চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

ঝুঁকি নিয়ে বাড়ির পথে

আল-আমিন সিকদার

৪ জুন, ২০১৯ | ২:৪৭ পূর্বাহ্ণ

শেষ সময়ে এসে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে বসে বাড়ি ফিরেছে মানুষ। পবিত্র ঈদ উল ফিতর উপলক্ষে গত এক সপ্তাহ ধরে পরিবার-পরিজনের সাথে ধীরে ধীরে বাড়ি পথে পাড়ি জমিয়েছে মানুষ। তবে শেষ সময়ে এসে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে কয়েকগুণ। এর আগে গতকয়েকদিন ঈদ উপলক্ষে চট্টগ্রাম ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোতে যাত্রীরা সিটে ও দাঁড়িয়ে গেলেও গতকাল সোমবার শেষ দিনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাদে বসে বাড়ি ফিরেছে মানুষ। এতে করে যে কোন সময় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে। গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদ উপলক্ষে চাঁদপুর রুটে রেলওয়ের স্পেশাল ট্রেন সার্ভিস বিকেল ৩টার দিকে যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রাম ছেড়ে যায়। এরপর বিকেল ৫টার দিকে চাঁদপুরগামী মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনটি আসে ৫ নম্বর প্লাট ফর্মে। মেঘনা প্লাট ফর্মে দাঁড়ানোর সাথে সাথে মাত্র দুই মিনিটের মধ্যে ভরে যায় ট্রেনটির বগিগুলো। ভিতরে ছিল না তিল রাখার জায়গা। যার কারণে টিকিট ও সিট থাকার পরেও বগিতে উঠতে পারেনি বহু যাত্রী। বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে করে পাড়ি জমাতে হয় যাত্রীদের।
অন্যদিকে যাত্রীদের এমন ভিড়ের মধ্যেও ট্রেনটির শোভন চেয়ারের যে বগি রয়েছে সেগুলো ছিলো খালি। ভিতরে থাকা চেয়ারগুলোর তুলনায় যাত্রীর সংখ্যা ছিল এক তৃতীয়াংশ। যার কারণ ছিলো বগিটির দুই পাশের দরজায় ছিলো তালা মারা। কিন্তু বগিতে তালা মেরে যারা চাবি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো তাদের দেখা যায় যাত্রীদের কাছে গিয়ে বসিয়ে দেয়ার অফার দিতে। কিন্তু সিট ও টিকিট থাকার পরেও ভিড়ের কারণে নির্দিষ্ট বগিতে উঠতে না পারা যাত্রীরা এই বগিতে উঠতে চাইলেও তাদের উঠতে দেইনি আনসার সদস্যরা। তবে যাত্রীদের টাকা দিলে সিটও ব্যবস্থা করে দেবে বলে জানান কলিম নামে এক আনসার সদস্য। বিষয়টি নজরে আসলে আনসার সদস্য কলিমের কাছে গিয়ে দুটি টিকিট লাগবে বলে জানায় প্রতিবেদক। এসময় আনসার সদস্য কলিম বলে, দুইটা সিট আছে। প্রতিটা সিট ৬০০ টাকা করে লাগবে। এর থেকে ৬ পয়সা কম হলেও হবে না। তখন প্রতিবেদক বলে দুইটা টিকিট দেন। কোন টিকিট লাগবে না। আপনাদের বসিয়ে দেবো। কেউ তুলবে না। এটা আমাদের রিজার্ভ করা ভিআইপি বগি। এখানে টিটিই’র বাপও আসবে না। পরে প্রতিবেদকের মোবাইলে এ ঘটনার ভিডিও ধারণ হচ্ছে বুঝতে পেরে সটকে পরে এ আনসার সদস্য।
অন্যদিকে ক্যান্টিন ও নিরাপত্তা বাহিনীর গার্ডরুমেও ছিল বিনা টিকিটের যাত্রীদের ভিড়। যারা সকলেই ক্যান্টিনের ম্যানেজার ও নিরাপত্তায় থাকা সদস্যদের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে জায়গা পেয়েছেন। তবে যাদের রেল স্টেশনে দায়িত্ব পালন করা আনসার সদস্য ও নিরাপত্তা বাহিনীর এ সিট ব্যবসার কথা জানা ছিলো না তারা ছাদের উপর বসে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি জমিয়েছে বাড়ির পথে। ঝুঁকি নিতে দেখা যায় নারী-পরুষ ও শিশুদেরও।
এদিকে ট্রেনের ছাদে থাকা যাত্রীদের বার বার নেমে যাওয়ার জন্য মাইকিং করতে দেখা যায় রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের। তবে একাধিকবার ঘোষণা করেও কোনভাবেই নামানো যায়নি তাদের। তবে ট্রেন ছাড়ার শেষ মুহূর্তে পুরুষ যাত্রী ছাদে উঠলেও নারী ও শিশু যাত্রীদের উঠতে বাঁধা দিতে দেখা গেছে নিরাপত্তা কর্মীদের।
গতকাল সোমবার যারা বাড়ি ফিরেছেন তারা বেশির ভাগই পোশাক কারখানার শ্রমিক। এতদিন অফিস ছুটি না হওয়ার কারণে বাড়ি যেতে পারেনি তারা। যার কারণে গতকাল দুপুরে অফিস ছুটি হওয়ার পর থেকে বিকেল দুইটা ত্রিশ থেকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে বাড়তে থাকে বাড়িফেরা যাত্রীদের ভিড়।
জানতে চাইলে রাকিব সরদার নামের এক যাত্রী বলেন, এতদিন অফিস খোলা ছিল। যার কারণে ইচ্ছা থাকলেও আগে বাড়িতে যেতে পারেনি। যার কারণে এখন ঝুঁকি নিয়ে হলেও বাড়িতে যাচ্ছি। বাড়িতে তো যেতে হবে, এখন না গেলে আবার কখন যাবো তার কোন ঠিক নাই। যার কারণে কষ্ঠ হলেও প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটাতে এখনই চলে যাচ্ছি। তবে টিকিট ও সিট থাকার পরেও ছাদে উঠতে হয়েছে আমাকে। কেননা যে বগিতে আমার সিট সে বগিতে প্রবেশের কোনো উপায় ছিল না।
ট্রেনের ছাদে উঠা রোজিনা আকতার নামের এক পোশাক কর্মী জানান, আমরা চাইলেও যেতে পারি না যে কোন সময়। ফ্যাক্টরি আজকে (গতকাল) ছুটি হয়েছে। বাসার সবাই আগে থেকেই কাপড় চোপড় নিয়ে রেডি ছিল। আমি ফ্যাক্টরি ছুটির পরপরই বাসায় গিয়ে সবাইকে নিয়ে চলে আসি স্টেশনে। আজকে যদি যেতে না পারি তাহলে কাল হয় তো আরো বেশি ভিড় হবে। তখন যদি যেতে না পারি, তাহলে পরিবারের সাথে তো ঈদ করাই হবে না। তাই ঝুঁকি আর কষ্ট যেটা বলেন, বাড়ি তো যেতেই হবে।
চট্টগ্রাাম রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বলেন, এবার চট্টগ্রাম থেকে যাত্রীরা সুষ্ঠ ও সুন্দরভাবে ট্রেনে করে চট্টগ্রাম ছেড়েছেন। কোন সিডিউল বিপর্যয়ও ছিল না। যার কারণে যাত্রীরা এবার স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পেরেছে। তবে যাত্রীদের ভিড়ের কারণে ট্রেনের ছাদে করে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রা করেছেন শতাধিক যাত্রী।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট