চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

অর্থনীতির চাকা সচল যাদের শ্রমে তারাই বেশি নির্যাতনের শিকার

মরিয়ম জাহান মুন্নী 

১ নভেম্বর, ২০২০ | ১:৫৬ অপরাহ্ণ

হাতে ব্যাগ নিয়ে খুব দ্রুত পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন তারা। দু-তিনজন দল বেঁধে। কারো পরনে বোরকা, কারো বা সেলোয়ার কামিজ। ব্যস্ততার মধ্যেও হাঁটাপথে একে অন্যের সাথে গল্প আর হাসি-ঠাট্টায় মগ্ন। এমন হাসি মুখে কাজের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন ভোরে ঘর থেকে বের হন তারা। শুরু হয় কর্মব্যস্ত জীবনভোর ছয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত। নগরীর অলিগলিসহ বিভিন্ন সড়কে এমন নারী পোশাক শ্রমিকদের দেখা যায়। যাদের কর্মে সচল দেশের অর্থনীতির চাকা। তাদের পরিশ্রমের উপর দাঁড়িয়ে আছে এ দেশের অর্থনীতি। বিশেষ করে বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলো নারীদের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু এ নারী শ্রমিকরা কর্মক্ষেত্রে প্রতিদিন নানাভাবে শারীরিক, মানসিক, মৌখিক এবং যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে।

সম্প্রতি শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের একটি তথ্যে দেখা যায়, পোশাক শিল্পে ২১ লাখ ৩০ হাজার ১৫৪ শ্রমিক কাজ করেন। এরমধ্যে নারী ১২ লাখ ২০ হাজার ৪৭৯ ও ৯ লাখ ১৬ হাজার ১৮২ জন পুরুষ। কিন্তু এ নারী শ্রমিকরাই রয়েছেন অবহেলায়। কর্মক্ষেত্রে পাচ্ছে না সকল অধিকার। অসুস্থ অবস্থায়ও করে যাচ্ছেন কঠোর পরিশ্রম।

ইপিজেড, বায়েজিদ, কালুরঘাট এলাকার বিভিন্ন গার্মেন্টসে কর্মরত কিছু সংখ্যাক নারী শ্রমিক বলেন, দৈনিক ১০-১১ ঘণ্টা কাজ করতে হয় তাদের। অনেকে দৈনিক ১১ ঘণ্টার বেশিও কাজ করেন। ইপিজেডের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক রতœা আক্তার ও সুরমা বেগম বলেন, সকাল ৮টার মধ্যে ফ্যাক্টরিতে উপস্থিত থাকতে হয়। দেরি হলে টাকা কাটে। ৮টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কাজের সময়। কিন্তু অনেক সময় অতিরিক্ত সময়ও কাজ করতে হয়।

আগ্রাবাদ মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ড. আনোয়ারা আলম বলেন, আমি এ নারীদের খুব কাছ থেকে দেখেছি। এদের যেভাবে খাটায় সেভাবে পারিশ্রমিক দেয়া হয় না। তৈরি পোশাক কারখানার নারী শ্রমিকদের প্রায় ৯৫ জনই কর্মক্ষেত্রে মৌখিক নির্যাতনের শিকার হন। আর যৌন নির্যাতনের শিকার ৪০ ভাগ। মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন ৫০ ভাগ নারী। এ নারীদের সাথে কথা বললেই  শোনা যায় কোনো না কোনো হয়রানি মূলক গল্প। এছাড়া পোশাক কারখানায় কাজের ধরন অনুযায়ী বিশ্রাম একটি অংশ হলেও এ নারীরা বিশ্রামের সময় পান না। অনেক সময় তাদের রাত জেগেও কাজ করতে হয়। সব সময় সাপ্তাহিক ছুটিও পান না। কাজে যোগ দেয়ার সময় নিয়োগসংক্রান্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত। নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, সার্ভিস বই, উপস্থিতির কার্ডও পান না।

চট্টগ্রামে নারী পোশাক শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করছেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও আওয়াজ ফাউন্ডেশন। সম্প্রতি তারা জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা মোকাবেলায় সুশীল সমাজ গঠনে একটি প্রজেক্টক নিয়ে নগরীর জালালাবাদ, শুলকবহর, কালুরঘাট ও ইপিজেড এলাকার নারী পোশাক শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করছেন। সেখানে তাদের একটি তথ্যে দেখা যায়, ইপিজেডের ১৮১ পোশাক কারখানায় কর্মরত আছেন দুই লাখ ৫৯ হাজার ৫৭১ জন শ্রমিক। এ পোশাক শ্রমিকরা প্রতিদিন কোনো না কোনোভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। তাদের এ হয়রানি থেকে রেহাই পেতে সংগঠনটি কিছু প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। যা তাদের জীবনমান উন্নয়নে ভালো অবদান রাখবে।

বিজিএমইএ’এর ডিরেক্টর মোহাম্মদ আতিক বলেন, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে গার্মেন্ট সেক্টরে ৯৫ ভাগ মেয়ে কাজ করে। যেহেতু এ সেক্টরে নারী বেশি তাই নারী গঠিত কোনো সমস্যাও একটু বেশি। কিন্তু আমরা সর্বদাই নারীদের প্রতি যতœশীল। কারণ পোশাকশিল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশ এ নারী শ্রমিকগণ। তাই যদি কোনো নারীশ্রমিক কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে আমরা খবর শুনি বা কোনো অভিযোগ পাই তাৎক্ষণিক সব রকম ব্যবস্থা নিই ও আইনি সকল সহায়তা দিয়ে থাকি।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট