চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সীতাকু-ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক যানজট মুক্ত

সকাল-দুপুর ফাঁকা বিকালে ঈদ যাত্রীদের ভিড় বাস স্ট্যান্ডে

সৌমিত্র চক্রবর্তী হ সীতাকু-

৪ জুন, ২০১৯ | ২:৩৭ পূর্বাহ্ণ

ঈদের ছুটি শুরু হয়ে গেছে। মাত্র একদিন পর ঈদ। অথচ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানবাহনে যাত্রী সংকট! অবিশ্বাস্য হলেও গতকাল সোমবার দুপুর পর্যন্ত এ চিত্রই দেখা গেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার উপজেলা সীতাকু-ের সর্বত্র। তবে বিকাল থেকে এ চিত্র কিছুটা বদলে গিয়ে প্রতিটি বাস স্ট্যান্ডেই কমবেশি যাত্রীদের ভিড় পরিলক্ষিত হয়েছে। কিন্তু সে ভিড় মাত্রাতিরিক্ত না হওয়ায় দুরপাল্লার যাত্রীদের তেমন কোন দুর্ভোগে পড়তে হয়নি। অন্যদিকে মহাসড়কে যান চলাচলও ছিলো স্বাভাবিক। ফলে স্বস্তি নিয়েই গন্তব্যে গেছেন নাড়ির টানে ঘরে ফেরা মানুষ।
সরেজমিনে গতকাল সীতাকু-ের ফৌজদারহাট থেকে পৌরসদর পর্যন্ত প্রায় ৪০ কি.মি. এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও এর বাস স্ট্যান্ডগুলো ঘুরে দেখা গেছে, এদিন সকাল থেকে বিকাল আনুমানিক ৩টা পর্যন্ত সড়ক ছিলো একেবারেই ফাঁকা। মাঝে মধ্যে কিছু কিছু যানবাহন দেখা গেলেও তার সংখ্যা নগণ্য বললেই চলে। তবে এসময় পর্যন্ত একইভাবে যাত্রীর সংখ্যাও কম হওয়ায় গাড়িতে অতিরিক্ত ভিড় ছিলো না। ফলে ঘরমুখো যাত্রীরা স্বস্তি নিয়েই বাড়ি ফিরেছেন।
পরিদর্শনকালে সীতাকু- সদর বাস স্ট্যান্ডে দূরপাল্লার বেশ কয়েকজন যাত্রীর সাথে কথা বললে তারা সকলেই জানান বাসের টিকিট পেতে কোন কস্ট হয়নি। সীতাকু- সদর থেকে যশোরগামী যাত্রী মো. সোলেমান বলেন, গত রবিবার রাতে এস আলমের টিকিট কেটে এখন বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। টিকিট পেতে কোন অসুবিধা হয়নি। ভাড়াও ছিলো স্বাভাবিক। দুপুর ২টায় উপজেলার ভাটিয়ারী বাজারে ঢাকাগামী বাসের জন্য অপেক্ষমান যাত্রী বেসরকারি চাকুরিজীবি রাজিয়া সুলতানা বলেন, এবার গাড়িতে কোন চাপ দেখছি না। এখনো পর্যন্ত সড়কে কোন যানজটেরও খবর পাইনি। এতেই স্বস্তি লাগছে। এখন নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারলেই শান্তি। এবারের মত সড়ক এত ফাঁকা দেখা যায়নি কখনো। সীতাকু-ের ফৌজদারহাট জলিলস্থ মা ফাতেমা সিএনজি ফিলিং স্টেশনের স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরী পর্যন্ত ঘুরে দেখলাম কোথাও কোন যানজট বা গাড়ির চাপ নেই। পথ-ঘাট, বাস স্ট্যান্ডগুলো দেখেই মনেই হচ্ছে না যে ঈদের ছুটি পড়েছে। এদিকে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মহাসড়কে ভিড় না থাকলেও বিকাল ৩টার পর থেকে ক্রমশ নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে বাস স্ট্যান্ডগুলোতে। এসময় প্রত্যেকটি বাজারের বাস স্ট্যান্ডগুলোতে অনেক যাত্রী দেখা গেছে। কিন্তু যাত্রীদের ভিড় বাড়লেও তা অতিরিক্ত নয় বলে মন্তব্য করেছেন টিকিট কাউন্টারগুলোতে কর্মরত ও যাত্রীরা। এদিন বিকাল ৫টার দিকে ভাটিয়ারী বাজারে গাড়ির জন্য অপেক্ষমান রংপুরগামী এক যাত্রী শিপব্রেকিং ইয়ার্ডের শ্রমিক মো. ইউনুছ মিয়া বলেন, আসলে আমি গত সপ্তাহে আগে টিকিট কেটেছিলাম। ভেবেছিলাম বাসে প্রচন্ড ভিড় হবে। তাই হয়ত যেতে অসুবিধায় পড়তে হবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে ভিড় তেমন বেশি না। এ ধরনের ভিড় প্রতি বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকেই দেখা যায়। ঈদের ছুটির অন্যান্য বছরের তুলনায় এ ভিড় একেবারেই নগণ্য বলে মনে করেন তিনি। তার কথা যে মিথ্যা নয় তা বাসগুলো দেখেই বোঝা যায়। কারণ, প্রত্যেকটি বাস ছিলো যাত্রী পরিপূর্ণ। কিন্তু কোন বাসেই সিটের চেয়েও অতিরিক্ত বা ছাদে তেমন কোন যাত্রী দেখা যায়নি। এদিকে ঈদের ছুটিতে দূরপাল্লার যাত্রীদের সমস্যা না হলেও এদিন লোকাল যাত্রীদের কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে দেখা গেছে। চট্টগ্রামের অলংকার থেকে সীতাকু- সদরে আসা মধ্যম মহাদেবপুরের যাত্রী মো.আলাউদ্দিন বলেন, আমরা অন্য সময়ে বিভিন্ন ডিস্ট্রিক বাসে সীতাকু-ে চলে আসি। লোকাল ৮নং সার্ভিস বা অন্য বাসগুলো খুবই ধীরে ধীরে দীর্ঘ সময়ে এসে পৌঁছায় বলে সেগুলোতে উঠতে চাই না। কিন্তু আজ দূরপাল্লার বাসগুলো যাত্রী পরিপূর্ণ ছিলো বলে সীতাকু-ের বা এর চেয়ে কাছের গন্তব্যের যাত্রী নেয়নি। ফলে সেই ৮নং সার্ভিসের বাসে অতিরিক্ত ভাড়া ৫০-৬০ টাকা করে দিয়ে আসতে হয়েছে। এরপরও লোকাল বাসে যাত্রীর চাপ ছিলো বেশি।
সীতাকু-ের ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রফিক আহমেদ মজুমদার বলেন, আসলে ঈদ যাত্রীদের বেশিরভাগই এবার একটু আগে ভাগে বাড়ি ফিরে গেছেন। ফলে চাপ কমে গেছে। এখন যারা বাড়ি ফিরছেন তাদেরকে বাড়িতে কোন ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে না। তবুও আমরা মহাসড়কে সার্বক্ষনিক অবস্থান করছি। বারআউলিয়া হাইওয়ে থানার ওসি মো. আহসান হাবীব বলেন, আমরা বেশ কয়েকদিন ধরে ফিটনেস বিহীন ও কাগজপত্র বিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি। এই কারণে সড়কে এ ধরণের গাড়ির সংখ্যা কমে গেছে। তারউপর ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন আগে থেকেই যাত্রীরা বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। এ কারণে সড়কে গাড়ি ও যাত্রী দুটোই তুলনামুলক কম। সোমবার দুপুর পর্যন্ত তেমন যাত্রীও ছিলো না। তবে বিকালের দিকে যাত্রী ও গাড়ির সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও কোথাও যানজট সৃষ্টি হয়নি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট