চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

সরকারি বাসায় ‘গ্যাস’ গুদাম

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ২:২৮ অপরাহ্ণ

নগরীর সদরঘাট এলাকায় সরকারি ভবনের বারান্দা ও খালি জায়গা দখল করে গ্যাস সিলিন্ডার মজুত রাখা হয়েছে। ভবনের বাসিন্দাদের অভিযোগ, গ্যাস সিলিন্ডারের কারণে ঝুঁকি ও আতঙ্কে রয়েছেন বসবাসকারীরা। এদিকে, বিস্ফোরক অধিদপ্তর জানিয়েছে, আবাসিক ভবনে গ্যাস সিলিন্ডার রাখার সুযোগ নেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, সদরঘাট থানা বিপরীতে গণপূর্ত অধিদপ্তরের সরকারি পরিত্যক্ত বাড়ি রয়েছে। দোতলা ভবনের বিভিন্ন বাসায় বসবাস করছেন সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারীদের পরিবার। ভবনের নিচতলায় দুটি কক্ষ মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের সাইনবোর্ড সাঁটানো রয়েছে। কক্ষ দুটিতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মচারী বসবাস করেন। আরেকটি মামলার আলামত রাখা হয়।
দেখা যায়, ভবনের সামনে খালি জায়গা ও ভবনের বারান্দা দখল করে অন্তত ৫০টি গ্যাস সিলিন্ডার রাখা হয়েছে। ভবনের নিচতলার পরিত্যক্ত একটি কক্ষের সামনে রাখা হয়েছে আরও ২০-২৫টি সিলিন্ডার। আরেকটি কক্ষ পরিত্যক্ত অবস্থায় তালাবদ্ধ রয়েছে।
বিস্ফোরক অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের বিস্ফোরক পরিদর্শক তোফাজ্জল আহমেদ পূর্বকোণকে বলেন, ‘আবাসিক ভবন বা আবাসিক এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডার রাখার কোনো সুযোগ নেই।’
ভবনের বাসিন্দারা জানায়, ভবনের সামনের দোকানদার অবৈধভাবে দখল করে এসব সিলিন্ডার স্তূপ করে রেখেছে। তাদের অভিযোগ, গণপূর্ত ও আবাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন এক ব্যবসায়ী। তিনি সরকারি ভবনের কক্ষ দখল করে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসা করে আসছেন। কয়েক বছর আগে প্রশাসনের চাপাচাপিতে অবৈধভাবে দখলে রাখা কক্ষটি ছেড়ে দিয়েছেন। একটি কক্ষ ছেড়ে দিলেও ভবনের উত্তর পাশে আরেকটি কক্ষ দখলে নিয়েছেন তিনি।
দখল করা ব্রাদার্স প্রকৌশলীর মালিক মো. মিয়া পূর্বকোণের কাছে ভিন্ন ভিন্ন সুরে করে বলেন। তিনি বলেন, ‘সরকারি পরিত্যক্ত ঘর ভাড়া নিয়ে বৈধভাবে ব্যবসা করছি। সরকারের কাছ থেকে গুদাম লিজ নিয়েছি।’
তবে চট্টগ্রাম আবাসন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক চিননু ওয়ান পূর্বকোণকে বলেন, ‘সরকারি বাসা সরকারি কর্মচারী ছাড়া অন্য কাউকে ভাড়া বা লিজ দেয়ার সুযোগ নেই।’
সরকারি ভবনের সামনে ও বারান্দায় গ্যাস সিলিন্ডার রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গণপূর্ত বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, সরকারি বাসাটি দখল করে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছেন। ভবনটিতে সরকারি কর্মচারীদের পরিবারের বসবাস রয়েছে। নিচের কক্ষগুলো সংস্কারের অভাবে অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কিন্তু অবৈধ দখলকারীদের কাছ থেকে তা উদ্ধার করা যাচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় দিন দিন তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
ভাড়া বা লিজ দেওয়ার বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের এক সহকারী প্রকৌশলী পূর্বকোণকে বলেন, সরকারি কর্মচারী ছাড়া বেসরকারি কোনো ব্যক্তিকে ভাড়া দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
শফিকুল আলম নামে গণপূর্ত অধিদপ্তরের এক ঠিকাদার বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এক ব্যক্তি একাধিক কক্ষ দখল করে রেখেছেন। গণপূর্ত অধিদপ্তর সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও তিনি লোকজনকে কাজ করতে দেয় না।’
তার কথার সত্যতা মিলে গ্যাসের সিলিন্ডারের মালিক মো. মিয়ার কথায়। তিনি বলেন, ‘কারা অভিযোগ করেছেন। অশ্লীল ভাষায় তিনি বলেন, তাদের নামটি বলুন। অভিযোগ না করে আমাকে বলতে পারতেন।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট