চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

ক্রিকেটীয় আমেজে গ্রামের বাড়িতে ঈদ উৎসব

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকু-

৪ জুন, ২০১৯ | ১:৪১ পূর্বাহ্ণ

 

গ্রামের বাড়িতে ঈদ উৎসব, সে এক অন্যরকম আমেজ! আত্মীয়-পরিজন, পাড়া-পড়শি বন্ধুদের নিয়ে ঈদের আনন্দ সবাইকে টানে দূর গ্রামে। আর এবারের ঈদে বাড়তি পাওয়া হচ্ছে বিশ^কাপ ক্রিকেট।
ক্রিকেট নিয়ে বাঙালির আবেগ-উচ্ছ্বাস বরাবরই একটু বেশি। আর যদি হয় বিশ্বকাপ ক্রিকেট তাহলে তো বাড়তি আমেজ থাকবেই। কারণ, এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ দলও। সূচনা ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২১ রানে হারিয়ে ইতিমধ্যেই দেশবাসীকে আনন্দের জোয়ারে ভাসিয়েছে টাইগাররা।
ক্রিকেটপ্রেমীদের আনন্দের মাঝেই ৫ অথবা ৬ জুন উদযাপিত হতে যাচ্ছে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। ফলে উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা যেন দ্বিগুণ হয়ে উঠেছে। সকলেই চান পরিবার-পরিজনের সাথে বসে ঈদের ছুটি ও খেলা উপভোগ করতে। সীতাকু- বাজারের একটি চায়ের দোকানের কর্মী মো. নাছির উদ্দিন বলেন, আমার বাড়ি চাঁদপুরে। অর্থের জন্য চাকরি করি সীতাকু-ে। সারাবছর অপেক্ষায় থাকি ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাব বলে। এ সময় দুই সপ্তাহ পরিবারের সাথে কাটাই আমি। তিনি বলেন, এবার এই ঈদের আগেই এসে গেল বিশ্বকাপ ক্রিকেট। যখন থেকে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশ নিচ্ছে, তখন থেকে বাংলাদেশের কোন খেলা মিস করতে চাই না। কিন্তু চাকরির কারণে ভালো করে খেলাটা উপভোগ করতে পারি না। এবার খেলা শুরুর কয়েকদিন পরেই ঈদের ছুটি পেয়ে যাচ্ছি। যে দুই সপ্তাহ বাড়িতে থাকব পরিবারকে নিয়ে এখানে-সেখানে বেড়ানোর সাথে সাথে ঘরে বসে প্রিয় দলের খেলা উপভোগ করতে পারব ভেবেই দারুণ লাগছে। তিনি আরো বলেন, এবার একটি এলইডি টেলিভিশন কিনলাম। ঈদের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা আর বিশ্বকাপ দুটোই প্রাণভরে উপভোগ করতে চাই।
একসাথে দুটি উৎসব পেয়ে বাড়তি উদ্দীপনা নিয়ে এনজিওকর্মী মো. সাহাব উদ্দিন বলেন, লাখো-কোটি মুসলমানের মতো আমার কাছেও ঈদ মানেই খুশির জোয়ার। সারাবছর মাঠে ময়দানে ঘুরে কাজ আর কাজ করি আমি। কিন্তু পরিবারের সাথে সময় কাটানো হয় না বললেই চলে। বাড়ি নরসিংদী হওয়ায় সবসময় যাওয়া হয় না। ঈদের ছুটিতেই কিছুদিনের জন্য যাই। এ সময়টাই উপভোগ করি দারুণ। তিনি বলেন, এবার এরই মধ্যে শুরু হয়েছে বিশ্বকাপ ক্রিকেট। মাশরাফি, সাকিব, সৌম্যদের সাম্প্রতিক পারফরমেন্স আশা জাগিয়েছে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ অবশ্যই অনেক দূর যাবে বলে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। তাই প্রিয় দেশের খেলা না দেখে কি থাকা যায়? অপেক্ষায় আছি ঈদের ছুটির। কাল-পরশুই চলে যেতে চাই বাড়িতে। সেখানে পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের সাথে ঘুরে-বেড়িয়ে আর আড্ডায় জমে উঠবে ঈদের বিশ্বকাপ। বাংলাদেশ দলের জন্য শুভকামনা জানান তিনি।
এদিকে ঈদের ছুটিতে সীতাকু- থেকে যেমন দূর-দূরান্তে নিজ বাড়িতে গিয়ে উৎসব উপভোগ করার জন্য লাখো মানুষ মুখিয়ে রয়েছেন, তেমনি বাইরে চাকরিরত আছেন সীতাকু-ের বাসিন্দারাও।
সীতাকু- পৌরসদরের নামার বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. জুনায়েদ হোসেন চাকরি করেন ঢাকার ইস্কাটনে। মোবাইল ফোনে প্রাইভেট কোম্পানির কর্মচারী জুনায়েদের ঈদ পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি আগ বাড়িয়েই বলেন, আরে ভাই বিশ্বকাপ চলছে, দেখার সুযোগ পাচ্ছি না। প্রাইভেট চাকরি। বোঝেন তো। কোন সময় পাই না। এবার ঈদে কোথাও বেড়াতে যেতে চাই না। সীতাকু-ে নিজ বাড়িতে যাব। ঘরেই থাকতে চাই প্রিয়জনদের কাছাকাছি। আমার ছেলে জোবায়ের তো খেলার পাগল। বাপ-ছেলে মিলে ঈদে বিশ্বকাপ উপভোগ করব দিনরাত। শুধু দোয়া করবেন নিরাপদে যেন বাড়ি ফিরতে পারি।
এদিকে শুধু চাকরিজীবী সাধারণ মানুষ নয়, ঈদ ও খেলা উপভোগের সুযোগটা হাতছাড়া করতে চান না ভিআইপিরাও। চট্টগ্রাম-৪ সীতাকু- সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ দিদারুল আলম বলেন, সারাবছর তো সময় পাই না। রাজনীতি-ব্যবসা-সমাজসেবা নিয়ে ব্যস্ত থাকি। তাই বাংলাদেশের খেলা থাকলেও দেখার সুযোগ পাই না। এবার ঈদের ছুটিতে বিশ্বকাপের মতো বড় আসর মিস করতে চাই না। তিনি বলেন, ঈদের দিন উপজেলায় নামাজ পড়ে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে আপ্যায়নের মধ্যদিয়ে উৎসব শুরু করব। আর যে কয়েকদিন বাড়িতে থাকব, অবশ্যই প্রিয় দলগুলোর খেলা উপভোগ করে কাটাতে চাই।
এভাবে এবারের ঈদ ও বিশ্বকাপ মিলেমিশে উপভোগ করে রঙিন মুহূর্ত কাটাতে চান বাংলার আম-জনতা। ফলে আসন্ন ঈদুল ফিতর যে দ্বিগুণ উচ্ছ্বাস বয়ে আনবে দেশবাসীর জন্য, তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে এই আনন্দ যেন কোন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় বিবর্ণ না হয়, তা মাথায় রেখে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। তাহলেই ঈদের খুশি সবাই পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করতে পারবেন বলে সচেতন মহল মনে করেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট