চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ঋণ পাননি একজন প্রবাসীও

মোহাম্মদ আলী

৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ১:৩৭ অপরাহ্ণ

শর্তের বেড়াজালে আটকে গেছে দেশে ফেরত আসা অভিবাসী কর্মীদের সরকারি ঋণ সহায়তা। এ কারণে গত দুই মাসে চট্টগ্রামের একজনও ঋণ নিতে পারেননি। তাতে হতাশ হয়ে পড়েছেন দেশে আসা প্রবাসীরা।

করোনা মহামারী শুরু হওয়ার আগে দেশে ফেরত আসা ক্ষতিগ্রস্ত অভিবাসী কর্মীদের আত্ম-কর্মসংস্থানের জন্য ঋণ সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ঋণ নিয়ে বিদেশফেরত প্রবাসীরা কৃষি, মৎস্য, পোল্ট্রি, গবাদিপশু মোটাতাজাকরণ, দুগ্ধ খামারসহ বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করতে পারবে। এজন্য জামানত ছাড়া দুই লাখ টাকা এবং জামানত দিয়ে সর্বনিম্ন ২ লাখ থেকে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা ঋণ সহায়তা নিতে পারবেন। এ জন্য ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সারাদেশের জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে ১৫ জুলাই থেকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে এ ঋণ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের আরোপিত দুইটি শর্তের কারণে এখনো পর্যন্ত বিদেশ ফেরত একজন প্রবাসীও ঋণ নিতে পারেনি। আরোপিত শর্ত দুইটি হচ্ছে- চলতি বছরের পহেলা মার্চ থেকে দেশে আসা অভিবাসী কর্মী হতে হবে এবং যারা ঋণ নিবেন তারা এটি শোধ না হওয়া পর্যন্ত পুনরায় বিদেশ যেতে পারবেন না, এমন অঙ্গীকারনামা প্রদান করতে হবে। ফলে এ দুইটি শর্তের কারণে মার্চের আগে দেশে আসা প্রবাসীরা এ ঋণ সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। একই সাথে যাদের পুনরায় বিদেশ যাওয়ার সুযোগ রয়েছে তারাও ঋণ সহায়তা নিতে পারছেন না।
বিদেশ ফেরত প্রবাসী মো. সেকান্দর মিয়া চৌধুরী দৈনিক পূর্বকোণকে অভিযোগ করে বলেন, ‘চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি কুয়েত থেকে দেশে আসি। এক মাস ছুটি কাটিয়ে আমার ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে আমি আর ফিরে যেতে পারিনি। এ অনিশ্চয়তার মধ্যে সরকারের ঋণ সহায়তার আগ্রহ থাকলেও দুইটি শর্তের কারণে আমি ঋণ নিতে পারছি না। এ ক্ষেত্রে সরকারের শর্ত শিথিল করা দরকার।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রামে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ৪টি শাখা রয়েছে। মহানগরীর একটি ছাড়াও অপর তিনটি হচ্ছে হাটহাজারী, সন্দ্বীপ ও রাউজান উপজেলায়।

জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার ম্যানেজার সুমন কান্তি দেব, হাটহাজারী শাখার ম্যানেজার মোছাম্মৎ শারমিন ফেরদৌস খানম এবং সন্দ্বীপ শাখার ম্যানেজার মোহাম্মদ রিয়াদুর রহমান দৈনিক পূর্বকোণকে অভিন্ন বক্তব্য প্রদান করেছেন। এ তিন শাখা ম্যানেজার বলেন, ‘১৫ জুলাই থেকে অভিবাসীদের ঋণ সহায়তা কার্যক্রম শুরু হলেও গত দুই মাসে একজনকেও ঋণ দেয়া যায়নি। ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে দুইটি শর্তকে নিজেদের জন্য বড় সমস্যা উল্লেখ করে অভিবাসীরা ঋণ নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।’ এ বিষয়টি ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অভিহিত করেছেন বলে জানান- তিন শাখা ম্যানেজার।

এ প্রসঙ্গে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস, ‘চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল আলম মজুমদার দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে বিদেশ ফেরত অভিবাসীদের আমাদের অফিস থেকে প্রত্যায়নপত্র নিতে হবে। কিন্তু গত দুই মাসে মাত্র ২২ জন অভিবাসী আমাদের অফিস থেকে প্রত্যায়নপত্র নিয়েছেন।’

মোহাম্মদ জহিরুল আলম মজুমদার বলেন, ‘করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত বিদেশফেরত অভিবাসীদের আর্থিক সহায়তা করতে এ ঋণ সহায়তা প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এ জন্য ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে সারাদেশের জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এছাড়াও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ খাতে আরো ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের নির্দেশনা দিয়েছেন। এজন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চলছে। কিন্ত আমার যতটুকু মনে হয়েছে- দুইটি শর্তের কারণে অভিবাসীরা ঋণ নিতে কম আগ্রহ দেখাচ্ছে। শর্ত দুইটি হচ্ছে- চলতি বছরের পহেলা মার্চ থেকে দেশে আসা অভিবাসী কর্মী হতে হবে এবং যারা ঋণ নিবে তারা এটি শোধ না হওয়া পর্যন্ত পুনরায় বিদেশ যেতে পারবে না, – এমন অঙ্গীকারনামা প্রদান করতে হবে। তাই ঋণ নিতে আগ্রহ কম মনে হচ্ছে। তাছাড়া বছরের শেষে এবং শুরুতে প্রবাসীরা ছুটি কাটাতে দেশে আসে বেশি। এ ক্ষেত্রে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর এবং ২০২০ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে যারা দেশে এসেছে তাদের সংখ্যা অনেক। শর্তের কারণে তারা ঋণ নিতে পারছে না।’
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট