চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বন্দরে পচছে পণ্য!

সারোয়ার আহমদ

১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ১:০৩ অপরাহ্ণ

গত তিন মাস ধরে ডেলিভারি হয়নি এমন ১৬৭টি রেফার কন্টেইনার (রেফ্রিজারেটেড কন্টেইনার) পড়ে আছে চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে। এসব কন্টেইনারে আছে আদাসহ বিভিন্ন ধরনের ফলমূল।

সাধারণত একটি কন্টেইনার জাহাজ থেকে নামিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে রাখার ত্রিশ দিনের মধ্যে ডেলিভারি নিতে হয়। অন্যথায় বিধান অনুযায়ী সেই কন্টেইনার কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নিলামে তুলে কন্টেইনারে থাকা পণ্য বিক্রি করে। তবে এক মাসের পরিবর্তে তিন মাস হয়ে গেলেও ১৬৭ টি রেফার কন্টেইনারের পণ্য এখনো নিলামে বিক্রি হয়নি। আর রেফ্রিজারেটেড কন্টেইনারে থাকা ওইসব পচনশীল পণ্যগুলো দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় অধিকাংশ পণ্যই পচে যায়।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, গতকাল রবিবার চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে মোট কন্টেইনার ছিল ৩৩ হাজার ৭৬ টিইইউস। এর মধ্যে রেফার কন্টেইনার ছিল ৯০২ টি বক্স। আর এর মধ্যে ১৬৭ বক্সই তিন মাসের বেশি পুরোনো।
আমদানিকারক ওইসব রেফার কন্টেইনার ডেলিভারি না নেয়ায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে লক্ষাধিক টাকা গচ্ছা দিতে হয় শিপিং এজেন্টদের। এবিষয়ে শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল হক চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, রেফার কন্টেইনার চট্টগ্রাম বন্দরে নামার পর নিয়ম অনুযায়ী কন্টেইনার ডেলিভারি না নিলে পঞ্চম দিন থেকে বিল উঠা শুরু হয়। কন্টেইনারের স্টোরেন্ট ছাড়াও প্রতিদিন ৯ ডলার করে বিদ্যুৎ বিল আসে। আমদানিকারক স্টোরেন্ট চার্জ দিলেও বিদ্যুৎ বিল কখনোই দেয় না। যার কারণে এসব কন্টেইনার আমদানিকারক ডেলিভারি না নিলে বিদ্যুৎ বিলসহ যাবতীয় টাকা পরিশোধ করে নিলাম থেকে একটি কন্টেইনার খালি করে ফেরত পেতে শিপিং এজেন্টদের এক লক্ষের বেশি টাকা গচ্ছা যায়। যার কারণে রেফার কন্টেইনার শিপিং এজেন্টদের গলার কাটা হয়ে যায়।
রেফার কন্টেইনার প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডাস এসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন পূর্বকোণকে বলেন, রেফার কন্টেইনারে আমদানিকৃত পণ্যের অধিকাংশই খাদ্যদ্রব্য অর্থাৎ পচনশীল পণ্য। যত দ্রুত পণ্য খালাস হবে, ততই পণ্যে গুণগতমান ঠিক থাকবে। পণ্য খালাসে যত দেরি হবে, পণ্যের মান নিম্নমুখী হতে থাকবে। এছাড়া বন্দরের জায়গা খালি না হলে নতুন কন্টেইনারের জায়গার সংকুলান হবে না, কারণ বন্দরে রেফার কন্টেইনারের জন্য সীমিত সংখ্যক প্লাগ পয়েন্ট রয়েছে (বিদ্যুতের সংযোগ)। রেফার কন্টেইনারের পণ্য বিশেষ ভোগ্য পণ্যগুলো দ্রুত নিলাম কাজ সম্পন্ন না করার ফলে পণ্যগুলো কন্টেইনারেই পচন ধরে। এতে যেমন দেশ থেকে আমদানির বিপরীতে অর্থ চলে যায় তেমনি দেশের জনগণও খাদ্য থেকে বঞ্চিত হয়।’
পণ্য ডেলিভারি না নেওয়া প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম ফল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীর পূর্বকোণকে বলেন, ফলমূল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে যেসব কন্টেইনার এসেছে কিন্তু আমদানিকারক ডেলিভারি নেয়নি এমন ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রায় সময় বিদেশি বিক্রেতা আমাদের নিম্নমানের ফলমূল দিয়ে দেয়। যা খালাস করলেও বিক্রি করে মূল যোগানের টাকাটাই পাওয়া যাবে না। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় পণ্য ভাল এসেছে কিন্তু পণ্য খালাসের কাগজপত্রে গরমিল, ঠিক তখন ওই পণ্য খালাস করতে পারে না আমদানিকারক। যার ফলে ওই কন্টেইনারের পণ্য নিলামে চলে যায়।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট