চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

জনশূন্য সিডিএ’র দুই আবাসিক

অনন্যায় ‘ভীতি’ কর্ণফুলীতে ‘গুজব’

ইমরান বিন ছবুর

৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ১২:৪৭ অপরাহ্ণ

কোনোটির বয়স ১২ বছর। আবার কোনোটির বয়স ২৬ বছরেরও বেশি। তবুও আবাসিক এলাকা দুটি এখনো জনশূন্য। ২০০৮ সালে অনন্যা আবাসিকে ১৭৩৩টি প্লট বরাদ্দ দেয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। তবে এখনো সেখানে একটি হাসপাতাল ছাড়া তেমন কোন স্থাপনা নেই। ভবন নির্মাণের জন্য একাধিকবার সিডিএ থেকে প্ল্যান পাস করালেও কোন স্থাপনা নির্মাণ করছে না প্লট মালিকরা। অন্যদিকে, দুই যুগের বেশি ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে কর্ণফুলী নদীর বাম তীরে (মইজ্জারটেক) কর্ণফুলী আবাসিক। ১৯৯৪ সালে এই আবাসিকে ৪৮৯টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হলেও এখনো কোন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়নি কর্ণফুলী আবাসিকে। ভবন নির্মাণ না করার কারণ জানতে চাইলে প্লট মালিকরা এর জন্য সিডিএকে দায়ী করছেন। অন্যদিকে, কেউ প্লট নিয়ে ভবন নির্মাণ না করলে এর জন্য প্লট মালিক নিজেই দায়ী বলছেন, সিডিএ চেয়ারম্যান।
সিডিএ’র কর্ণফুলী আবাসিক বাস্তবায়ন হলে কর্ণফুলী, পটিয়া, আনোয়ারা উপজেলার বাসিন্দাদের শহরে থাকতে হতো না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব এলাকার মানুষেরা কাজ শেষে সেখানে থাকতে পারতেন। ফলে শহরের আবাসনের চাপ কমতো। দক্ষিণ চট্টগ্রামের সবচেয়ে যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো মইজ্জারটেক এলাকায়। ‘দুই তলার বেশি ভবন নির্মাণ করা যাবে না এবং বাতাসে সীসা ভাসে।’ এই দুটি গুজবে ভবন নির্মাণ আটকে আছে। এছাড়া পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা না থাকায় ভবন নির্মাণে আগ্রহী হচ্ছেন না প্লট মালিকরা।
জানতে চাইলে কর্ণফুলী আবাসিক প্লট মালিক কল্যাণ সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি এডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান বলেন, প্রজেক্ট প্রোফাইলে উল্লেখ ছিল, আবাসিক এলাকায় বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসসহ সকল নাগরিক সুবিধা থাকবে। কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই হয়নি। বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির ব্যবস্থা না থাকলে মানুষ এখানে কেন ভবন নির্মাণ করবে? অবশ্য পানির সমস্যা এখন সমাধান হয়েছে শুনেছি। এছাড়াও এখানে দুটি গুজব প্লট মালিকদের বেশ প্রভাবিত করেছে। ‘এখানে দোতলার বেশি ভবন নির্মাণ করা যাবে না এবং আবাসিকের বাতাসে সীসা ভাসে’। এই দুটি গুজবের কারণে অনেক প্লট মালিক ভবন নির্মাণে অনাগ্রহী হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এটা যে আসলেই গুজব সেটা প্রমাণিত। এখন সেখানে অনেকেই ৪ তলা ও ৬ তলার প্ল্যান নিয়েছে। দোতলার বেশি ভবন নির্মাণ করা না গেলে তো সিডিএ ৬ তলার প্ল্যান দিত না। আশার কথা হচ্ছে, আমরা কয়েক মাস আগে সিডিএ চেয়ারম্যানকে স্মারকলিপি দিয়েছি। সিডিএ’র সাথে ওয়াসার কথা হয়েছে এবং সেখানে শীঘ্রই পানির ব্যবস্থা করা হবে বলে চেয়ারম্যান আমাদের জানিয়েছেন।
অনন্যা আবাসিকের প্লট মালিকরা বলেন, একটি আবাসিক এলাকার কোন পরিবেশই নেই অনন্যা আবাসিকে। নেই বলতে যেন কিছুই নেই। অক্সিজেন মোড় থেকে অনন্যা আবাসিকে যাওয়ার মূল সড়কটি খানাখন্দকে ভরা। প্লটের সাথে লাগোয়া সড়কগুলো ঠিক নেই। ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। প্লটের চারপাশে নিরাপত্তা দেয়াল নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্লট মালিক জানান, অনন্যা আবাসিক স্থাপনা বা ভবন নির্মাণ না হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে নিরাপত্তার অভাব। অনেক প্লট মালিক আনুষঙ্গিক কাজ (ওয়াল নির্মাণ, সয়েল টেস্ট) করতে গিয়ে চাঁদাবাজির কারণে নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। নির্ধারিত লোক থেকে বালি, পাথর, লোহাসহ আনুষঙ্গিক মালামাল না নিলে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। এছাড়াও সন্ত্রাসী, মাদকসেবী ও জুয়াড়িদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে এই আবাসিক এলাকা।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, কর্ণফুলী আবাসিকে ভবন না হওয়ার জন্য কিছু গুজব ছিল। গুজব সৃষ্টিকারীরা বলেছে, এই আবাসিকের উপর দিয়ে বিমান যাবে, যার কারণে এখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করা যাবে না। সম্প্রতি প্লট মালিক সমিতি আমার সাথে দেখা করেছে, তারা ভবন নির্মাণ করবে বলে জানিয়েছে। পানির যে সমস্যা ছিল সেটি সমাধান করা হয়েছে। বোয়ালখালীতে বাস্তবায়নাধীন চট্টগ্রাম ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পের পানি দক্ষিণ চট্টগ্রামে যাবে। এ পানির মাধ্যমেই কর্ণফুলী আবাসিক এলাকার পানির সমস্যার সমাধান হবে। এছাড়া, অনন্যা আবাসিকের ভাঙা সড়কগুলো নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট