চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

বাঁশখালী উপকূলীয় স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ: কাজ শেষ না হতেই ব্লকে ধস

প্রকল্পের মেয়াদও শেষ

বাঁশখালী উপকূলীয় স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ: কাজ শেষ না হতেই ব্লকে ধস

অনুপম কুমার অভি

২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ৫:৫৪ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপকূলীয় স্থায়ী বেড়িবাঁধের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই ধসে পড়তে শুরু করেছে বিভিন্ন স্থানে। কাদামাটির পরিবর্তে বালিমিশ্রিত মাটিতে ব্লক বসানোয় ধসে পড়ার অভিযোগ স্থানীয়দের। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা শহরে অবস্থান করেন বলে কাজের তদারকি সঠিকভাবে হয় না বলেও অভিমত তাদের। আবার বেড়িবাঁধের নির্মাণকাজে মূল ঠিকাদাররা কাজ না করে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে সাব-ঠিকাদারিতে কাজ করানোয় কাজে অনিয়ম ও ধীরগতি নেমে এসেছে বলেও অভিযোগ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজের তদারকি কাজে অনিয়ম ঠেকাতে গঠিত টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে ব্লক নির্মাণে অনিয়মের কথা উল্লেখ থাকলেও কার্যত নিম্নমানের সেই ব্লকগুলো বাঁধের ওপর বসানো হয়েছে, এমন অভিযোগও রয়েছে। সেইসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয় বখাটেদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে বলেও অভিযোগ করে স্থানীয়রা জানান, রাতের বেলা এখানে মদ, জুয়ার আসরসহ অসামাজিক কার্যকলাপের ঘটনাও ঘটে।

জানা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁশখালী উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী, সহকারী প্রকৌশলী অফিস কার্যক্রম চালিয়ে যান চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাটে অবস্থান করে। ৩ জন সার্ভেয়ার বাঁশখালীতে অবস্থান করে বিভিন্ন কাজের তদারকি করে থাকেন। কর্মকর্তারা সময়-সুযোগ বুঝে চট্টগ্রাম শহর থেকে বাঁশখালী কর্ম এলাকায় আসলেও আবার ফিরে যান। এভাবে চলছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁশখালী উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলীদ্বয়ের দাপ্তরিক কার্যক্রম।

সরেজমিনে দেখা যায়, ছনুয়া ইউনিয়নের ঠিকাদার কর্তৃক তৈরি করা সিসি ব্লকগুলো এলোমেলোভাবে পড়ে রয়েছে। খানখানাবাদ ইউনিয়নের প্রেমাশিয়া ও কদম রসুল এলাকায় নবনির্মিত বাঁধে ধসে পড়া সিসি ব্লকগুলো ধসে গিয়ে দিনদিন বড় আকারে বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। চৌধুরীঘাট এলাকায় বেড়িবাঁধের ওপর সদ্য বসানো সিসি ব্লকগুলো ধসে পড়েছে। বাঁশখালী পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস কার্যালয়ে কথা হয় নাইটগার্ড মো. জাহাঙ্গীর ও এক পিয়নের সাথে। তারা জানান, জুয়েল, মনিময় চাকমা, সালাউদ্দীন এখানে থাকেন। সাইটগুলো দেখাশুনা করেন। বড় স্যারেরা কাজ তদারকি করতে আসেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৩০ জুন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের চিফ মনিটরিং অফিসার কাজী তোফায়েল হোসেন এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, বাঁশখালী উপজেলার পোল্ডার নং ৬৪/১এ, ৬৪/১বি ও ৬৪/১সি অংশের কাজের সিসি ব্লক বুয়েটের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়। উপকূলীয় বেড়িবাঁধের নির্মাণকাজে খারাপ মানের জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা দায় এড়াতে পারেন না বলে উল্লেখ করেন প্রতিবেদনে।

এ প্রেক্ষিতে গত ২৮ জুলাই বাঁশখালী উপকূলীয় বেড়িবাঁধ কাজের নি¤œমান ও স্পেসিফিকেশন বহির্ভূত সিসি ব্লক বাতিল তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। বোর্ডের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, কাজের মান তদারকির জন্য টাস্কফোর্সের কর্মকর্তারাই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। উনারাতো জানেন কর্মকর্তারা কাজের তদারকি করছেন কিনা।

বাঁশখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু তাহের বলেন, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক ৩০ জানুয়ারি উপকূলীয় ছনুয়া বেড়িবাঁধ পরিদর্শনকালে নির্মাণকাজ জরুরি ভিত্তিতে চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ হবে বলে ঘোষণা দিলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যথাসময়ে তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। বরং কাজ শেষ করতে আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় চেয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে ধসে পড়া অংশসহ পুরো বেড়িবাঁধের কাজের মান বুঝে নেয়া হবে।

বাঁশখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রকাশন চাকমা বলেন, উপকূলীয় বেড়িবাঁধে ব্লক বসানো অল্পকিছু কাজ চলমান রয়েছে। পূর্বে যে সমস্ত কাজ হয়েছে, তা বৃষ্টিতে বিঘ্ন ঘটেছে।

 

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট