চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

অক্সিজেনের মিনি কারখানা হয়ে উঠছে ছাদ

কাঞ্চননগরে আইনজীবী-শিক্ষক দম্পতির দৃষ্টিনন্দন ছাদবাগান

মো. দেলোয়ার হোসেন, চন্দনাইশ

১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ৩:১৯ অপরাহ্ণ

শৌখিন মানুষেরা তাদের ঘরবাড়িতে সবুজকে ধরে রাখার জন্য একান্ত নিজস্ব ভাবনা আর প্রচেষ্টায় আপন আপন বাড়ির ছাদে তৈরি করছে ছাদবাগান। সময়ের সাথে এ বাগান এখন আর শৌখিনতায় আটকে নেই। নিরাপদ ফল দিয়ে পারিবারিক পুষ্টি ও অক্সিজেন চাহিদাপূরণ, পারিবারিক বিনোদন, অবসর কাটানোর উপলক্ষে পরিণত হয়েছে ছাদবাগান।
পরিবেশ ও প্রকৃতিকে অন্যরূপে সাজিয়েছেন চন্দনাইশ কাঞ্চননগরের এক দম্পতি। তাদের মধ্যে স্বামী পেশায় আইনজীবী, স্ত্রী স্কুল শিক্ষিকা। শখের বশে নিজ বাড়ির ছাদে গড়ে তুলেছেন ফলদ ও ফুলের বাগান। দেশি-বিদেশি ফল ও ফুলের সমাহার তাদের এ বাগানে। কাঞ্চননগরের মরহুম মুক্তিযোদ্ধা মনছফ আলী মাস্টারের কনিষ্ঠ সন্তান সিনিয়র আইনজীবী শিহাব উদ্দিন মাহামুদ রতন ও তার সহধর্মিণী নাসিরাবাদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহামুদা আকতার শিউলি শখের বশে ২০১৭ সালের শেষদিকে তাদের গ্রামের বাড়ির ছাদে গড়ে তুলেন নয়নাভিরাম ছাদবাগান। যেখানে শোভা পাচ্ছে ৮৪ ধরনের জবা, ১৪ ধরনের গোলাপ, রক্ত কবরীসহ ৪ ধরনের কবরী, ৫ ধরনের কলারূপি, ৩ ধরনের ফলপদ্ম, ৫ ধরনের জুঁই, ৩ ধরনের বেলি, ৩ ধরনের গন্ধরাজ, ১৩ ধরনের অতুলাকা, ১৬ ধরনের ইনডোরেন, ৩ ধরনের কাটাগোলাপ, ৮ ধরনের কাঁটামুকুট, ২ ধরনের রোজক্যাটাস, ৫ ধরনের কাঞ্চন, ৪ ধরনের টাইম ফুল, ৩ ধরনের টগর, ৩ ধরনের বাগান বিলাস, ৬ ধরনের অপরাজিতা, ১৩ ধরনের অর্কিড, ৪ ধরনের রোজালিয়া, ৫ ধরনের অ্যানমন্ডা, ২ ধরনের জল গোলাপ, কামিনী, বেলি, হাসনাহেনা, মাল্টি কোনবসার, রূপসেলিয়া, শিউলি ফুল, লাখচাঁপা, স্বর্ণচাঁপা, দোলনচাঁপা, হেলজুলিয়া, সন্ধ্যামালতি, গন্ধরাজ, পাউডারপাম্প, ফার্ন, চায়নিজ ডাইনেট, আদিকাল প্রিন্সেস, ব্যাচেলর বাউন, এটিনিয়াম, জাতরূপা, ক্যানাসুর, কেশন, লতা পারুল, নাইট কুইন, নীলমণি লতা, তুলসী, ভেসিল, মেক্সিকা ইউট, রেলনিশি, ১০ ধরনের বিদেশি লিলি, তারা লিলি, ম্যাগপাই, ডুবেজ, মধু মঞ্জুষা, বন কামিনী, রেনি, ল্যাভেন্ডার, বিল্ডিং হার্ট (দিল বাহার), শাপলা, রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়াসহ ৩ শতাধিক দেশি-বিদেশি ফুলের সমাহার ঘটেছে তাদের শখের বাগানে। ছাদে হয় না এমন ফুলও চাষ করে ফুটিয়েছেন এ বাগান প্রিয় দম্পতি। তাছাড়া এ দম্পতির ফলদ বাগানে শোভা পাচ্ছে ৩ ধরনের কমলা (চায়না, দেশি ও ভারতীয়), আ¤্রপালিসহ ৪ ধরনের আম, জাম্বুরা, লিচু, আমড়া, আঙুর, ২ ধরনের পেয়ারা, চেরিফল, মাল্টা, মিষ্টি লেবু, এলাচি লেবু, আপেল কুল, বাউল কুল, ডালিম, কামরাঙ্গা, আমলকি, পেঁপে, শরীফা, ড্রাগনফল, কাঁঠাল, আতা, কদবেল, মিষ্টি তেঁতুল, আনারস, জলপাই, সফেদা, বেল, কামকোয়েট, আলু বোখারা, চেরিফলসহ নানান জাতের বাহারি ফলের গাছ। তাদের ছাদবাগানে লাগানো হয়েছে সবজি ও ঔষধি গাছ। সবজির মধ্যে রয়েছে টমেটো, কাঁচামরিচ, চিচিঙ্গা, মিষ্টিকুমড়া, তিত করলা, কাঁকরোল, লাউ, লালশাক, পুঁইশাকসহ নানারকমের শাক-সবজি। এ দম্পতি বাগান পরিচর্যার জন্য একজন মালি রাখা হয়েছে। দু’জনেই চট্টগ্রাম মহানগরে বসবাস করলেও ছুটির অবসরে ছুটে আসেন গ্রামের বাড়িতে বাগানের টানে। যতক্ষণ বাড়িতে থাকেন বাগান পরিচর্যায় সময় কাটে এ দম্পতির।
শিক্ষক শিউলি জানান, অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন জাতের ফলদ ও ফুলের চারা সংগ্রহের পাশাপাশি খাগড়াছড়ি, হাটহাজারী, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন বন্ধুমহল গ্রুপের সহযোগিতায়, বিনিময়, ফ্রি চারা নিয়ে এ বাগান সাজিয়েছেন। এ বাগান প্রস্তুতে যারা সহযোগিতা করেছেন, তাদের মধ্যে বাগান পরিবার, অপরাজিতা, বৃক্ষকলা, সবুজ কথন উল্লেখযোগ্য। এ বাগানে প্রভাতে বিভিন্ন পাখ-পাখালির কলতানে মুখরিত হয়ে উঠে বাগান। প্রভাতের রেশ কাটতে না কাটতে আসতে শুরু করে রঙ-বেরঙের প্রজাপতি। এ প্রজাপতি বাগানের বিভিন্ন ফুল ফলের পরাগায়ন ঘটায়। সাঁঝের বেলায় জোনাকিরা আলো জ্বালিয়ে খেলা করে। যা দেখে যেকোন মানুষের মন আনন্দে ভরে উঠে।পরিবেশবিদদের মতে, গ্রামে-গঞ্জে খালি জায়গায় ফলদ, বনজ ও ফুলের বাগান করার মধ্য দিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণের পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অক্সিজেন বাড়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ ধরনের একেকটি ছাদ যেন অক্সিজেনের একেকটি মিনি কারখানায় পরিণত হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা স্মৃতি রাণী সরকার বলেন, এ দম্পতির মতো প্রতিটি পরিবারে যেন তাদের সাধ ও সাধ্যের মধ্যে খালি জায়গা বা বাড়ির ছাদে বাগান গড়ে তোলেন। তাহলে পরিবেশ সংরক্ষণের পাশাপাশি সহায়ক হিসেবে নির্মল ও বিশুদ্ধ বায়ু পাবে প্রাণিজগৎ। এ দম্পতির দেখাদেখি অনেকেই তাদের বাড়ির আঙিনা ও বাড়ির ছাদে বাগান করতে এগিয়ে আসছেন। তিনি এবং তার সহকর্মীরা এ সকল বাগান করতে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন বলে জানান।
পূর্বকোণ/এএ

*

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট