চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

উন্নয়নবঞ্চিত সুলতানপুর-ছত্রপাড়াবাসী

একটি ইটও বসেনি ২২ বছরে

জাহেদুল আলম, রাউজান

৩ নভেম্বর, ২০২০ | ২:৪৬ অপরাহ্ণ

রাউজান পৌরসভা কার্যালয় ও উপজেলা পরিষদ কার্যালয় থেকে সড়কটির দূরত্ব মাত্র আধা কিলোমিটার। ‘হিংগলা মুছা শাহ ১ নং সড়ক’ নামের এই সড়কটি ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুলতানপুর, ছত্রপাড়া এলাকার হাজার-হাজার মানুষের যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম।

১৯৯৮ সালে শফিকুল ইসলাম চৌধুরী বেবী যখন পৌরসভার প্রথম প্রশাসক হয়েছিলেন, তখন এই সড়কটিতে ব্রিক সলিন হয়েছিল। পরবর্তীকালে সড়কটির কোন অংশে বিটুমিনের পরশ লাগা দূরে থাক সলিনের জন্যও এক টুকরো ইট পর্যন্ত লাগেনি। সড়কটি পৌরসভা ও উপজেলা সদরের এতো কাছে হলেও যেন ‘বাতির নিচে অন্ধকারে’ ওই এলাকার মানুষগুলো। এতে সুলতানপুর-ছত্রপাড়াবাসীর যাতায়াতের ‘দুঃখ’ পৌরসভা গঠনের ২২ বছর পরও ঘুচলো না।

সেই ২২ বছর আগে লাগানো ইটের সলিন ভেঙেচুরে শেষ!। মাঝে মাঝে এলাকার লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমে ইট, বালি, মাটি দিয়ে ছোট ছোট সংস্কার করেছে। তাতেই তারা কোনরকমে যাতায়াত রক্ষা করছে সদর, ফকিরহাট, মুন্সিরঘাটা ও চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের সঙ্গে। তাও কোন ইঞ্জিনচালিত গাড়ি চলাচল করতে পারে না। রিকশা চলাচলও দায় এ সড়ক দিয়ে। মূল কেন্দ্র উপজেলা কার্যালয়, ফকিরহাট থেকে ছত্রপাড়া এলাকাটি খুব কাছে হলেও ছত্রপাড়া এলাকায় ৫০-৭০ টাকা ভাড়ায়ও রিকশা চালকরা যাতায়াত করতে চায় না। সড়কের দুরবস্থায় কেউ আত্মীয়তা করতে চায় না এ সড়কসংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর সঙ্গে। গত ১ নভেম্বর সড়কটি পরিদর্শনকালে এসব অভিযোগ করেছেন ছত্রপাড়া-সুলতানপুর এলাকার ভুক্তভোগীরা।

এলাকার বাসিন্দা মহিম উদ্দিন মাস্টার, জমির উদ্দিন, মোহাম্মদ আলীসহ অনেকে বলেন, ‘সুলতানপুর দারোগা বাড়ির উত্তর পাশে মাওলানা দোস্ত মোহাম্মদ সড়ক সংযোগস্থল থেকে কানেকটিং সড়ক হিসেবে ‘হিংগলা মুছা শাহ ১ নং সড়ক’টি উত্তর দিকে চলে গেছে হিংগলা মুছা শাহ বাজার পর্যন্ত। তিন দশমিক ৮৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ সড়কটির ৬শ ফুট সম্পূর্ণ কাঁচা। বাকি অংশে ইট থাকলেও সেসবের অস্তিত্ব অনেক আগেই বিলীন হয়ে গেছে। প্রায় ২২ বছর আগে বিছানো এসব ইট ভেঙে বহু খানা-খন্দক সৃষ্টি হয়েছে সড়কটিতে। অথচ হরিপদ দাশের বাড়ি, আমিনুল্লাহ কেরানীর বাড়ি, রাশেদ বিল্ডিং, ছালে আহম্মদ সওদাগর বাড়ি, মন্নান কেরানীর বাড়ি, মাওলানা আলী আহমদ সাহেবের বাড়ি, আবুল ফজল মেম্বারের বাড়িসহ বিভিন্ন বাড়ির বাসিন্দাদের উপজেলা সদর, ফকিরহাট, চট্টগ্রাম শহরের সাথে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম এই সড়ক। এলাকার লোকজন বার বার নিজেদের অর্থ খরচ করে সংস্কার করে পায়ে হেঁটে চলাচলের উপযোগী করলেও বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টির সময় সড়কটির উপর দিয়ে পায়ে হেঁটে যাওয়াও কষ্টকর হয়ে যায়। আর বন্যার সময় সড়কটি গলা পরিমাণ পানিতে তলিয়ে যায়। গত ২২ বছরে সড়কটির কোন উন্নয়ন না হওয়ায় প্রতিবছরের বন্যায় সড়কটির নানাস্থান ধসে গেছে। এতে পুরো সড়কটির এখন করুণ অবস্থা।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার অনেকে বলেন, ‘আশ-পাশের অনেক ওয়ার্ডে অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন হলেও এ ওয়ার্ড যেন অভিভাবকহীন। এতে এ গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি বহুকাল ধরেই যেন ‘এতিম’। তারা বলেন, এ রাস্তার রাশেদ বিল্ডিংয়ের পাশে গাইডওয়াল নির্মাণ, কালভার্টগুলোর পুনঃনির্মাণ এবং রাস্তাটির পুরো অংশজুড়েই প্রয়োজন বিটুমিন বা কংক্রিটের ঢালাই। অন্যথায় রাস্তাটির অস্তিত্ব আগামী বছরের বন্যাতেই বিলীন হয়ে যাবে বলে তাদের শঙ্কা।

এলাকাবাসী সড়কটি টেকসই করে উন্নয়নের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় এমপি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি ও পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট