চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

টয়লেট ইজারা নিয়ে দোকান বানিয়ে বিক্রি

নিজস্ব প্রতিবেদক

৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ৩:৫৫ অপরাহ্ণ

চাক্তাই ড্রামপট্টি এলাকায় সিটি করপোরেশনের গণশৌচাগার (টয়লেট) ইজারা নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে তিনটি দোকান। প্রতিটি দোকান থেকে মাসে সাড়ে ৪ হাজার টাকা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। বছরে আদায় করা হচ্ছে এক লাখ ৬২ হাজার টাকা। অথচ টয়লেট ইজারা নিয়েছে মাত্র ৩০ হাজার টাকায়। ইজারার শর্ত ভঙ্গ ও মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি করপোরেশন।
গত বছরের ২২ জুলাই মাসে অভিজিৎ পান্ডে নামে এক ব্যক্তিকে গণশৌচাগারটি ইজারা দেয় সিটি করপোরেশন। সাত শর্তে ইজারা দেয়া হয়েছে। ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে টয়লেট ভেঙ্গে নির্মাণ করা হয়েছে তিন দোকান। পাশে বসানো হয়েছে পান-সিগারেটের দোকান। শর্ত ভঙ্গ করে দোকান নির্মাণ ছাড়াও শৌচাগারের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ১৩ এপ্রিল। পদে পদে অনিয়ম হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি চসিক।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানায়, গত বছরের অক্টোবর মাসে গণশোচাগার (ল্যাট্রিন) ভেঙ্গে সামনের অংশে দোকান নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। দৈনিক পূর্বকোণে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে করপোরেশনের তৎকালীন এস্টেট অফিসার এখলাছ উদ্দিন আহমদ সরেজমিন পরিদর্শন করেছিলেন। টয়লেট ভেঙে দোকান নির্মাণের প্রমাণ পেয়েও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি করপোরেশন। করপোরেশনের অবহেলা ও খামখেয়ালিপনার কারণে গণশৌচাগারের অস্তিত্ব হারিয়ে গেছে। এজন্য এখলাছ উদ্দিনকে দায়ী করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

করপোরেশনের তৎকালীন এস্টেট অফিসার এখলাছ উদ্দিন গতকাল পূর্বকোণকে বলেন, ‘গণশৌচাগার না করে দোকান নির্মাণের সময় আমরা উচ্ছেদ নোটিশ করেছিলাম। ম্যাজিস্ট্রেটরা হয়তো সময় করতে পারেনি।’

এখলাছ উদ্দিনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের কারণে বর্তমান প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন দায়িত্ব গ্রহণের পর এস্টেট শাখা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন গতকাল পূর্বকোণকে বলেন, ‘করপোরেশনে যারা অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন, তাদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে।’ টয়লেট ইজারা নিয়ে দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এই ধরনের অভিযোগ অনেক। তবে এখন অভিযোগ পাওয়ার পর পরই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। টয়লেট ইজারা নিয়ে অবৈধভাবে নির্মিত দোকান উচ্ছেদ করা হবে বলে জানান প্রশাসক খোরশেদ আলম।
সরেজমিন দেখা যায়, ড্রামপট্টির মুখে সিটি কর্পোরেশন জরাজীর্ণ ও পুরোনো গণশৌচাগার রয়েছে। শৌচাগারের সামনে এখন তিনটি দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। চটের বস্তা বিক্রি করা হচ্ছে এসব দোকানে। স্থানীয় দোকানদাররা জানায়, চাক্তাই এলাকার ব্যবসায়ী, কর্মচারী, শ্রমিক ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা ক্রেতাদের সুবিধার জন্য ৪০-৪৫ বছর আগে এই শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে। কয়েক বছর ধরে জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় শৌচাগারের ব্যবহার কমে যায়। অযত্নে অবহেলায় পড়ে রয়েছে। গত বছর ইজারাদার শৌচাগারের সামনের অংশ ভেঙে দেয়াল দিয়ে টিনশেডের দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছে। তিন দোকান ভাড়ায় নিয়েছে ব্যবসায়ী মো. ইউসুফ, খোকন ও খোকনের ভাই নজরুল।
ব্যবসায়ী মো. ইউসুফ গতকাল পূর্বকোণকে বলেন, মাসে ৪ হাজার ৫শ টাকা ভাড়ায় দোকান নিয়েছেন। গত বছর তানজিল নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে বার্ষিক চুক্তিতে ভাড়া নিয়েছেন।
করপোরেশন সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ৯ মে থেকে চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত ইজাদারকে টয়লেট থেকে মাশুল আদায়ের অনুমতি দেয়া হয়। সাত শর্তে এ অনুমতি দিয়েছে চসিক। এস্টেট বিভাগ মাশুল আদায়ের অনুমতিপত্র দেয়।
প্রতিটি দোকানের ভাড়া মাসে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। সেই হিসাবে তিনটি দোকানের ভাড়া পড়ে মাসে ১৩ হাজার ৫শ টাকা। বছরে দাঁড়ায় এক লাখ ৬২ হাজার টাকা। অথচ সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে ল্যাটিন হিসেবে ইজারা নিয়েছেন বছরে ৩০ হাজার টাকায়।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানায়, কাগজে-কলমে ইজাদার হচ্ছে অভিজিৎ পান্ডে। কিন্তু দোকান নির্মাণ করে অগ্রিম টাকা ও ভাড়া আদায় করছেন এক ছাত্রলীগ নেতা।
গণশৌচাগারের মাশুল আদায়ের ৫নং শর্তে দেখা যায়, গণশৌচাগার বা অংশবিশেষ অন্য কারো নিকট কোন অবস্থায় উপ-লাগিয়ত বা ভাড়া প্রদান করতে পারবেন না। কিন্তু সেই শর্ত ভঙ্গ করে এখন দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তা জেনেও না জানার ভান ধরে রয়েছে চসিক।
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট