চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

জাতিসংঘ পার্ক নিয়ে বিরোধ মিটছে চসিক-গণপূর্তের

ইফতেখারুল ইসলাম

৩০ আগস্ট, ২০২০ | ৩:০৩ অপরাহ্ণ

পাঁচলাইশ জাতিসংঘ পার্ক নিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাথে বিরোধের অবসান ঘটাতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। চসিকের নবনিযুক্ত প্রশাসক আলহাজ মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন সম্প্রতি ঢাকায় গেলে গণপূর্ত বিভাগকে জাতিসংঘ পার্কের উন্নয়নে কাজ করার মৌখিক অনুরোধ জানিয়েছেন। মামলা প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্তের কথাও তিনি জানিয়ে এসেছেন। এছাড়া মশক নিধন, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কল্যাণ ফান্ডের বকেয়া পরিশোধ এবং সড়ক সংস্কারের জন্য ৩৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের জন্য তাগাদা দিয়ে এসেছেন।
আলাপকালে পূর্বকোণকে সুজন বলেন, সরকারি টাকা চাওয়া মাত্র দিতে পারে না। আমি আমার মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা চেয়েছি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সেই প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ের পাঠিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে সড়ক সংস্কার, মশক নিধন এবং বকেয়া পরিশোধ।
গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, তাদেরকে বলে এসেছি, পাঁচলাইশ জাতিসংঘের পার্কের উন্নয়ন যেন তারা করে। এর জন্য যতটুকু সহযোগিতা প্রয়োজন সিটি কর্পোরেশন দেবে। এর আগে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি’র সাথেও দেখা করেছি। ওই পার্ক সংক্রান্ত মামলা থেকে আমরা সরে আসব।
নৌ মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ হওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, ভৌগলিক অবস্থানগত কারণেই বন্দরের অবস্থান চট্টগ্রামে। এই শহর গড়ে উঠেছে বন্দরকে ঘিরে। মূলত চট্টগ্রাম বন্দর পুরো শহরের রাস্তাঘাট ব্যবহার করে। অপরদিকে, বন্দরের বড় সুবিধাভোগী রাষ্ট্র। একটি বন্দরকে সক্ষম করতে গেলে শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। কিন্তু সাধারণ নগরবাসী যে হারে সিটি কর্পোরেশনে কর প্রদান করে। চট্টগ্রাম বন্দরও সেই হারে কর দেয়। চট্টগ্রাম বন্দর যেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য একটি উন্নয়ন কর দেয় সেই আহ্বান জানানোর কথা উল্লেখ করে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও বিষয়টি অবগত আছেন।
স্বাস্থ্য সচিবের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, বন্দর থেকে আগ্রাবাদ পর্যন্ত এলাকার আশপাশে অন্তত ছয়টি ওয়ার্ডে প্রায় ১০ লাখ নারীর বসবাস। এখানে কোন মাতৃসদন হাসপাতাল নেই। বর্তমান স্বাস্থ্য আবদুল মান্নান চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ছিলেন। বিভাগীয় কমিশনার ছিলেন। তিনি নিজেও বিষয়টি অবগত। ওই এলাকায় মাতৃসদনসহ একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার অনুরোধ জানিয়েছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। একটি প্রস্তাব পাঠানোর কথা বলেছেন। একটি নতুন হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব পাঠাব।
তথ্যমন্ত্রীর সাথে আলাপ করে চট্টগ্রামের উন্নয়নে তার সহযোগিতা চাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, তিনি আন্তরিকতার সাথে চেষ্টা করার আশ্বাস দিয়েছেন। মন্ত্রী আমাকে বলেছেন চট্টগ্রাম আমার জন্মস্থান। তাই চট্টগ্রামের উন্নয়নের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। সার্কিট হাউজের পাশে পার্ক নামের যে জঞ্জাল আছে তা অপসারণের কথা বলেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি চান তাহলে সেখানে সবুজ চত্বর করার জন্য সিটি কর্পোরেশন সর্বাত্মক কাজ করবে।
উল্লেখ্য, নগরীর অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র জাতিসংঘ পার্ক নিয়ে বিরোধ চরমে উঠেছিল আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি এবং নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের মধ্যে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং সিটি কর্পোরেশন উভয়ই এটির মালিকানা দাবি করে উন্নয়ন করতে চায়। বিরোধের কারণে পার্কটির উন্নয়ন হয়নি। বরং দীর্ঘদিন ধরে এতে পড়ে আছে আবর্জনার স্তূপ।
নগরীর জনসংখ্যার তুলনায় বিনোদনকেন্দ্র যথেষ্ট অপ্রতুল। এর মাঝে পার্কটি বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষ অবসরে নির্মল সময় কাটানো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ১৯৬৪ সালে গণপূর্ত বিভাগ পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় এক একর জায়গায় পার্কটি গড়ে তোলে। ২০০২ সালে এটি জাতিসংঘ পার্ক নামকরণ করা হয়। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে পার্কের একাংশে ১২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৫০ ফুট প্রস্থের দুটি সুইমিং পুল এবং সাত হাজার বর্গফুটের একটি জিমনেশিয়াম নির্মাণ করা হয়। অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত সুইমিংপুলে সাঁতার কাটতে গিয়ে একজনের মৃত্যুও ঘটে। এরপর থেকে এটি পরিত্যক্ত। বর্তমানে পুরো পার্কটিই পরিত্যক্ত।
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট