চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সরকারের সিদ্ধান্তকে গণপরিবহনের বৃদ্ধাঙ্গুলি

বাড়তি ভাড়া, যাত্রীও বাড়তি

আল-আমিন সিকদার

২ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ২:৩১ অপরাহ্ণ

করোনাকালে গণপরিবহনে বাড়ানো ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার করার প্রথমদিনেই সরকারের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে গণপরিবহন। সরকার গণপরিবহনে পূর্বের ভাড়া বহাল করার পাশপাশি দিয়েছে বেশকিছু নির্দেশনা। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যত সিট তত যাত্রী এবং স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে চালক-হেলপারের বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান। কিন্তু কে শোনে, কার কথা!

লাগামহীন ভাড়া কমার প্রথম দিনেই সড়ক দাপিয়ে বেড়িয়েছে গণপরিবহন তাদের সেই চিরচেনা রূপে। নিয়েছে বাড়তি ভাড়া, তুলেছে সিটের অধিক যাত্রী। স্বাস্থ্যবিধি- সে তো সোনার হরিণ। হেলপারের হাতে জীবানুনাশক স্প্রে দূরে থাক, মুখে ছিল না মাস্কও। শুধু কি তাই? ভাড়া কমে যাওয়ায় সন্ধ্যা হতেই উঠা-নামা ২০ টাকা করেও ভাড়া নিতে দেখা যায় তাদের। প্রথম দিনেই গণপরিবহনের এ অনিয়ম নজরে আসে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের। করেছেন জরিমানাও। তবুও যাত্রীরা বলছেন, লাগামহীন গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানো অসম্ভব। ব্যবস্থা নিলেই ধর্মঘট ডেকে সরকারকে জিম্মি করে। কে ঠেকাবে তাদের? তবে আন্তঃজেলা গণপরিবহনসহ দূরপাল্লার বাসগুলো অনেকটাই নিয়ম মেনে চলাচল করেছে।
গতকাল নগরীর সড়কের বিভিন্ন মোড়ে সরেজমিনে দেখা যায়- সিটের অধিক যাত্রী তুলছে গণপরিবহনগুলো। শুধু তাই নয়, চালক-হেলপারের মুখে ছিল না মাস্ক। এমন পরিস্থিতিতে নগরীর ইপিজেড মোড়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে গণপরিবহনগুলো। কারখানা ছুটির সময় শ্রমিকদের ভিড় বেশি থাকায় তাদের জিম্মি করে উঠা-নামা ২০ টাকা ভাড়া আদায় করছে। ভাড়া বাড়তি দিলেও অনেকেরই ভাগ্যে জুটেনি বসার আসন। অন্যদিকে নগরীর নতুনব্রিজ ও দেওয়ানহাট মোড়ে দিনভর অভিযান পরিচালনা করে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেখানেও মিলেছে অনিয়মের চিত্র। ১৬টি মামলায় আদায় করা হয়েছে ১৬ হাজার টাকা। বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ এবং অধিক যাত্রী নেয়ায় তাদের এ জরিমানা করা হয়।

ইপিজেড মোড়ে ১৫ মিনিটেরও বেশি সময় দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করেছেন পোশাক শ্রমিক রুবানা বেগম। গাড়ি থাকলেও তার এই দাঁড়িয়ে থাকার কারণ হচ্ছে, প্রতিটি গাড়িই চাচ্ছে বাড়তি ভাড়া। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘এখানে দাঁড়িয়ে আছি প্রায় ১৫ মিনিট। আগ্রাবাদ যাবো। ফ্রিপোর্ট থেকে আগ্রাবাদের ভাড়া ৭ টাকা। কিন্তু বাসগুলো বলছে উঠা-নামা ২০। তার মানে যেখানেই নামি ২০ টাকা ভাড়া দিতে হবে। এর থেকে বাড়তি ভাড়াই ভালো ছিল। তখন ১০-১২ টাকা নিত। মাসের শেষ সময় তেমন টাকাও নেই। কিন্তু এই দুঃখ তো আর তারা বুঝবে না। আর তাদের ঠেকানোরও কেউ নেই। পাশেই ট্রাফিক পুলিশরা ডিউটি করলেও তাদের এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখিনি কখনো। গণপরিবহনগুলো এমনই। তাদের ঠেকানোরও কেউ নেই।’

অন্যদিকে ৩ নম্বর রুটে চলাচলকারী নগরীর সিটি বাসগুলোর বিরুদ্ধে উঠেছে বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ। চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় থেকে নগরীর উদ্দেশ্যে আসা বাসের এক যাত্রী পূর্বকোণকে বলেন, ‘এই রুটে চলাচলকারী বাসগুলো সরকারের কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না। নিচ্ছে বাড়তি ভাড়া। আমরা চাই এই রুটে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হোক।’

বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নূরে জামান পূর্বকোণকে বলেন, ‘আজ থেকে পূর্বের ভাড়ায় চলছে গণপরিবহন। তবে যে নিয়মনীতি অনুসরণ করে গণপরিবহন চলার কথা তা অনেক চালকই মানছেন না। আজও অভিযান পরিচালনা করে এমন সত্যতা পেয়েছি। দক্ষিণ চট্টগ্রামে চলাচলকারী বাসগুলো ২৫ টাকার ভাড়া ৩০ টাকা করে নিয়েছে। তাছাড়া অধিক যাত্রীও বহন করেছে। এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

এদিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন বাস মালিক গ্রুপের মহাসচিব বেলায়ত হোসেন বেলালও স্বীকার করেছেন বাড়তি ভাড়া নেয়ার বিষয়টি। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘ এক শ্রেণীর অসাধু চালক-হেলপার এ কাজগুলো করছে। তারা বেশি লাভের আশায় ছুটির সময় এ কাজটি করে থাকে। এর সাথে মালিকদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমরা চাই এসব চালকদের বিরুদ্ধে ট্রাফিক বিভাগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।’
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট