চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

৩২০ কোটি টাকার প্রকল্পে যুক্ত হচ্ছে আরও ২৫৭ কোটি টাকা

বাড়ল আকার, ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণ

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ১২:৪৬ অপরাহ্ণ

উপকূলীয় বাঁধ সুরক্ষা প্রকল্পের আকার বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৫৭৭ কোটি টাকা। ৩২০ কোটি টাকার প্রকল্পে যুক্ত হচ্ছে আরও ২৫৭ কোটি টাকা। এর ফলে আনোয়ারা, পতেঙ্গাসহ উপকূলীয় বেড়িবাঁধ পুরোপুরি সুরক্ষা হবে বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড। সংশোধিত প্রকল্পটি এখন একনেক সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের পওর-১ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা বলেন, ‘আনোয়ারায় উপকূলীয় এলাকা রয়েছে ১৩ কিলোমিটার। সাঙ্গু নদীর মোহনা থেকে রায়পুর ইউনিয়নের পারকি পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার অংশে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। অবশিষ্ট অংশ আমাদের জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংশোধিত প্রকল্পে এখন পুরো উপকূলীয় বেড়িবাঁধ সুরক্ষা করা হবে। আনোয়ারায় আর উপকূলীয় বেড়িবাঁধের জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হবে না।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, সংশোধিত প্রকল্পে দুই দশমিক ১৫ কিলোমিটার স্থায়ী প্রতিরক্ষা ও ৫টি রেগুলেটর নির্মাণ করা হবে।
চলমান প্রকল্পে ৬৪ দশমিক ৩২৯ কিলোমিটার বাঁধ মেরামত, উচ্চতা উন্নীতকরণ করা হবে। ১১ দশমিক ৬৫২ কিলোমিটার নদীর তীর ও সি ডাইক সংরক্ষণ করা হবে। সংশোধিত প্রকল্পে তা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১৩.৮০২ কি. মি। পানি নিয়ন্ত্রণে রেগুলেটর মেরামত ও নির্মাণ ৩৫টি থেকে বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৪০ টি। ১৭.৬৯০ কিমি খাল পুনঃখনন করা হবে। পুরো প্রকল্পে ৬৭ হাজার গাছ রোপণ করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী অখিল কুমার বিশ্বাস পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমরা চাই টেকসই উন্নয়ন। চলমান প্রকল্পগুলোকে ঘিরে আগামী বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। চলমান প্রকল্পের নতুন সংযোজিত করে প্রকল্পের আকার বাড়ানো হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘দ্রুত সময়ে মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। ইতিমধ্যেই টেন্ডার প্রক্রিয়াও শেষ করা হয়েছে। একনেক সভায় অনুমোদন ও জিও অনুমতি পাওয়ার পরপরই কার্যাদেশ দেয়া হবে।’
উপকূলীয় এলাকার পোল্ডার নং ৬২ (পতেঙ্গা, পোল্ডার নং ৬৩/১এ আলোয়ারা ও পোল্ডার নং ৬৩/১বি (আনোয়ারা ও পটিয়া) বেড়িবাঁধ নির্মাণে ৩২০ কোটি ৩০ লাখ টাকার প্রকল্প চলমান রয়েছে। ২০১৬ সালের মে মাস থেকে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো পুনর্বাসনে প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে।
গত ১০ জুন পানি উন্নয়ন বোর্ডের পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সুপারিশের ভিত্তিতে ডিপিপি পুনর্গঠন করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো পুনর্বাসনের মাধ্যমে বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস থেকে প্রকল্প এলাকাকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ১৯৬০ সালের দিকে উপকূলীয় বাঁধ প্রকল্পের আওতায় পোল্ডার নং-৬২ (পতেঙ্গা) এবং পোল্ডার নং-৬৩/১এ (আনোয়ারা) বাস্তবায়িত হয়। এছাড়াও ১৯৯০ থেকে ১৯৯৪ সালেও বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়।
১৯৯১ সালের প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়, ২০০৭ সালের সিডর, ২০০৯ সালের আইলা এবং পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে সংঘঠিত ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপকভাবে ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সালে বাঁধের সংস্কার করা হয়। তারপরও প্রতি বছর ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ার-ভাটার কারণে প্রকল্পে ব্যাপক ক্ষতি হয়। সমুদ্রের ঢেউয়ের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায় প্রকল্পটি। জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে আনোয়ারার উপকূলীয় মানুষ।

প্রকল্পের শুরু থেকে কাজের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল এলাকাবাসী। এ অভিযোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছে এলাকার একাধিক সামাজিক প্রতিষ্ঠান। সাম্প্রতিক সময়েও এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছেন। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বেড়িবাঁধের নির্মাণ কাজ করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

অভিযোগ রয়েছে, ব্লক নির্মাণে শিলক বা বেতাগীর বালু ব্যবহারের নিয়ম রয়েছে। কিন্তু আনোয়ারা প্রকল্পে সাঙ্গু নদীর লবণমিশ্রিত বালু দিয়ে ব্লক বানানো হয়েছে। বাঁধ উচুকরণের ক্ষেত্রে ঢালের (স্লোপ) ২০ থেকে ২৫ ফিট দূর থেকে মাটি কাটার কথা থাকলেও ১০ থেকে ১৫ ফিট দূরত্ব থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। যারফলে রায়পুর ইউনিয়নের পরুয়া পাড়া, গলা কাটার ঘাট, বার আউলিয়া ও ফকির হাট অংশে বাঁধ দেবে গেছে। এতে প্রকল্পের সুফল নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

রায়পুর ইউনিয়নের পরুয়া পাড়া, গলাকাটার ঘাট, বাইগ্গার ঘাট, বার আউলিয়া, ফকির হাট ও সরেঙ্গা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার অধিকাংশ বেড়িবাঁধ দেবে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, পানির উচ্চতা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পুরো এলাকায় ব্লক স্থাপন করা না হলে সুফল পাওয়া যাবে না। তাই কারিগরি কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে বেড়িবাঁধের পুরো অংশ এখন ব্লক বসানো হবে। ৩২০ কোটি টাকার বরাদ্দ সংশোধিত করে এখন ৫৭৭ দশমিক ২৪ কোটি টাকা করা জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা বলেন, ‘চলমান প্রকল্পের আকার বাড়িয়ে সংশোধিত করা হয়েছে। না হলে প্রকল্পের যাচাই-বাছাই করে ডিপিপি তৈরি করতে দুই বছর সময়ক্ষেপণ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল।’ তিনি বলেন, ‘এখন প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। কম সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট