চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

খাদ্য বিভাগের দুর্নীতি: টাকা দিলেই মিলে ‘অভিজ্ঞতা সনদ’

নতুন ঠিকাদাররা অতি উৎসাহী হয়ে টাকা-পয়সা দিয়ে সনদ নিচ্ছে : ঠিকাদার সমিতি

খাদ্য বিভাগের দুর্নীতি: টাকা দিলেই মিলে ‘অভিজ্ঞতা সনদ’

অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা : জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২৯ অক্টোবর, ২০২০ | ৫:১৬ অপরাহ্ণ

খাদ্য বিভাগের পরিবহন ঠিকাদার অন্তর্ভুক্তির জন্য ‘অভিজ্ঞতা’ সনদ নিতে হয় সংশ্লিষ্ট জেলা থেকে। চট্টগ্রাম থেকে টাকা বিনিময়ে সনদ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অভিজ্ঞ-অভিজ্ঞতা সব ঠিকাদারকে টাকার বিনিময়ে সনদ নিতে হয়েছে। অন্তত ১০ জন ঠিকাদার এই অভিযোগ করেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ঠিকাদার বলেন, ‘৫টি প্রতিষ্ঠানের নামে অভিজ্ঞতা সনদ নিতে চেয়েছিলাম। একটির জন্য ২০ হাজার টাকা করে এক লাখ টাকা দাবি করা হয়। শেষ পর্যন্ত অভিজ্ঞতা সনদ আর নেওয়া হয়নি। অন্য জেলা থেকে নিয়েছি।’

গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে দেশের বিভিন্ন জেলায় সড়ক পরিবহন ঠিকাদার তালিকাভুক্তির বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এতে দেখা যায়, কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন ঠিকাদার (সিআরটিসি), ঢাকা বিভাগীয় পরিবহন ঠিকাদার (ডিআরটিসি), রাজশাহী বিভাগীয় পরিবহন ঠিকাদার (ডিআরটিসি) ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত খাদ্যশস্য, খাদ্যদ্রব্য, অন্যান্য মালামাল পরিবহনের ঠিকাদার অন্তর্ভুক্তির আবেদন আহ্বান করেছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে এসব পরিবহন ঠিকাদারের নিয়োগের শর্তে বলা হয়েছে, খাদ্য বিভাগের খাদ্যশস্য সড়ক পথে পরিবহন কাজের দুই বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। অথবা সড়ক পথে এক বছর এবং সাধারণ খাদ্যশস্য পরিবহন কাজে এক বছরসহ দুই বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সড়ক পথে সাধারণ খাদ্যশস্য পরিবহনের তিন বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এই অভিজ্ঞতার সনদ নিতে হয় সংশ্লিষ্ট জেলা খাদ্য চলাচল ও সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রণের কার্যালয় থেকে।

একাধিক ঠিকাদারের অভিযোগ, অভিজ্ঞতা থাকা ঠিকাদারদের কাছ থেকে ৩-৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। আর অনভিজ্ঞ বা নতুন ঠিকাদারদের অভিজ্ঞতা সনদ দিতে নেওয়া হয়েছে ১৫-২০ হাজার টাকা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অভিজ্ঞতা দেখিয়ে নতুন ঠিকাদারদের অভিজ্ঞতা সনদ দেওয়া হয়।

পুরোনো ঠিকাদারদের ম্যানেজ করে বা সনদের জন্য টাকা ছাড় দিয়ে নতুন ঠিকাদারদের কাছ থেকে বেশি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সবই ম্যানেজ করেছেন মো. জাবেদ। খাদ্য বিভাগের চলাচল ও সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের অফিস সহকারী মো. জাবেদ এসব সনদ প্রস্তুত করেন। টাকার বিনিময়ে অনভিজ্ঞ ও নতুন ঠিকাদারদের সনদ দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে জাবেদের বিরুদ্ধে। চট্টগ্রাম খাদ্য চলাচল ও সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবু নঈম মো. শফিউল আজম।

অভিজ্ঞতা সনদে টাকা নেওয়ার বিষয়ে তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘কোনো ঠিকাদার আমাকে কিছুই বলেনি। বা অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ ঠিকাদাররা জানান, নামে-বেনামে বা পরিবার-পরিজনের নামে অনেকের একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে। জাবেদকে টাকা দিলেই সনদ প্রস্তুত করে দেন।

এ বিষয়ে মো. জাবেদ বলেন, ‘অন্তত আড়াই শতাধিক ঠিকাদার অভিজ্ঞতা সনদ নিয়েছে। অনেকেই চট্টগ্রাম ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় কাজ করে। তারা সংশ্লিষ্ট জেলা থেকে সনদ নিয়েছে। তবে দুই বছরের কাজের অভিজ্ঞতা না থাকায় অনেকেই সনদ নিতে পারেনি।’

টাকার বিনিময়ে অভিজ্ঞতা সনদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে অস্বাভাবিক কোনো কাজ হয়নি। ঠিকাদারদের সমিতি রয়েছে। সব কাজ সেখান থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আমি এসব করি না। ঠিকাদাররা ভুল বলেছেন।’ তাহলে কে টাকা নেয় প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি জানি না। অফিসে আসলে কথা বলব।’

চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন ঠিকাদারি সমিতি সভাপতি সভাপতি সৈয়দ মাহমুদুল হক বলেন, ‘নতুন ঠিকাদাররা অতি উৎসাহী হয়ে টাকা-পয়সা দিয়ে সনদ নিচ্ছে। এতে আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তবে পুরোনো ঠিকাদারদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রতি জেলার জন্য আলাদা করে অভিজ্ঞতা সনদ নিতে হচ্ছে। এটার প্রয়োজন ছিল না। এতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন ঠিকাদাররা।’ জাবেদের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে সনদ বাণিজ্য।

 

 

 

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট