চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ফাইল ফটো

শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ

রূপসা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন: শ্রমিকের চাকায় ভাগ্য বদল

চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যানসহ ১০ জনের সম্পদের অনুসন্ধানে দুদক

ইমাম হোসাইন রাজু

২৯ অক্টোবর, ২০২০ | ৪:৫৬ অপরাহ্ণ

একসময়ে চাকরি করতো ইপিজেডের একটি গার্মেন্টসে। সেই চাকরি ছেড়ে কাজ নেন একটি ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে। কিছুদিন পর নিজেই গড়েন একটি কোম্পানি। সঙ্গে নেন আরও কয়েকজনকেও। শুরু হয় নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত টাকা জমা রাখলে বিপুল লাভের আশ্বাসও। যার একমাত্র টার্গেট শুধুমাত্র গার্মেন্টস শ্রমিক। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এসব শ্রমিক থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে এখন নিজে ও সহকর্মীরা বনে গেছেন কোটিপতি। গার্মেন্টস কর্মী থেকে এভাবে কোটিপতি বনেছেন ‘রূপসা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন’ এর এমডি জাকির হোসেন হাওলাদার।

বিপরীতে লাভতো দূরের কথা, জমানো টাকা ফেরত পাওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তায় আছেন গ্রাহকরা। এসব গ্রাহকদের প্রায় শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। নগরীর ইপিজেড কেন্দ্রিক গড়ে ওঠা এ প্রতিষ্ঠানটির সাত কর্মকর্তাসহ অন্তত ১০ জনের বিষয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৬ সালে যাত্রা শুরু করে রূপসা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন নামের এ প্রতিষ্ঠানটি। যেখানে বর্তমানে প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি গ্রাহক রয়েছে। যার অধিকাংশই ইপিজেড এলাকা কেন্দ্রিক গড়ে ওঠা বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিক। এসব শ্রমিকদের প্রতিষ্ঠানটিতে টানতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে প্রায় ৫০ জন ‘সিনিয়র ম্যানেজার’ পদধারী কর্মকর্তাও। যাদের সাথে রয়েছেন একেকজন নারী সহকারীও। যাদের কাজ শুধুমাত্র পোশাক কারখানায় কাজ করা শ্রমিকদের ফুসলিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সদস্য পদ দেয়া। অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত টাকা জমা রাখলেই ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত লভ্যাংশ দেয়ার গল্প শুনানো হয় তাদের। যদিও বাস্তবে তা পুরোই ফাঁকা।

এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ নানান অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযান চালায় পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। এসময় ৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা জব্দসহ গ্রেপ্তার করা হয় প্রতিষ্ঠানের ভাইস চেয়ারম্যান মুছা হাওলাদার, পরিচালক গোলাম ফয়সাল ও রাসেল হাওলাদারকে। তারপর থেকেই বেরিয়ে আসছে একের পর এক তথ্য। এরমধ্যে দুই সিনিয়র ম্যানেজার কামরুজ্জামান হাওলাদার ও গোলাম ফয়সালের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের হাতিয়ে নিজেদের পকেটভারীর পাশাপাশি অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে দুদক। একই সাথে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সাতজনের বিরুদ্ধেও পৃথক অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে।

তথ্যমতে, সাত জনের একটি পরিষদের মাধ্যমেই চলে এ প্রতিষ্ঠান। যার চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান কোম্পানি। ভাইস চেয়ারম্যান মুসা হাওলাদার, ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকির হোসেন হাওলাদার, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (প্রকল্প) রাসেল হাওলাদার, এজাজুল হক খান, নাছির হাওলাদার ও মো. আলমগীর। এরাই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছেন।

দুদক সূত্রে জানা যায়, সাতজনের পরিচালনা পর্ষদ হলেও সবকিছুই দেখভাল করেন চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান মুসা হাওলাদার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকির হোসেন হাওলাদার এবং তার আপন ভাই রাসেল হাওলাদার। ইতোমধ্যে তারা নগরীর ইপিজেড এলাকায় বাড়িও তৈরি করেছেন। গড়েছেন গাড়িও। এরমধ্যে জাকির হোসেন কলসী দিঘির পাড়ে নিজ নামে বাড়িও তৈরি করেছেন সম্প্রতি। যাতায়াত করেন নিজ গাড়িতেও। যার বিষয়ে সম্প্রতি তাদের তলব করে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রূপসা উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের নামে নগরীর ইপিজেড কেন্দ্রিক অন্তত ৭টি বাড়ি রয়েছে। এরমধ্যে কলসী দিঘির পাড়ের বসির আহমেদ রোডের রূপসা ভবন-৪, ওমর শাহা মাজারের পাশে, ব্যারিস্টার সুলতান আহমেদ ডিগ্রি কলেজের পাশে, হাসপাতাল গেট, নয়ার হাট ও বন্দরটিলা কসাই গলি, আকমল আলী রোডে রয়েছে রূপসা ভবন নামে একাধিক বাড়ি। যার একেকটি একেকজনের নামেই ক্রয় করা হয়। এছাড়া পতেঙ্গা এলাকায় কিছু জমিও আছে প্রতিষ্ঠানটির।

নাম প্রকামে অনিচ্ছুক রূপসা উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের এক কর্মকর্তা পূর্বকোণকে বলেন, ‘মূলত এসব বাড়ি আর জমির লোভ দেখিয়েই আকৃষ্ট করা হয় শ্রমিকদের। যাদের বলা হয় ৫০ হাজার টাকা জমা রাখলে আপনাকে বছরশেষে ৬০ হাজার টাকা দেয়া হবে। কিন্তু আসলেই এর কিছুই হয়না। ইতোমধ্যে জানুয়ারির পর থেকে গ্রাহকদের টাকা বুঝিয়ে দেয়া নিয়েও চলছে নানা সমস্যা।’

এসব প্রসঙ্গে জানতে এমডি জাকির হোসেনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও মুঠোফোনে তাকে পাওয়া যায়নি। এসএমএস দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি তার। কার্যালয়ে গিয়েও তার দেখা পাওয়া যায়নি। কথা হয় ভাইস চেয়ারম্যান মুসা হাওলাদারের সাথে। তবে দুদকের তলবের বিষয়টি তিনি স্বীকার করে এ বিষয়ে চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।

রূপসার চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান কোম্পানি পূর্বকোণকে বলেন, ‘সঠিক সময়ে গ্রাহকের কাছে টাকা পৌঁছাতে না পারলেও ২/৩ কিস্তির মাধ্যমে দিয়ে যাচ্ছি। তাছাড়া যাদের কাছে টাকা পাব তারাও ঠিক মতো টাকা পরিশোধ করছে না। অন্যদিকে কিছু ব্যাংক একাউন্টও ব্লক করা হয়েছে। তবে সঠিক সময়ে সব গ্রাহককে টাকা দেয়া হবে।’

সম্পদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কে কত বাড়ি করেছে বা কত বাড়ির মালিক সেটি দুদক অনুসন্ধান করে দেখুক। ব্যক্তিগতভাবে তো সবার বাড়ি থাকতেই পারে। তবে এতে রূপসার সাথে কোন সম্পর্ক নেই।’

 

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট