চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

অবশেষে বাস্তবায়নের পথে অনন্যা আবাসিক ২য় প্রকল্প

ইমরান বিন ছবুর

২ অক্টোবর, ২০২০ | ১২:০৯ অপরাহ্ণ

দীর্ঘ এক যুগ পর ‘অনন্যা আবাসিক ২য় প্রকল্প’ নামে নতুন আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। সর্বশেষ ২০০৭ সালে এক হাজারের বেশি প্লট নিয়ে অনন্যা আবাসিক প্রকল্প প্রতিষ্ঠা করে সিডিএ। ‘অনন্যা আবাসিক ২য় প্রকল্প’ বাস্তবায়নের জন্য আগামী রবিবার ব্যাংক ঋণ গ্রহণের ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে চার ধারার নোটিশ প্রদান করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে সরকারি-বেসরকারি ও বিদেশি সংস্থাসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান সিডিএকে ঋণ প্রদানের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে সব চেয়ে কম সুদে ঋণ দেওয়া প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণ করা হবে। ঋণ গ্রহণের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হলে দ্রুত গতিতে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে যাবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।
সিডিএ’র সূত্র থেকে জানা যায়, চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় অনন্যা আবাসিক-২ প্রকল্পে মোট প্লট রয়েছে ১ হাজার ৯৮৬টি। এরমধ্যে ১৯টি কমার্শিয়াল এবং বাকিগুলো আবাসিক প্লট। হাটহাজারীর থানার বাথুয়া, কুয়াইশ ও শিকারপুর এলাকায় ২৭৬ একর ভূমির উপর এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। কাঠা প্রতি আবাসিক প্রকল্পের মূল্য ধরা হয়েছে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা এবং কমার্শিয়াল প্লটের মূল্য ধরা হয়েছে কাঠা প্রতি ৩০ লাখ টাকা। এই আবাসিক প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৫১১ কোটি টাকা। এরমধ্যে ৮৫০ কোটি টাকা ব্যাংক লোন, সিডিএ’র তহবিল থেকে ২০০ কোটি টাকা এবং বাকি ৪৬১ কোটি প্লট বিক্রির আয় থেকে ব্যয় করা হবে।

সিডিএ সূত্র থেকে আরো জানা যায়, আবাসিকের ২৭৬ একর এলাকার মধ্যে ৪০ শতাংশ ভূমি রাস্তা, লেক, খেলার মাঠ এবং সবুজায়নসহ নানা ধরনের পারিপার্শ্বিক কাজে ব্যবহার করা হবে। বাকি ৬০ শতাংশ ভূমির উপর ৩-৬ কাঠার আবাসিক প্লট এবং ১৯টি কমার্শিয়াল প্লট তৈরি করা হবে। আবাসিকে খেলার মাঠ, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পুলিশ বক্স, কনভেনশন সেন্টার গড়ে তোলা হবে। এছাড়াও এই আবাসিক এলাকায় লেকও তৈরি করা হবে।

সিডিএ’র প্রকল্প পরিচালক আহমদ মঈনুদ্দিন জানান, ব্যাংক ঋণের ব্যাপারে রবিবার অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যাংক এশিয়া ৮.২৫ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব দিলেও সোনালী ব্যাংক ৮ শতাংশ হারে ঋণ দিতে আগ্রহী। যে প্রতিষ্ঠানে কম সুদে ঋণ পাবো আমরা সে প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিবো। এছাড়া, আরো কয়েকটি বিদেশি সংস্থা ৬ শতাংশ এবং সাড়ে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

তিনি আরো জানান, কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণ করা হবে সেটা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড়ের ব্যাপারে চূড়ান্ত অনুমোদনের পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে, ঋণ দিতে আগ্রহী এমন সব প্রতিষ্ঠানকে ডাকা হবে। সবচেয়ে কম সুদে যে প্রতিষ্ঠান ঋণ দিতে পারবে, আমরা সে প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্ত করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাবো।

প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ঋণের ব্যাপারে নিশ্চিত না হওয়াতে আমাদের কাজ কিছুটা ধীর গতিতে এগোচ্ছে। অনুমোদন হয়ে গেলে দ্রুত গতিতে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে যাবে। ঋণের টাকা চূড়ান্ত হয়ে গেলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা ভূমির ক্ষতি পূরণের টাকা বিতরণ শুরু করতে পারবো বলে আশা করছি। ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে চার ধারার নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে ক্ষতি পূরণের অর্থ প্রদান করতে পারবো বলে আশা করছি।

জানতে চাইলে সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় পর সিডিএ আবাসিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। হাটহাজারী থানার বাথুয়া, কুয়াইশ ও শিকারপুর এলাকায় ২৭৬ একর ভূমির উপর এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। কমার্শিয়াল এবং আবাসিক মিলে মোট ১ হাজার ৯৮৬টি প্লট রয়েছে। আগামী রবিবার অনন্যা আবাসিক ২য় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংক ঋণ গ্রহণের ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন হওয়ার কথা রয়েছে। সব ধরনের আবাসিক সুবিধা নিয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি একনেক সভায় ২ হাজার ৮৩২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি অনুমোদন লাভ করে। ওই সময় নগরীর পাঁচলাইশ, কুয়াইশ ও বাথুয়া মৌজার ৪১৮ দশমিক ৭৩ একর জমির ওপর এ আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। দুই হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায়, এসব প্লটের দাম কাঠা প্রতি ৩০ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এই দামে সিডিএ’র প্লট বিক্রি হবে না, এই ভেবে প্রকল্পটি আর বাস্তবায়ন হয়নি।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট