চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

থেমে নেই ভেজাল ওষুধ বিক্রি

ইমাম হোসাইন রাজু

৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ৪:৫৫ অপরাহ্ণ

নিয়মিত অভিযান, মামলা আর জরিমানার পরও বন্ধ হচ্ছে না ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বেচা-বিক্রি। শুধুমাত্র গেল ছয় মাসেই চট্টগ্রামে ভেজাল ওষুধ তৈরি, আনরেজিস্টার্ড এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির দায়ে প্রায় দেড় শতাধিক মামলা দায়ের করেছে ওষুধ অধিদপ্তর। একই সাথে প্রায় দেড় কোটি টাকারও বেশি অর্থদণ্ড করা হয়। আর নকল ও ভেজাল ওষুধ তৈরি ও বিক্রি করায় প্রায় ১৫ জনকে জেল-জরিমানাও দেয়া হয়। কিন্তু এসবের পরও এখন সরব এমন কার্যক্রম।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিছু অসাধু ফার্মেসি মালিক ও খুচরা বিক্রেতারা অতিরিক্ত লাভের আশায় এসব মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সরবরাহ করছে। মূলত এসব ব্যবসায়ীরা কম দামে নামিদামি কোম্পানির সমমান দামে ওষুধ ক্রয় করতে পারছে বলেই এমনটি করে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, বেশির ভাগ ওষুধের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও সাধারণ মানুষদের গছিয়ে দিচ্ছেন তারা। আর এতে জীবন রক্ষার বদলে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষদের। তবে এসব ভেজাল ও নকল ওষুধ বিক্রি এবং তৈরি করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও।
সর্বশেষ গতকাল রবিবার নগরীর বায়েজিদ ও আকবরশাহ এলাকায় চারটি ফার্মেসিতে অভিযান চালিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ, আনরেজিস্টার্ড যৌন উত্তেজক ওষুধ সংরক্ষণ ও বিক্রির দায়ে ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ওষুধ অধিদপ্তর ছাড়া ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষও গেল ছয় মাসে প্রায় অর্ধশত ফার্মেসিকে এসব কারণে জরিমানা করে। একই সাথে এসব ওষুধ ধ্বংসও করা হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান পূর্বকোণকে বলেন, ‘মূলত কিছু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার লোভে এসব ওষুধ বিক্রি করে থাকেন। এরমধ্যে তারা দুইভাবে এসব ওষুধ সংগ্রহ করেন। তারমধ্যে সরাসরি কোম্পানিগুলো থেকে আবার একই ওষুধ কম দামে বিভিন্ন পাইকারি দোকান থেকে। এরমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধগুলো কোম্পানিগুলোকে ফেরত দিতে পারলেও পাইকারি দোকানিকে ফেরত দেয়া যায় না। সেজন্য তা কাউকে না কাউকে দিয়ে দিচ্ছেন তারা। যদিও নিয়মিত মনিটরিং চালু রাখায় আগের চেয়ে কিছুটা কমে এসেছে। তবুও এ বিষয়ে নিয়মিত নজরদারি করা হবে।’
সংশ্লিষ্টদের তথ্যে জানা যায়, এসব মানহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধগুলো বেশিরভাগই নগরীর অলিগলি এবং গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ফার্মেসিগুলোতে বিক্রি করা হয়ে থাকে। একই সাথে আনরেজিস্টার্ড বা যেসব ওষুধ নিষিদ্ধ তা বিক্রি হয়ে থাকে। যা মানুষ ব্যবহারের কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব নিম্মমান ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ চেনা সম্ভব না হওয়ায় এমনটি হচ্ছে বলে অভিমত চিকিৎসক ও ওষুধ অধিদপ্তরের। যদিও এসব ফার্মেসি ও নকল-ভেজাল কারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন ওষুধ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পরিচালক হোসাইন মোহাম্মদ ইমরান।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘সব ফার্মেসি এমন কাজ করে না। মূলত কিছু ফার্মেসি আছে, যারা অতি লোভী। তারাই এমন কাজ করে থাকে। এসব বিষয়ে ওষুধ অধিদপ্তর নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এটিও সঠিক যে, আগের চেয়ে এমন কাজ কিছুটা কমে এসেছে। তবে মানহীন বা নকল-ভেজাল ওষুধের বিষয় আমাদের সকলের চেনা জানা থাকলে তা অচিরেই বন্ধ হয়ে পড়বে। একই সাথে যদি কোন ফার্মেসি নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সরবরাহ করে থাকে কিংবা অন্য কেউ ভেজাল ওষুধ প্রস্তুত করে এমন তথ্য পেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট