চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

চমেকে আয় বাড়াতে টেন্ডার ছাড়া ইজারা !

ইমাম হোসাইন রাজু

৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ১:০৭ অপরাহ্ণ

প্রবাদ আছে ‘বসতে দিলে শুতেও চায়’। এমনই অবস্থা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের স্টাফ কো-অপারেটিভ সোসাইটির (মেডিকপস)। নিজস্ব অফিস না থাকায় হাসপাতালের পূর্ব গেটের পশ্চিম পাশে এক টুকরো জায়গা দেয়া হয় এ সমিতিকে। কিন্তু সেখানে অফিসের বদলে রীতিমতো গড়ে তুলেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। শুধু তাই নয়, ছোট ছোট ত্রিপল দিয়ে আশপাশেও দোকানের নামে জায়গা দখলে নিচ্ছে তারা। ইতোমধ্যে বিনা টেন্ডারেই ছাদের ওপর ইজারা দিয়ে খুলে বসেছে রেস্তোরাঁও। অফিসের পাশেই ইজারা দেয়া হয়েছে একটি ফলের দোকান। আর সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দাবি, আয় বাড়াতেই টেন্ডার ছাড়া ইজারা দেয়া হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালে কিছু কর্মচারী ও সমিতির নেতারা অবৈধ আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে এমন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যা পরবর্তীতে দখলে নিয়ে বিনা টেন্ডারে ইজারা দিয়ে নিচ্ছেন আর্থিক সুবিধাও। এর আগেও এমন কর্মকাণ্ডের কারণে হাসপাতালের সাবেক পরিচালক এসব দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু পুনরায় একই সিন্ডিকেট তা চালু করেছে। তবে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন বর্তমান কর্তৃপক্ষও।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সমবায় সমিতির ব্যানারে ‘মেডিকপস সুপার শপ’ নামের দোকানটিও বৈধ কোন ইজারা দেয়নি বর্তমান কমিটি। আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে কমিটির সভাপতি নিজেই এ দোকানে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। সমিতির কার্যালয়ের পাশেই আগ থেকে ইজারা দেয়া হয় একটি ফলের দোকান। এরমধ্যে গেল বছরের মাঝামাঝিতে দ্বিতীয় তলায় রেস্তোরাঁর জন্য মোটা অংকের আর্থিক লেনদেন করে দেয়া হয় ইজারা। সরকারি জায়গায় ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান ইজারা দেয়ায় এসব বন্ধ করে দেন তৎকালীন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহসেন উদ্দিন আহমদ। কিন্তু তিনি চলে যাওয়ার ছয় মাসের মাথায় গত সপ্তাহ থেকে পুনরায় চালু করা হয়েছে ওই রেস্তোরাঁ। আবার সেটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও করেন সমিতির কিছু নেতা।
অভিযোগ আছে, সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদকের একক সিদ্ধান্তে এমন অবৈধ ইজারা দেয়া হয়। যার জন্য পেয়েছেন আর্থিক সুবিধাও। কিন্তু প্রশাসনের নাকের ডগায় ঢাকঢোল বাজিয়ে উদ্বোধন করলেও এ বিষয়ে জানা নেই বলে জানান কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে সমিতির সভাপতি রতন কুমার নাথ কিছুই জানেন না জানিয়ে পূর্বকোণকে বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ মানিক (সাধারণ সম্পাদক) নিজ উদ্যোগে দিয়েছেন। আমাকে এ বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। দোকান কাকে দিয়েছে, কিভাবে দিয়েছে তাও জানি না’।
রেস্তোরাঁ ও পাশে দখল নিয়ে ফলের দোকান ইজারা দেয়া’য় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনুমোদনতো কিছুরই নেই। শুধুমাত্র জায়গাটা অফিসের জন্য দিয়েছে। তবে এখন কিভাবে এসব দেয়া হচ্ছে, তা আমি কিছুই জানিনা।’
জানতে চাইলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন মানিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘সভাপতি সবই জানে। কিন্তু আপনাকে যদি বলে জানা নেই, তাহলেতো আমার কিছুই করার নেই’। টেন্ডার দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বলেন ‘টেন্ডার দেয়া হয়নি, নেতৃবৃন্দের সিদ্ধান্তে ইজারা দেয়া হয়েছে’।
অনুমতি ছাড়া ইজারা দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিচালকের সাথে পরে কথা বলবো। পরে অনুমতি নেয়া হবে। এটা সমস্যা নেই’। কিন্তু সাবেক পরিচালক তা বন্ধ করে দিলেও কেন পুনরায় চালু করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের একটি আয়ের খাত, আমাদের তো আর আয় নেই। আয় বাড়াতে হবে, তাই দেয়া হয়েছে’।
এসব প্রসঙ্গে জানতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ভাইস প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদের কাছে জানতে চাইলে তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে কর্তৃপক্ষের সাথে এ নিয়ে আলোচনা করা হবে’।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর এ প্রসঙ্গে পূর্বকোণকে বলেন, ‘যেহেতু সাবেক পরিচালক তা বন্ধ করে দিয়েছেন, অবশ্যই তাতে যুক্তি আছে। আর সরকারি জায়গায় ব্যক্তি বা কোন প্রতিষ্ঠান ইজারা দেয়ার নিয়ম নেই। আমি ছুটিতে আছি, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট