চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

বোয়ালখালী

থেকেও নেই ক্রীড়া সংস্থা

মিটু বিভাস

১২ নভেম্বর, ২০২০ | ২:৫৪ পূর্বাহ্ণ

ফুটবল দেখলেই যেন নেচে উঠত তাঁর পা। ছেলে বা মেয়ে মাঠে যারাই থাকুক নেতৃত্ব থাকত তাঁর। গোল করাই যেন ছিল তাঁর নেশা। ক্ষুদে পায়ের জাদুতে বিমোহিত হত দাঁড়িয়ে থাকা দর্শক। স্থানীয়রা যার নাম দিয়েছিলেন ক্ষুদে মেসি। বোয়ালখালীর পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত দক্ষিণ কড়লডেঙ্গা গ্রামে যেখানেই ফুটবল, সেখানেই এ মেয়েটি। নাম তাঁর ইসরাত জাহান তিশা। ২০১৫ সালে বঙ্গমাতা ফুটবলে তাঁর পায়ের জাদু দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন দর্শকরা। দল রানার্সআপ হলেও জেলা পর্যায়ে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিল তিশা। শুধু তিশাই নয়, দক্ষিণ কড়লডেঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর সতীর্থ আরজু, রিয়াদের বলের কারিকুরিতে ছেলেরাও অনায়াসে হার মানত। কিন্তু কালের আবহে যেন হারিয়ে গেছে তিশারা। টানা ব্যর্থতায় দেশের ফুটবল যখন ডুবতে বসেছিল, অন্ধকার সে সময়ে আলোকবর্তিতা নিয়ে উদয় হয়েছিল বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা। যার পেছনের ইতিহাসের অনেকটাই ময়মনসিংহের কলসিঁন্দুর গ্রামের মেয়েদের। বঙ্গমাতা ফুটবল দিয়ে উঠে আসা তহুরা-শামছুন্নাহাররা মাঠে আলো ছড়িয়েছেন, ফিরিয়েছেন দেশের সুনাম। তাদেরকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন স্থানীয় ক্রীড়া অভিভাবকরা। কিন্তু তিশাদের মতো বোয়ালখালীর শত শত এথলেটদের স্বপ্ন দেখানোর কেউ নেই। প্রায় অর্ধযুগ ধরে নিষ্ক্রিয় বোয়ালখালী উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা। ২০০৮ সালের পর আর কোন নির্বাচন হয়নি সংস্থার। ২০১৭ সালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের দেয়া এডহক কমিটি চালিয়ে যাচ্ছে রুটিন কার্যক্রম। বছরের পর বছর অনেকটাই অবহেলায় পড়ে রয়েছে উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পদাধিকার বলে ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি আছিয়া খাতুনের কণ্ঠেও হতাশার সুর। পূর্বকোণকে তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার ঘোষিত তফসিলে ২০ মার্চ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ভোটার খসড়া তালিকায় বেশ কিছু অসঙ্গতি ও আপত্তি থাকায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়। এরপর নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণার জন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে চিঠি দিলেও অদ্যবধি কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মূলত রাজনৈতিক বিরোধের শিকার উপজেলা ক্রীড়া সংস্থাটি। ২০১২ সালে তৎকালীন কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেই শুরু হয় এ বিরোধ। ২০১৮ সালের নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ ঘরানার ক্রীড়া সংগঠক মো. কামাল উদ্দিন, পৌর আওয়ামী লীগের আহবায়ক জহুরুল ইসলাম জহুর ও ক্রীড়া সংগঠক হারুনুর রশিদ বাবলু। ক্রীড়া সংস্থার ক্ষমতা নিয়ে বিরোধটা তখন তুঙ্গে উঠে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী কামাল উদ্দিন বলেন, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যত কোন কমিটিই এখন নেই। এডহক কমিটি দিয়ে দীর্ঘদিন কোন সংস্থা চলতে পারে না। একই পদে প্রার্থী জহুরুল ইসলাম বলেন, বছরের পর পর একই গোষ্ঠীর হাতে বন্দি ছিল প্রতিষ্ঠানটি। ক্রীড়া সংস্থাকে শিকলমুক্ত করতে নির্বাচনে আমি প্রার্থী হই। এরপর অদৃশ্য হাতের ইশারায় সে নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়। সংস্থাটি সচল না থাকলে কয়েকজন ক্রীড়া সংগঠক বিভিন্ন টুর্নামেন্ট আয়োজন করে উপজেলা ক্রীড়াকে এখনো জীবিত রেখেছেন। এদের একজন আবুল হাসেম মতি। স্থানীয় এ ক্রীড়া সংগঠক জানান, ‘সংস্থাটি অচল থাকায় অন্ধকারে বোয়ালখালীর ক্রীড়াঙ্গন।’ বছর দুয়েক আগেও এখান থেকে জাতীয় ফুটবল দলে প্রতিনিধিত্ব করেছেন তৌহিদুল আলম। চলতি বছর বঙ্গবন্ধু অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় ফুটবলে দেশসেরা গোলরক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন মো. শওকত হাসান আজগর। কিন্তু বোয়ালখালীর ক্রীড়াঙ্গনের বর্তমান যে অবস্থা তাতে অদূর ভবিষ্যতে এথলেট শূন্য হয়ে পড়ার শঙ্কায় উপজেলাটি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট