়ম জাহান মুন্নী 

১২ নভেম্বর, ২০২০ | ১:০০ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশে বছরে ২৪ সহস্রাধিক শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এছাড়া ৫০ হাজার শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়। যাদের বয়স ৫ বছরের নিচে। তবে সুখবর হচ্ছে, গত তিন বছরের তুলনায় এ রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশু মুত্যৃর হার অনেকটা কমেছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় দেশে আজ বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস পালিত হচ্ছে।

দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য হল ‘স্টপ নিউমোনিয়া, এভরি ব্রেথ কাউন্টস’। বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর পরিসংখ্যান দিয়ে শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বাসনা মুহুরী জানান, বাংলাদেশে ৫ বছর বয়সী শিশুমৃত্যুর হার জন্মের পর প্রতি হাজারে ২৪.৭৩ জন। যার মধ্যে ২৮% নিউমোনিয়ায় মৃত্যু হয়। তবে বিগত তিন দশকে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। ৫ বছর বয়সের কম বয়সীদের মৃত্যুহার কমিয়ে। যা ১৯৯০ সালে ১৪৩.৮ থেকে কমে ৩০.৮ (২০১৯) হয়েছে। অভিভাবকরা এখন অনেক সচেতন হয়েছে। তারা শিশুদের ভ্যাকসিন (পিসিভি) প্রয়োগ করছে। এতে শিশুদের নিউমোনিয়ায় সংক্রমণ অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। এই ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর শিশুমৃত্যুর সংখ্যা ৩৭ শতাংশ থেকে ২২ শতাংশে নেমেছে। ডা. বাসনা মুহুরী বলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যে নিউমোনিয়া মোকাবিলায় আরও পদক্ষেপ নেওয়া না হলে আগামী দশকে বাংলাদেশে ১ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি শিশুর মৃত্যু হতে পারে।  আগ্রাবাদে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (মেডিকেল বিষয়) এবং কনসালটেন্ট পেডিয়াট্রিক আইসিইউ ডা. ফাহিম হাসান রেজা বলেন, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।

নিউমোনিয়ার কারণে শিশুর ফুসফুসের মূল অংশে পানি জমে যায়। ফলে ফুসফুসে প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং কার্যক্ষতা কমে যায়। নিউমোনিয়ার প্রভাবে সর্দি, জ্বর, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। গত এক মাসে নগরীর মা ও শিশু হাসপাতালে নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছে ৩শ শিশু। এরমধ্যে আইসিইউ’তে ১১০ জন শিশু ভর্তি হয়। এ শিশুদের মধ্যে আবার ৬১ জন শিশু গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ছিলেন ও মারা গেছে মাত্র একজন শিশু।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে বছরে ৯৩ লাখ ৫০ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়। দিনে গড়ে প্রায় আড়াই হাজার শিশুর মৃত্যু হয়। নিউমোনিয়ার ঝুঁকিতে থাকা দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম ও এশিয়া মহাদেশের মধ্যে ২য়। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে প্রায় দুই লাখ শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালের ভাইস প্রিন্সিপাল শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. নাছির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, নিউমোনিয়ায় শিশু আক্রান্ত হওয়ার আগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য জন্মের পর ছয়মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো ও জীবাণুমুক্ত পরিবেশে রাখতে হবে। পাশাপাশি মা ও পরিবারের সবার স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এতে করে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস পাবে। এ রোগ প্রতিরোধ করতে হলে শিশুকে ছয়মাস পর্যন্ত মাতৃদুগ্ধ পান, অপুষ্টিরোধ, টিকাদান ও প্রাথমিক অবস্থায় রোগের লক্ষণ দেখার সাথে সাথে চিকিৎসা নিতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই ২০৩০ সালের মধ্যেই প্রতিরোধ এবং প্রতিকারযোগ্য নিউমোনিয়াজনিত শিশু মৃত্যুহার কমানো সম্ভব হবে।

ইউনিসেফের তথ্যমতে, সংক্রমণ রোগসমূহের মধ্যে নিউমোনিয়ায় সবচেয়ে বেশি শিশুর মৃত্যু হয়। ২০১৯ সালে বিশ্বে এ রোগ সংক্রমণের জন্য ২.৫ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে ৬ লাখ ৭২ হাজার জন শিশু। কোভিডকালীন সময়ে স্বাভাবিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কিছুটা হেরফের ঘটায় আরও ১.৯ মিলিয়ন মৃত্যু যুক্ত হতে পারে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট