চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রাম আয়কর বিভাগে কর আদায়েও করোনা-বাধা

আল-আমিন সিকদার 

৩ নভেম্বর, ২০২০ | ১২:৪৭ অপরাহ্ণ

‘সবাই মিলে দেব কর, দেশ হবে স্বনির্ভর’, ‘সুখী স্বদেশ গড়তে ভাই, আয়করের বিকল্প নাই’। এমনই ভিন্ন ভিন্ন স্লোগানে গত ২০০৯-২০১০ অর্থবছর থেকে আয়কর মেলার আয়োজন করে আসছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আয়কর আদায়ে বেশ ভালো ভূমিকা রেখেছে এ মেলা। মেলায় একই ছাদের নিচে নিজেকে করদাতা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা থেকে শুরু করে রয়েছে কর পরিশোধেরও সুযোগ। এতে যেমন সেবাগ্রহীতারা জানছেন কর প্রদানের প্রয়োজনীয়তা, তেমনি বাড়ছে নতুন করদাতার সংখ্যা। রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বছর বছর বাড়ছে রাজস্ব। তাই তো কর মেলা আয়োজনের পর থেকে কর আদায় বেড়েছে প্রায় ৫ গুণ। তবে আয়কর আদায়ে এবারের মেলায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনা ভাইরাস। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে আয়কর মেলা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। এমনকি এর প্রভাব আয়কর আদায়েও পড়বে বলে মন্তব্য করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে এবার মেলা না হলেও মেলার পরিবেশেই জমা করা যাবে রিটার্ন। মেলা না হলেও এবার প্রতিটি কর অঞ্চলে চলছে মাসব্যাপী ‘রিটার্ন গ্রহণ কার্যক্রম-২০২০’। এনবিআরের এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চট্টগ্রামের চারটি কর অঞ্চলে চলবে এ কার্যক্রম। যেখানে রিটার্ন দাখিলের পাশাপাশি তাৎক্ষণিক প্রাপ্তিস্বীকার সনদ পাবেন করদাতারা। থাকছে ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন সেবা। তবে করোনা মোকাবেলায় এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে এবার থাকছে না ব্যাংক সুবিধা। শুধু তাই নয়, কর প্রদানে উৎসাহিত করতে প্রতি মেলায় সেরা করদাতাদের যে সম্মাননা দেয়া হয় সেটাও ঝুলে রয়েছে এবার। তবে সেরা করদাতা নির্বাচনে এরইমধ্যে গঠন করা হয়েছে কমিটি। ডিসেম্বরের মধ্যে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে কেন্দ্রীয় কিংবা অঞ্চলভিত্তিক হলেও সেরা করদাতা সম্মাননা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর।

এদিকে নতুন নীতিমালায় সকল ই-টিআইএনধারীকে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করায় বাড়বে রিটার্ন গ্রহণের সংখ্যা। কিন্তু করোনার কারণে গত অর্থবছরের তুলনায় আয়কর আদায়ের পরিমাণ না কমলেও বাড়বে না বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

আয়কর বিভাগের তথ্য মতে, ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে চট্টগ্রামে আয়কর আহরণ হয় ২ হাজার ৭৫০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে এ আহরণ গিয়ে দাঁড়ায় ১১ হাজার ১১৭ কোটি টাকায়। যা প্রায় ৫ গুণ। শুধু তাই নয়, ২০১০ সালে চট্টগ্রামে আয়কর মেলায় আহরণ হয় ৪০ কোটি ১২ লাখ টাকা। সর্বশেষ মেলায় যেটা গিয়ে দাঁড়ায় ৫৭০ কোটি ২৪ লাখ টাকা। যা প্রায় ১৪ গুণ। এভাবেই প্রতিবছরই মেলায় বাড়ছে আয়কর আহরণের পরিমাণ। তবে রিটার্ন গ্রহণের সংখ্যা বাড়ার কথা নিশ্চিত করলেও আয়কর আদায়ের পরিমাণ কমার আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আয়কর কর্মকর্তা পূর্বকোণকে বলেন, ‘এবারের নীতিমালায় সকল ই-টিআইএনধারীকে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে করে সর্বশেষ মেলায় যে ২ হাজার ১৮৫ জন নতুন ই-টিআইএন নিয়েছেন তাদের সকলকেই রিটার্ন জমা দিতে হবে। সর্বশেষ বছরের মেলার তুলনায়ও বাড়বে এবারের রিটার্ন গ্রহণের সংখ্যা। তবে সকল ই-টিআইএনধারী ট্যাক্স প্রদানের আওতাভুক্ত নয় বলে আয়কর আদায়ের পরিমাণ বাড়বে না। এমনকি নিয়মিত আদায়ের তুলনায় এবার একটু কমতে পারে। করোনার জন্য একটু ধাক্কা আসবে।’

উল্লেখ্য এবার মেলা না হলেও মেলার আদলে মাসব্যাপী আয়কর তথ্য ও সেবা কার্যক্রম শুরু করেছে আয়কর বিভাগ। চট্টগ্রামের চারটি কর অঞ্চলে ১ নভেম্বর শুরু হয়েছে এ কার্যক্রম, চলবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে রিটার্ন গ্রহণ থেকে শুরু করে ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন সেবা।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট