চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নাব্য সংকটে কাপ্তাই লেক

নিজস্ব সংবাদদাতা, কাপ্তাই

১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ৪:৩৮ অপরাহ্ণ

বর্তমানে তলদেশ ভরাট হওয়ায় নাব্যতা হারিয়েছে কাপ্তাই হ্রদ। প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে হ্রদ ঘিরে দেখা দেয় চরম সংকট। হ্রদটি সৃষ্টির ৬০ বছর পার হলেও একবারের জন্যও ড্রেজিং হয়নি। এ কারণে ক্রমশ সংকট বাড়ছে। কাপ্তাই লেকটিকে দ্রুত ড্রেজিং ও সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা না গেলে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টার রেকর্ড অনুযায়ী রুলকার্ভ (পানির পরিমাপ) অনুসারে কাপ্তাই লেকে পানি থাকার কথা ১০২.২২ ফুট মিন সি লেভেল (এমএসএল)। কিন্তু পানি রয়েছে ৯৪.২২ ফুট এমএসএল। অন্যদিকে হ্রদে পানি স্বল্পতার কারণে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে মারাত্মক আকারে উৎপাদন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে ১ নং ইউনিট হতে উৎপাদন হয়েছে ৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। হিসাবমতে, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বর্তমানে লেকে ৮ ফুট পানির স্বল্পতা রয়েছে। কাপ্তাই লেকের রুলকার্ভ (১০২.২২ ফুট এমএসএল) পর্যন্ত পানি বাড়লে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বন্ধ থাকা বাকি ৩ ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। অন্যদিকে পুনর্বাসন কাজে বন্ধ রয়েছে ২ নং ইউনিট।
মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বেলাল হোসেন বলেন, এ বছর কাপ্তাই লেকের পানি কম থাকায় মাছ আহরণের নিষেধাজ্ঞা তুলে দেন সরকার। প্রথম দিনেই কাপ্তাই উপকেন্দ্রে ৮৩ টন ৭শ কেজি মাছ ধরা পড়েছে। গতবছর যা ছিল ৪৪ টন। অন্যদিকে রাঙামাটিতে এবার জেলেদের জালে প্রথম দিনে মাছ ধরা পড়ে ৮৭ টন। গতবছর যা ছিল ৫০ টন। তিনি আরও জানান, প্রথমদিনেই বেশি মাছ জালে ধরা পড়েছে, যা সুখবর নয়। কাপ্তাই লেক ভরাট হওয়ায় মাছের বিচরণ ক্ষেত্রের সংকট বেড়েছে। ৯ মাসের মধ্যে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় এবার বেশি পরিমাণে মাছ ধরা পড়েছে। আর বাকি ৫ মাস মাছ ধরার কথা থাকলেও মাছ ধরতে না পারার আশঙ্কা করছেন তিনি।

বাঁশ ও কাঠ ব্যবসায়ীরা জানান, পানি কমায় গাছ-বাঁশ নদীপথে পরিবহন করতে বেশি খরচ হচ্ছে। ক্রয়ের চেয়ে পণ্যের পরিবহন মূল্য বাড়ছে বেশি। তাই লোকসানের আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।

বিএফডিসি’র কাপ্তাই উপকেন্দ্রের প্রধান মাসুদ আলম বলেন, গত একমাসেই কাপ্তাই উপকেন্দ্রে মাছ আহরণ খাত থেকেই ৮৭ লক্ষ ৫৭ হাজার ৩৫২ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। গত ১৯-২০ অর্থবছরে ৩২৬৭ মেট্রিক টন মাছ থেকে রাজস্ব আসে ৬ কোটি ২৩ লক্ষ ৪৬ হাজার ৫৫৭ টাকা। ১১ আগস্ট থেকে ৭৩৫.৬ মেট্রিক টন মাছে রাজস্ব আসে ১ কোটি ৩৩ লক্ষ ৩৫ হাজার ৪৫২ টাকা। তিনি আরও বলেন, ড্রেজিং না হওয়ায় হ্রদের গভীরতা হ্রাস পাচ্ছে। পানি ও পরিবেশ দূষণের কারণে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন এখন হুমকির মুখে। বিভিন্ন প্রজাতির মাছ হ্রদ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ড্রেজিং করলে বড় চ্যালেঞ্জ হলো উত্তোলনকৃত মাটি ফেলবে কোথায়। পাহাড়ের গিরিখাতে মাটি ফেলে প্ল্যান্ট ল্যান্ড করা গেলে সংকট কমতে পারে। স্থানীয়রা জানান, পানি কমতে থাকায় কাপ্তাই হ্রদে আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে নৌ চলাচলে বিঘœ ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সর্বোচ্চ উৎপাদন বাড়াতে, রাঙামাটির বিভিন্ন নদীপথে নৌ-চলাচল স্বাভাবিক ও সচল করতে সরকারকে হ্রদের পাঁচটি পয়েন্টে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। পয়েন্ট পাঁচটি হলো রাঙামাটি-কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলীর মূল খাল, রাঙামাটি-মারিশ্যার মাইনী ও কাচালং খাল, রাঙামাটি-মহালছড়ির চেঙ্গী খাল, রাঙামাটি-বরকল-ছোটহরিণা খাল ও কাপ্তাই-বিলাইছড়ির রাইখ্যং খাল।রাঙামাটি জেলা প্রশাসক এ.কে.এম মামুনুর রশিদ পূর্বকোণকে জানান, কাপ্তাই লেকের ড্রেজিং প্রকল্প নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। লেকের ফিজিবিলেটি স্টাডি করেছে তারা।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট