চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

এখন কি করোনা নেই ?

ইমাম হোসাইন রাজু

২৯ আগস্ট, ২০২০ | ১:২৮ অপরাহ্ণ

রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে ফুচকা বিক্রি করছেন বিক্রেতা। স্বাদের ফুচকা খেতে লাইনে দাঁড়িয়ে একাধিক যুবক-যুবতীও। পাশে বসেই টক-ঝালের ফুচকার রস তৃপ্তির সাথে খাচ্ছেন আরও কয়েকজন। কি বিক্রেতা আর কি ক্রেতা, কারও মুখেই নেই মাস্ক। মাস্ক কোথায়, বলতেই- ফুচকার ঠোঙ্গার নিচ থেকে বের করে বলেন, ‘দীর্ঘক্ষণ পরে থাকলে অসুবিধা হয়। তাই খুলে রেখেছি।’

ওষুধের দোকানে ক্রেতারা যেন দূরত্ব বজায় রাখেন, সে জন্য মালিক সামনে দড়ি টাঙ্গিয়ে তাতে সাদা কাগজে লেখেন ‘সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন’। কে শোনে কার কথা। দড়ির একাংশের নিচ দিয়ে গলে দোকানে ঢুকছেন কেউ কেউ। দড়ি দেয়ার পরও এমন কেন, প্রশ্নে দোকানির জবাব, ‘লোকে শুধু বলে, ‘লকডাউনও নেই, করোনাও আর নেই, বলেই দোকানে ঢুকে পড়ে। তাদের তো আর বেশি কিছু বলতে পারি না।’

দেশের করোনার দ্বিতীয় হটস্পট চট্টগ্রামের চিত্র এখন এমনই। মাস্ক ছাড়া লোকজনের অবাধে ঘুরে বেড়ানো, আড্ডা ও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে জনগণের অনিয়ন্ত্রিত চলাফেরা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ধার ধারছেন না কেউই। সাধারণ মানুষের এমন উদাসীনতায় উদ্বেগে স্বয়ং স্বাস্থ্য বিভাগ। তারা বলছেন, এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে থাকলে, করোনার ধাক্কা বড় আকর ধারণ করবে। আর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, এখনও যদি মানুষ সচেতন না হয়, তাহলে সামনের দিনগুলোতে বিপদ বাড়তেই থাকবে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশিদ পূর্বকোণকে বলেন, ‘রাস্তার ধারে কিংবা বাইরে যারা খাবার বিক্রি করছে, তাদের থেকেও করোনার সংক্রমণ ছড়াতে পারে। শুধু তাই নয়, মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি না মানলেও তা সহজেই ছড়িয়ে পড়বে। এমন অবস্থায় এ ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়বে।’
স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বশেষ তথ্যে, চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৭ হাজারের দ্বারপ্রান্তে। ইতোমধ্যে ২৬৮ জনের মৃত্যুও হয়েছে। সুস্থতার হার কিছুটা বাড়লেও, প্রতিদিনই আক্রান্ত ক্রমশ বেড়েই যাচ্ছে। কবে নাগাদ এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে, তাও অজানা। তারমধ্যে বিশ্বের একাধিক দেশে সেকেন্ড ওয়েব বা দ্বিতীয় সংক্রমণ হানা দেয়ায়, ইতোমধ্যে জল্পনা শুরু হয়েছে দেশেও। যার জন্য মাঠ পর্যায়ে মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সংস্থাকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়ে চিঠিও দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু এমন অবস্থাতেও নেই দৃশ্যত কোন কার্যক্রম। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রশাসনের নজরদারি না বাড়ানো হলে দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণের ঝুঁকি প্রাণঘাতী হতে পারে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মাহফুজুর রহমান পূর্বকোণকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেয়া হলেও পুলিশ ও প্রশাসনের তরফে এখন পর্যন্ত কোনও নজরদারিই নেই। তার মধ্যে সেকেন্ড ওয়েবের আশঙ্কা। এমন হলে সামনের দিনগুলো খুবই ভয়নক হয়ে হাজির হবে। তাই স্বাস্থ্য বিভাগসহ প্রশাসনকে নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের।’

এদিকে, পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর পূর্বকোণকে বলেন, ‘মানুষ সচেতন না হলে খুবই মুশকিল। প্রশাসনকে আগেও এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। প্রয়োজনে আবারও জানানো হবে। এমন হলে তো বিপদ বাড়বেই।’ এ বিষয়ে প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিভাগতো পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু কেউই শুনছে না। প্রশাসনকেও তা বাস্তবায়নে চিঠি দেয়া হয়েছে। কঠোর হওয়া ছাড়া এখন আর কিছুই নেই। তাই প্রয়োজনে প্রশাসনকে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট