চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সিডিএ অনুমোদন দিল কীভাবে

ইফতেখারুল ইসলাম

২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ৩:১৭ অপরাহ্ণ

নগরীর দুই নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ড অফিস সংলগ্ন ১১ কেভি লাইন ঘেঁষে বিপদজনক এবং অবৈধভাবে নির্মিত তিন তলা একটি ভবনকে পাঁচতলা পর্যন্ত নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে সিডিএ। অথচ সিডিএ’র ইমারত নির্মাণ আইনানুযায়ী ভবন নির্মাণের আগেই সিডিএ থেকে নকশার অনুমোদন নিতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনের তিনতলার কাজ চলাকালীন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান স্বয়ং ওই ভবনের ঠিকাদার। তার মৃত্যুর ঘটনা ঘটে গত ২৭ জুন। মৃত্যুর ১৭ দিন পর ইমারত নির্মাণ আইনের তোয়াক্কা না করে নির্মিত ভবনটির অনুমোদন দিয়েছে সিডিএ। সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাই চায় অভিযোগকারীকে নিভৃত করতে।

অভিযোগকারী হাসান মনসুর পূর্বকোণকে বলেন, তার বাড়ি ঘেঁষে ভবনটি নির্মাণ করা হচ্ছে। যার কারণে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তার বাড়ির দেয়াল ফেটে গেছে। উপর থেকে নির্মাণ সামগ্রী পরে চাল ফুটো হয়ে গেছে। একারণে তিনি পিডিবি, পুলিশ এবং সিডিএ’তে অভিযোগ নিয়ে গেছেন। কিন্তু সবাই তাকে সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছে। পিডিবি প্রথমদিকে ব্যবস্থা নিয়ে বাড়িটি ঝুঁকিমুক্ত করার আশ্বাস দিলেও এখন বলতে তাদের কিছুই করার নেই। সিডিএ’র কাছে যেতে বলছে তারা। আসলে কোন সংস্থাই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়নি। ভবনটির তিন তলার কাজ শেষ হওয়ার বিষয়টি সিডিএ’র পরিদর্শক মো. জাফর সরেজমিন এসে দেখে গেছেন। এরপরও সিডিএ ওই ভবনের নকশার অনুমোদন দিয়েছে। অথচ ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী পূর্বে নির্মিত কোন ভবনের অনুমোদন নিতে গেলে জরিমানা দিতে হয়। তাছাড়া ইরামত নির্মাণ আইন সঠিকভাবে মানা হয়েছে কিনা তা ভালভাবে খতিয়ে দেখা হয়। কিন্তু এই ভবনের ক্ষেত্রে তারা সবকিছু দেখেশুনে অন্ধের মত অনুমোদন দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জনৈক মো. নাঈমের নির্মিত ভবনটির নির্মাণ কাজের শুরু থেকেই সিডিএ এবং পিডিবি রহস্যজনক কারণে নীরব ভুমিকা পালন করছে। সিডিএ ভবন মালিকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। অপরদিকে, পিডিবি অবৈধভাবে বিদ্যুৎ লাইন দিয়ে নির্মাণ কাজে সহযোগিতা করেছে। অথচ বিদ্যুতের সংযোগ নেয়ার সময় পিডিবি’র কাছে সিডিএ অনুমোদিত নকশার ফটোকপি কপি দেখার নিয়ম রয়েছে। সিডিএ অনুমোদিত নকশা চেয়ে গত ২৭ জুন পিডিবি’র বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ ষোলশহরের নির্বাহী প্রকৌশলী ভবন মালিকের কাছে একটি চিঠিও দেন। তিন কর্মদিবসের মধ্যে নকশার ফটোকপি জমা দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে ওই চিঠিতে বলা হয়, অন্যথায় পিডিবি’র বিধি মোতাবেক আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অথচ সেসময় ওই ভবনের নকশাও অনুমোদন হয়নি। সিডিএ’র অথরাইজড অফিসার ভবনের নকশায় অনুমোদনের স্বাক্ষর করেছেন ১৪ জুলাই। তবুও পিডিবি’র পক্ষ থেকে ওই ভবন মালিকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এমনকি সংযোগ পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন করা হয়নি। ভবনটি ঘেঁষে যাওয়া অত্যধিক ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুতের লাইনে পিবিসি পাইপের কভার দেয়া হয়েছে তা ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে পিডিবি’র চিঠিতে। আপাতদৃষ্টিতে তাতে নিরাপদ মনে হলেও বাস্তবে ঝুঁকি বিন্দুমাত্র কমেনি। তারই বলি হয়েছেন স্বয়ং ভবনের ঠিকাদার। তিন তলার কাজ করার সময় তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। এই ঘটনা থানায় গড়ালে পুলিশের পক্ষ থেকেও অভিযোগকারীকে সমঝোতার প্রস্তাব দেয়া হয়। সিডিএ’র মনোভাবও একই রকম। সব সংস্থাই চায় অভিযোগকারিকে নিভৃত করে যেকোন উপায়ে অবৈধ ভবনের নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখতে।
জানতে চাইলে সিডিএ’র পরিদর্শক মো. জাফর বলেন, তিনি অন্য এলাকার দায়িত্বে আছেন। তবে অথরাইজড অফিসারের নির্দেশে তিনি সেখানে যান। ভবন মালিককে নোটিশ দিয়েছেন। অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিয়ে সমাধান করার চেষ্টা চলছে। বিষয়টি অথরাইজড অফিসার অবগত আছেন। তিনতলার নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার পর কিভাবে নকশা অনুমোদন হল, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি অথরাইজড অফিসার বলতে পারবেন।
জানতে চাইলে সিডিএ’র অথরাইজড অফিসার-১ প্রকৌশলী মো. ইলিয়াস পূর্বকোণকে বলেন, ওই ভবন মালিককে নোটিশ দেয়া হয়েছে। চূড়ান্ত নোটিশ দেয়া হবে। অবৈধভাবে তিনতলা ভবন নির্মাণের পর কিভাবে অনুমোদন দিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কখন স্বাক্ষর হয়ে গেছে খেয়াল করিনি।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট