চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বাইরের চেয়ে ৫০-৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমমূল্যে হয় অনেক মানসম্মত পরীক্ষা

চমেক হাসপাতালের ‘স্বল্প খরচে পরীক্ষা’ অনেকের অজানা

হাসপাতালে দালাল চক্রের খপ্পরে পড়লে আর্থিক হয়রানি

ইমাম হোসাইন রাজু

২০ অক্টোবর, ২০২০ | ৪:৫০ অপরাহ্ণ

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা গ্রহণে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে স্ত্রীকে নিয়ে বাঁশখালী থেকে ছুটে আসেন আহমেদ নবী। চিকিৎসকের পরামর্শে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ছুটে যান হাসপাতালের সামনে থাকা কিছু ডায়াগনিস্টক সেন্টারে। কিন্তু এসব পরীক্ষার দাম অস্বাভাবিক হওয়ায় পুনরায় হাসপাতালেই ফিরে আসেন তিনি।

গতকাল সোমবার দুপুরে কথা হয় আহমেদ নবীর সাথে। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘কয়েকটি পরীক্ষার জন্য বাইরের কিছু ল্যাবে ৫ থেকে ৭ হাজার পর্যন্ত চেয়েছে। কিন্তু চমেক হাসপাতালে তা মাত্র ১৮শ’ টাকায় করা যাচ্ছে। অর্থাৎ বেসরকারি ল্যাবের তুলনায় প্রায় ৭০ ভাগ কমে সরকারি হাসপাতালে করতে পেরেছি।’

শুধু দু’-চারটি পরীক্ষাই নয়, এক্স-রে, এমআরআই থেকে শুরু করে সিটিস্ক্যানসহ ছোট-বড় সবধরনের পরীক্ষা হয়ে আসছে বৃহত্তর চট্টগ্রামের সরকারি বৃহৎ এ হাসপাতালে। যেখানে বেসরকারি ল্যাবের চেয়ে কয়েকগুণ কম খরচে পরীক্ষা করা যাচ্ছে সব পরীক্ষাই। অনেক ক্ষেত্রে কিছু কিছু পরীক্ষা ৭০ শতাংশের চেয়েও কম অর্থে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়ে থাকে হাসপাতালে অবস্থিত ল্যাবে। যেখানে হাসপাতালের ভর্তিরত রোগী থেকে শুরু করে বহির্বিভাগ ও বাইরে থেকে আসা সাধারণ রোগীরাও স্বল্পমূল্যে সব ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করার সুযোগ রয়েছে।

পরীক্ষা নিরীক্ষার সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টরা জানান, শুধুমাত্র হাসপাতালে থাকা দালালচক্রের খপ্পরে পড়ে সাধারণ মানুষ পরীক্ষা নিরীক্ষা স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে করে থাকেন। আবার অনেকেই সরকারি হাসপাতালের পরীক্ষা নিরীক্ষার মান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন বলেই চলে যায়। অথচ বাইরের ল্যাবের তুলনায় সরকারি হাসপাতালের ইক্যুয়েপমেন্টগুলো অনেক বেশি মানসম্মত।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধুমাত্র চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে প্যাথলজিক্যালের ওপর পরীক্ষা হয়ে থাকে প্রায় অর্ধশত। হাসপাতালের নতুন ভবনের চতুর্থ তলায় প্যাথলজি বিভাগে এসব পরীক্ষা হয়ে থাকে। এছাড়া চমেক হাসপাতালের তৃতীয় তলার তথা ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের রেডিওলজি বিভাগে এক্স-রে, সিটিস্ক্যান, এমআরআইসহ বেশ কিছু ভারী পরীক্ষা হয়ে থাকে তাতে। এরমধ্যে সাধারণ এক্স-রে পরীক্ষাগুলো হাসপাতালে মাত্র দুইশ’ টাকায় করা হলেও বাইরে তা পাঁচ’শ থেকে সাতশ’ টাকা পর্যন্ত গুনতে হয়। সিটিস্ক্যান পরীক্ষা বাইরে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা হলেও হাসপাতালে মাত্র দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায় হয়ে থাকে। এছাড়া এমআরআই পরীক্ষা চমেক হাসপাতালে মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায় করা হলেও বাইরে তা সাত থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়।

রেডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুভাষ মজুমদার পূর্বকোণকে বলেন, ‘২৪ ঘণ্টাতেই সব ধরনের পরীক্ষা হয়ে থাকে এখানে। বাইরের তুলনায় অত্যন্ত কম খরচে সব পরীক্ষা করা যায়। অনেক ক্ষেত্রে দুই থেকে তিনগুণ কম দামেও পরীক্ষা হয়ে থাকে এখানে।’

এদিকে, রেডিওলজি বিভাগের মতো প্যাথলজি বিভাগেও পরীক্ষা করা হয়ে থাকে অর্ধশতাধিকের মতো। সেখানেও বাইরের ল্যাবের তুলনায় ৭০ শতাংশ পর্যন্তও কম মূল্যে পরীক্ষা হয়ে থাকে। এরমধ্যে সিবিসি পরীক্ষা বাইরের ল্যাবে ছয় থেকে আটশ’ টাকায় করা হলেও হাসপাতালে তা মাত্র দুইশ’ টাকায় করা হয়ে থাকে। ইউরিন পরীক্ষা হাসপাতালে মাত্র ২০টাকায় করা হলেও বাইরের ল্যাবে হয়ে থাকে দুইশ’ থেকে তিনশ’ পর্যন্ত। ইলোক্ট্রোলাইট পরীক্ষা যেখানে মাত্র আড়ইশ’ টাকায় করা হয়ে থাকে, সেখানে বাইরের ল্যাবে নেয়া হয় ছয় থেকে আটশ’ টাকা।

প্যাথলজি বিভাগে কর্মরত প্যাথলজিস্ট শুভাশীষ বড়ুয়া রাজু পূর্বকোণকে বলেন, ‘প্যাথলজি বিভাগে যেসব পরীক্ষা হয়ে থাকে, তার মূল্যসহ একটি তালিকা দেয়ালে দেয়া আছে। কেউ চাইলেও বেশি টাকাও নেয়ার সুযোগ নেই। বরং বাইরের তুলনায় স্বল্পমূল্যে পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়ে থাকে এখানে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ল্যাবটিতে প্রতিদিনই গড়ে সাড়ে তিনশ’ থেকে চারশ’ পর্যন্ত রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। তবে সাধারণ মানুষ এ বিষয়ে জানতে পারলে এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলেও আশাবাদ এ প্যাথলজিস্টের।’

 

 

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট