চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

জীবনরক্ষার বদলে জীবনঝুঁকি

ইমাম হোসাইন রাজু

২২ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ১:০২ অপরাহ্ণ

দেশে করোনার সংক্রমণ শুরুর পর মাস্ক, গ্লাভস কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজারের যেমন চাহিদা বেড়েছে, তেমনি চাহিদা বেড়েছে পাল্স অক্সিমিটারসহ ব্লাড প্রেসার কিংবা জ্বর মাপার ইমপ্যাক্ট থার্মোমিটারের। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সাথে লড়তে কমবেশি প্রতিটি ঘরেই মজুদ রয়েছে এসব মেডিকেল ইকুইপমেন্টের।
কিন্তু চাহিদা বাড়ার এমন সুযোগে নকল, নিম্মমানের এবং মানহীন মেডিকেল ইকুইপমেন্ট ছড়িয়ে দিয়েছে একটি চক্র। যা পুরোদমে ছড়িয়ে পড়েছে চট্টগ্রামে ছোট বড় প্রতিটি দোকান কিংবা ফার্মেসিতেই। বাদ পড়েনি বাসা-বাড়ি কিংবা হাসপাতালও। আর এতে জীবন রক্ষার বদলে মারাত্মক মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষদের। তেমনি এ চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকাও।
গতকাল সোমবার নগরীর তিন প্রতিষ্ঠানে অভিযানের পর এমন ভয়াবহ তথ্য ওঠে আসে। যাতে প্রাথমিক পর্যায়ে চট্টগ্রাম নগরীতে তিনটি প্রতিষ্ঠানের খোঁজও পেয়েছে সংশ্লিষ্ট সংস্থা। এ তিনটির বাইরেও এমন সামগ্রী বিক্রি ও তৈরিতে জড়িত আরও একাধিক প্রতিষ্ঠানকে নজরেও রেখেছে ওষুধ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত লাভের আশায় এসব সামগ্রী সরবরাহ করছে। মূলত কম দামে নামিদামি কোম্পানির সমমান ও চীন থেকে নিম্মমানের যন্ত্রাংশ নিয়ে এসে ছড়িয়ে দিচ্ছেন চক্রটি। যার বেশিরভাগই সাধারণ মানুষদের গছিয়ে দিচ্ছেন তারা। সাধারণ মানুষও আসল-নকল যাচাই করতে না পেরে ক্রয় করে পড়ছেন মৃত্যুর ঝুঁকিতে। তবে এসব নিম্ম ও মানহীন সামগ্রী বিক্রি এবং তৈরি ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ওষুধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষ জানায়, রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ মাপতে প্রয়োজন হয় অক্সিমিটারের। করোনাকালে মাস্ক-গ্লাভসের মতো এ মেশিনটির ব্যপকহাড়ে চাহিদা বাড়তে থাকে। সুযোগকে নিম্ম ও মানহীন এমন যন্ত্র ছড়িয়ে পড়েছে নগরীসহ চট্টগ্রামে। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ভুল তথ্যই দিয়ে থাকে। এসব যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আমদানি করা হলেও বেশিরভাগই নিম্মমানের। যার কারণে গুরুত্বপূর্ণ এসব যন্ত্রপাতির ভুল রিপোর্টে বিভ্রান্ত হচ্ছেন রোগীরা। যাতে মৃত্যুর ঝুঁকিও বাড়ছে বলে অভিমত তাদের। এরমধ্যে গতকাল সোমবার অভিযানে পাওয়া এমন মানহীন অক্সিমিটারে একই ব্যক্তির শরীরের ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। যা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন স্বয়ং ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসানের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও।
এ প্রসঙ্গে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পরিচালক হোসাইন মোহাম্মদ ইমরান পূর্বকোণকে বলেন, ‘নিম্মমানের এসব মানহীন গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রগুলো ছড়িয়ে পড়ার তথ্য ছিল। যার প্রেক্ষিতে অভিযানও পরিচালনা করা হয়। অভিযানে রীতিমতো চমকে ওঠার মতো গোঁজামিলের চিত্র উঠে আসে। যেখানে একই যন্ত্র দিয়ে একই ব্যক্তির শরীরে ভিন্ন ভিন্ন রিডিং আসতে থাকে। এতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে এই যন্ত্রগুলো ভুয়া। শুধু অক্সিমিটারই নয়, মানুষের ব্লাড প্রেসার মাপার যে যন্ত্র আছে, তাও মানহীন পাওয়া গেছে। এমন আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের খোঁজ রয়েছে। যাতে শীঘ্রই অভিযান চালানো হবে।’
এদিকে ওষুধ প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নগরীর হাজারী গলিসহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আশপাশে এমন সামগ্রী সরবরাহ করা অন্তত শতাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যাদের বেশিরভাগই এমন কাজের সাথে জড়িত। যাদের বিরুদ্ধে আগ থেকেই একই অভিযোগ ছিল। কিন্তু করোনাকালে এসেও তারা এমন অসাধু কাজে জড়িয়ে পড়ছে। তবে প্রতিষ্ঠানগুলো চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওমর ফারুক।
তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘করোনা মহামারীতেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করছে। তবে এসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের নজরে রাখা হয়েছে। যারা স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ও মানহীন মেডিকেল ডিভাইস বিক্রয় করে মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। তবে এসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করে যাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট