চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে কিশোরের অশালীন ছবি ফেসবুকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ আগস্ট, ২০২০ | ১:৩১ অপরাহ্ণ

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে কিশোরের অশালীন আচরণের এক মাস আগের একটি ছবি পরিকল্পিতভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়ানো হয়েছিল গত ২৫ আগস্ট। ছবির সাথে যে বর্ণনা দেয়া হয়েছে তাও মিথ্যে ছিলো। তবে ভাইরাল হওয়া ছবিতে যে নারীকে দেখা গেছে তিনি থানায় কোন অভিযোগ করেনি। ওই নারীর সাথে কিশোরের কোন ঘটনাই ঘটেনি। কিশোরের পরিবারের প্রতিপক্ষের দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিবেশী আবদুর রাজ্জাক ওরফে ভেইঙ্গার সাথে কিশোর বাবলুর পরিবারের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিলো। প্রায় সময় আবদুর রাজ্জাক তাদের সাথে অশালীণ আচরণ করতো। চলতি মাসের ৩ আগস্ট রাজ্জাকের সাথে বাবলুর পরিবারের ঝগড়া হয়। ঝগড়ার এক পর্যায়ে রাজ্জাক অশালীন আচরণ করলে কিশোর বাবলুও ঘর থেকে বের হয়ে রাজ্জাককে উদ্দেশ্যে করে অশালীন আচরণ করে। এ এ এম রায়হান নামে একজনের ফেসবুক আইডি থেকে সেই সময় বিষয়টি লাইভে দেখানো হলেও তেমন কারো নজরে আসেনি। গত ২৫ আগস্ট প্রশাসনের নজরে আনতে একমাস আগের সেই অশালীন ছবিটি ফের ফেসবুকে ছাড়া হয়। ছবিতে দেখা যায় বিবস্ত্র এক কিশোরের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন একজন নারী। এমডি সোহেল রাফি নামের এক যুবক তার ফেসবুকের ওয়ালে লিখেছেন ‘প্রকাশ্যে দিবালোকে প্যান্ট খুলে একটি মেয়েকে ধর্ষণের হুমকী দিচ্ছে বাবুল নামের এক ছেলে। কিভাবে সম্ভব—–।

মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান জানান, কিশোর বাবলু নিরাপরাধ। ছবিতে যে নারীকে উদ্দেশ্য করে অশালীন করা হয়েছে বলা হচ্ছে সেই নারী বাবলুর বিরুদ্ধে কোন মামলা করেনি। তাছাড়া ঘটনাটি প্রায় এক মাস আগের। কিশোরের বিরুদ্ধে পুলিশ যে ধারায় মামলা রেকর্ড করেছে সেই অপরাধ করেনি কিশোর। আমরা কিশোরের জামিনের জন্য আদালতে আবেদন করেছি।

ছবির সেই নারী জানান, কিশোর বাবলু তাকে উদ্দেশ্য করে কোন অশালীন আচরণ করেনি। আবদুর রাজ্জাক ওরফে ভেঙ্গার সাথে তাদের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিলো। ঘটনার দিনও তাদের দুই পরিবারের মধ্যে ঝগড়া লেগেছিলো। বাবলুর পরিবারের উদ্দেশ্যে রাজ্জাক অশালীন আচরণ করলেও বাবলুও তাদের উদ্দেশ্যে অশালীন আচরণ করে। অথচ সবার ছবিগুলো মুছে দিয়ে আমার ছবি দিয়ে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এ ছবির কারণে আমার সংসার ভেঙ্গে যাবার উপক্রম হয়েছে। আমার ছবিটি যারা ফেসবুকে দিয়েছে আমি তাদের বিচার চাই। বাবলু ছোট ছেলে। আমাকে উদ্দেশ্যে করে সে কোন অশালীন আচরণ করেনি।

প্রতিবেশী লোকজন জানান, আবদুর রাজ্জাক নানান অসামাজিক কাজে জড়িত। থানা পুলিশের সাথে তার সুসম্পর্ক রয়েছে। রাজ্জাকের বাসায় ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা লাগানো আছে। পুলিশের সাথে সুসম্পর্ক থাকায় তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলার সাহস করে না।

নগরীর সদরঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুর রহমান ফারুকী জানান, যৌন হয়রানির অভিযোগে অন্য এক নারীর দায়ের করা নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ১০ ধারার মামলায় কিশোর বাবুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তাকে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিমের আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। তবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কোনো রিমান্ডের আবেদন করা হয়নি।

গ্রেপ্তার মো. বাবলু (১৬) নগরীর সদরঘাট থানার পশ্চিম মাদারবাড়ি এলাকায় টং ফকির শাহ মাজার লেইনে একটি গলির বাসিন্দা ছালেহ আহমেদের ছেলে। ফেসবুকে ছবি ভাইরালের পর মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে তাকে নগরীর আগ্রাবাদ থেকে আটক করা হয়।
ওসি ফজলুর রহমান ফারুকী জানিয়েছেন, ছালেহ আহমেদের পারিবারিক প্রতিপক্ষ আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী বাদি হয়ে বাবলুর বিরুদ্ধে মামলা করেন। তিনি অভিযোগ করেছেন,বাবলু তাকে উদ্দেশ্য করে অশালীন অঙ্গভঙ্গি করেছেন।
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট