চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বন্ধুই যখন খুনি !

মোস্তফা মোহাম্মদ এমরান 

৭ নভেম্বর, ২০২০ | ১২:৫৬ অপরাহ্ণ

তারা দুজনেই শিশু। বয়সের ব্যবধান মাত্র একবছরের। একজনের ১০, অন্যজনের ১১ বছর। যখন দুজনের মুখে ভাষা ফোটেনি, আধোস্বরে বাবা মা ডাকতো তখন থেকেই সখ্যতা, বন্ধুত্ব। পাশাপাশি বাসা হওয়ায় খেলাধুলাও করতো একসাথে। নানা খুনসুটি, হৈ-হুল্লোড়, হাসাহাসি, গলাগলি সব চলতো একসাথে। দুজনের একজন মোটা আরেকজন অপেক্ষাকৃত ক্ষীণকায় বলে ‘মুটো আর শুটকো’ বলে একে অন্যকে ক্ষ্যাপাতো। শারীরিক গঠন নিয়ে একে অপরকে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করতো। এ নিয়ে মান-অভিমান করলেও তা কখনোই রাগের পর্যায়ে গড়ায়নি। কিন্তু সেদিন যমদূত ভর করে শিশু কমলের (ছদ্মনাম) উপর। মুটো বলে বিদ্রুপ করায় চরম ক্ষ্যাপে যায় কমল। রাগের মাথায় টুঁটি চেপে ধরে বন্ধু সুজনের (ছদ্মনাম)। বেশ কিছুক্ষণ পর সুজন সাড়া-শব্দহীন হয়ে পড়ে। কমলের বুঝতে অসুবিধা হয়নি সুজন মৃত্যুবরণ করেছে। এরপর সুজন একাই কমলকে বঙ্গোপসাগরে পানিতে ভাসিয়ে দেয়।

ঘটনাটি ঘটে এবছর ১৫ আগস্ট বিকেলে নগরীর ইপিজেড থানার আকমল আলী রোডের জেলে পাড়া সংলগ্ন বেড়িবাঁধে। মৃত্যুর পর কমল স্বাভাবিকভাবেই ফিরে আসে বাসায়। এদিকে, সুজন বাসায় না ফেরায় তার মা-বাবা অস্থির হয়ে পড়ে। পরে সুজনের লাশ বঙ্গোপসাগরে ভাসতে দেখে একদল জেলে। তারা পুলিশকে খবর দেয়। সুজনের বাবা রহমান (ছদ্মনাম) সুজনের লাশ শনাক্ত করে। সবার ধারণা ছিল সুজন পানিতে ডুবে মারা গেছে। সুজনের মা-বাবা আত্মীয়স্বজন এমনকি পুলিশও মনে করেছে সুজন পানিতে ডুবে মারা গেছে। কারণ খুন হওয়ার মতো সুজনের শরীরে কোনো আলামত ছিলো না।

কিন্তু ময়না তদন্ত রিপোর্টে সুজনের গলায় দাগ পাওয়া যায়। আর শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যু হওয়ার বিষয়টি ওঠে আসে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে। এদিকে, তদন্তে কূল-কিনারা পাচ্ছিল না পুলিশ। কারণ ছোট্ট সুজন বা তার পরিবারের কারো সাথে পারিবারিক দ্বন্দ্ব বা শত্রুতাও নেই। পুলিশ তদন্তে নেমে শিশুর দৈনন্দিন জীবন-যাপন, কার সাথে খেলাধূলা করতো সেপথে আগায়। পুলিশের সন্দেহের তীর যায় কমলের দিকে। কমলকে সন্দেহ করায় পুলিশের উপরও অনেকটা বিরক্ত হয় সুজনের পরিবার। কিন্তু শেষপর্যন্ত পুলিশের সন্দেহ-ই সত্যতা পায়। এক পর্যায়ে কমল নিজ হাতে সুজনকে গলাটিপে মারার কথা স্বীকার করে। আড়াইমাস পর সুজনের মৃত্যুরহস্য উদঘাটিত হয়।

রহস্য উদঘাটনের পর গতকাল শুক্রবার কমলকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। আর শিশু কমল ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেয় আদালতে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালত শিশু কমলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। এরপর আদালত শিশুটিকে শিশু কিশোর সংশোধনী কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন।

ইপিজেড থানার ওসি উৎপল বড়ুয়া পূর্বকোণকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে কমল তার বন্ধু সুজনকে গলাটিপে মারার কথা স্বীকার করে। মা-বাবার শিশুদের প্রতি যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। ছোটবেলা থেকেই শিশুদের মানবিক গল্প শোনানোর অভ্যাস করা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট