চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

করোনার ধাক্কা এখনো কাটেনি রড-সিমেন্টের বাজারে

নির্মাণকাজ প্রায় বন্ধ

করোনার ধাক্কা এখনো কাটেনি রড-সিমেন্টের বাজারে

টনে তিন হাজার টাকা লোকসান ৫-১০ টাকা কমে বিক্রি সিমেন্ট

মোহাম্মদ আলী

২৯ অক্টোবর, ২০২০ | ৪:৫৮ অপরাহ্ণ

রড-সিমেন্টের বাজারে করোনার ধাক্কা এখনো কাটেনি। এখনো টন প্রতি তিন হাজার টাকা লোকসান দিয়ে রড বিক্রি করছে ফ্যাক্টরি মালিকরা। অপরদিকে বস্তা প্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে সিমেন্ট।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ হচ্ছে রড ব্যবসার পিক আওয়ার। এ সময়ে রডের চাহিদা থাকে বেশি। কিন্তু করোনার কারণে এ বছর নির্মাণকাজ প্রায় বন্ধ রয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে কিছু কিছু কাজ শুরু হলেও তা চলছে ধীর গতিতে। তাতে হ্রাস পায় রডের চাহিদা। এ কারণে কমেছে রডের দাম। চলতি বছরের মার্চে করোনা শুরুর আগে রডের দাম ছিল টন প্রতি সর্বনিম্ন ৫৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫৯ হাজার টাকা। কিন্তু করোনা মহামারী শুরুর পরপরই রডের দাম কমে যায়।

এপ্রিলের শুরু থেকে জুলাই পর্যন্ত রডের দাম ছিল নিম্নমুখী। একই সাথে কমে যায় রডের বেচাবিক্রিও। কমতে কমতে তা ৮৫ শতাংশে চলে আসে। বেচাবিক্রি কমে যাওয়ায় অনেক ফ্যাক্টরি মালিক রড উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। কোন কোন ফ্যাক্টরির উৎপাদন তিন শিফটের পরিবর্তে দুই শিফটে নিয়ে আসে। এর মধ্যে যুক্ত হয় উত্তরবঙ্গের বন্যা। বন্যার কারণেও রডের বাজারে দরপতন ঘটে। তবে আগস্টের শুরু থেকে ঘুরে দাঁড়াতে থাকে রডের বাজার। বেচাবিক্রি বাড়তে থাকে। বাড়তে বাড়তে তা ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।

সূত্র আরো জানায়, ২০১৯ সালের অক্টোবরে রডের মূল্য ছিল টন প্রতি ৫৭ হাজার থেকে ৫৮ হাজার টাকা। ২০২০ সালের একই সময়ে বিক্রি হচ্ছে ৫১ হাজার থেকে ৫৫ হাজার টাকা। এতে প্রতি টনে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা কমে বিক্রি হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে বৃদ্ধি পায় কাঁচামালের মূল্য। তবে মে-জুন মাসে কাঁচামালের দাম তুলনামূলক কম ছিল। ওই সময়ে কাঁচামালের জন্য এলসি করা হলেও মালামাল আসে দেরিতে। এ কারণে উৎপাদন কমে যায়। তাছাড়া মে-জুনে স্ক্র্যাপের মূল্য ছিল টন প্রতি ৭০ থেকে ৮০ ডলার। জুলাই থেকে কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি পেলেও রডের দাম বাড়েনি।

বাংলাদেশ স্টীল ম্যানুফেকচারিং এসোসিয়েশনের (বিএসএমএ) তথ্য মতে, সারাদেশে বার্ষিক রডের চাহিদা ৭০ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু সারাদেশের ফ্যাক্টরিগুলোতে উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে আরো বেশি। প্রায় ৮৫ লাখ মেট্রিক টন। দেশে যে পরিমাণ রড উৎপাদন হয়, তার ৮০ শতাংশ উৎপাদন হয় চট্টগ্রামে। এর মধ্যে জিপিএইচ ইস্পাত ৮ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন, বিএসআরএম ৪ লাখ মেট্রিক টন, আবুল খায়ের ৪ লাখ মেট্রিক টন, কেএসআরএম ৩ লাখ মেট্রিক টন এবং গোল্ডেন ইস্পাত, শীতলপুর, সীমা স্টীল, আরএসআরএম ও বায়েজিদ স্টীল তৈরি করে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন। উৎপাদিত রডের ৬০ শতাংশ ব্যবহার হয় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে। বেসরকারি কাজে ব্যবহার হয় অবশিষ্ট ৪০ শতাংশ।

বাংলাদেশে মোট ইস্পাত কারখানা রয়েছে ২৩৫টি। এর মধ্যে ৩৬টি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় (অটোমেটিক)। ১৯৯টি সনাতনী রি-রোলিং মিল। রড তৈরির কাঁচামালের মধ্যে ৭০ শতাংশ আমদানি নির্ভর। অবশিষ্ট ৩০ শতাংশ দেশিয় শিপব্রেকিং থেকে যোগান দেয়া হয়।

সিমেন্ট: করোনার কারণে সিমেন্টের বস্তা প্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা করে কমেছে। সরকারের উন্নয়ন কাজের গতি স্বাভাবিক না হওয়া এবং বেসরকারি কাজগুলোর গতি না বাড়ায় সিমেন্টের চাহিদা বাড়ছে না। ফলে আগের চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে সিমেন্ট। এতে লোকসানের শিকার হচ্ছেন ফ্যাক্টরি মালিকরা।

এ প্রসঙ্গে মোস্তাফা হাকিম গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ সরোয়ার আলম দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘করোনার কারণে রডের দাম টন প্রতি ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কমে গিয়েছিল। বর্তমানেও স্বাভাবিকের চেয়ে টন প্রতি তিন হাজার টাকা কমে রড বিক্রি হচ্ছে। ভাল মানের রড বর্তমানে টন প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫১ হাজার থেকে ৫৫ হাজার টাকা। অপরদিকে সিমেন্ট বিক্রি হচ্ছে বস্তা প্রতি ৩৬০ থেকে ৩৮০ টাকা। করোনার কারণে বস্তা প্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা করে কমেছে।’

 

 

 

 

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট