চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রামেও স্বাস্থ্যের ১৫ ‘মালেক’

ইমাম হোসাইন রাজু

৪ অক্টোবর, ২০২০ | ৪:৩৮ অপরাহ্ণ

ঢাকার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়ি চালক মালেক’র মতো চট্টগ্রামেও সক্রিয় রয়েছে আরেক সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটটি স্বাস্থ্যখাতে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালেই দৌরাত্ম বেশি এ সিন্ডিকেটের। যাতে হাসপাতালের কর্মচারী থেকে শুরু করে জড়িত আছেন কর্মকর্তারাও। ইতোমধ্যে এ সিন্ডিকেটের প্রায় ১৫ জনের বিষয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। পাশাপাশি নজরে রেখেছেন গোয়েন্দা সংস্থাও।
সংস্থাগুলোর সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের সরকারি এ দুই হাসপাতালে সিন্ডিকেট তৈরি করে সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের শত শত কোটি টাকা নয় ছয় করে নিজেরাই লাভবান হচ্ছেন। টেন্ডারবাজি, কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদায়ন, খাদ্য সরবরাহ, যন্ত্রপাতি ক্রয়-বিক্রয়, ওষুধ ও মেডিকেল সরঞ্জাম সরবরাহসহ যাবতীয় কাজ নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন সিন্ডিকেটটি। ইতোমধ্যে এ সিন্ডিকেটের ১৫ সদস্যকে নজরে রেখেছেন সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থাও। পাশাপাশি তাদের অবৈধ উপার্জনের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। একই সাথে দুদকের গোয়েন্দা টিমও এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর খোঁজ খবর নিচ্ছেন। সংস্থা দুটোর বিশ্বস্ত সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া যায়।
সূত্র জানায়, সিন্ডিকেটের মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ১৩ কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত রয়েছে। এরমধ্যে চতুর্থ ও তৃতীয় শ্রেণীর কিছু কতিপয় কর্মচারীদের পাশাপাশি আছে কর্মকর্তা পর্যায়ের কয়েকজন। যারা টেন্ডার থেকে শুরু করে সকল কিছু নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগ বাণিজ্য, নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয়, খাদ্য সরবরাহ, ওষুধ বাণিজ্যসহ সকল কিছুই নিয়ন্ত্রণ করেন তারা। যাদের দেখভাল করে থাকেন স্বয়ং হাসপাতালের দুই কর্মকর্তা।
এ হাসপাতালের মতো এমনই দুই সদস্য রয়েছে জেনারেল হাসপাতালেও। সেখানেও ওষুধ সরবরাহ থেকে শুরু করে সকল বিষয়ে দেখভাল করে থাকেন হাসপাতালটির দুই কর্মচারী। ইতোপূর্বে এক কর্মচারীর দুর্নীতির বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে অনুসন্ধানের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে দুদক। তবে এখন পর্যন্ত এ অনুসন্ধানের কাজ শেষ করতে পারেনি সংস্থাটি। যদিও একই ব্যক্তির বিষয়ে নতুন করে নজরে নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে দুদক ও গোয়েন্দা সংস্থাও। সংস্থা দুটোর পক্ষ থেকে বলা হয়, খুব শীঘ্রই তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথা।
সূত্র জানায়, সিন্ডিকেটটি অবৈধভাবে নির্দিষ্ট কিছু ঠিকাদারের মাধ্যমে নিজেরাই সকল কিছু সরবরাহ করে থাকেন। এরমধ্যে প্রায় ১০টি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানই তাদের নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন। যারা হাসপাতাল দুটোর প্রতিটি টেন্ডার এ ১০টি ঠিকাদারকে পাইয়ে দেন। এর জন্য বড় অংকের মাসোহারাও পেয়ে থাকেন তারা। এসব অর্থ কর্মচারী থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পর্যন্ত পৌঁছায় বলেও জানায় সূত্র।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা পূর্বকোণকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই এ সিন্ডিকেটটি চট্টগ্রামের সরকারি স্বাস্থ্যখাতকে নিজেদের কব্জায় রেখে নিয়ন্ত্রণ করছেন। যার বিষয়ে দীর্ঘদিন গোয়েন্দা নজরদারি চালিয়ে আসা হচ্ছে। তবে খুব শীঘ্রই সিন্ডিকেটের সদস্যদের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে দুদক। ইতোমধ্যে এদের বেশ কয়েকজনের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। বাকিদের বিষয়েও তথ্য নেয়া হচ্ছে। যারাই দুর্নীতির সাথে যুক্ত থাকবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
দুদকের মতো গোয়েন্দা সংস্থাও এ সিন্ডিকেটের বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংস্থার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা। পূর্বকোণকে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঘটনার পর থেকে চট্টগ্রামেও কারা একই কাজে জড়িত আছে, তাদের চিহ্নিত করতে নজরে রাখা হয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালেই এ সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম বেশি। ইতোমধ্যে সকল বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট