চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রামে করোনার নমুনা পরীক্ষা

জট নেই, ফল মিলছে ২৪ ঘণ্টায়

ইমাম হোসাইন রাজু

২৫ আগস্ট, ২০২০ | ১:৫০ অপরাহ্ণ

তীব্র জ্বর হওয়ায় জুলাই মাসের মাঝামাঝিতে পরীক্ষার জন্য নমুনা জমা দেন নাজমুল হক। সেই নমুনার ফলাফল পেতে তার সময় লেগেছিল সপ্তাহের বেশি। নেগেটিভ হলেও ফল পাওয়ার আগেই সুস্থ হয়ে ওঠেছিলেন তিনি। কিন্তু ল্যাবে নমুনা জটের কারণে সঠিক সময়ে তা জানতে পারেননি নাজমুল।

করোনার সংক্রমণ শুরুর পর থেকে চট্টগ্রামে নমুনা পরীক্ষার ফল নিয়ে এমন নাজুক পরিস্থিতি দেখা গেলেও গেল কিছুদিনের চিত্র দিচ্ছে সুখবরের বার্তা। যে সকল ল্যাবে নমুনার জটে এতদিন ছিল জর্জরিত, সেই ল্যাবগুলোতেই বর্তমানে ফলাফল মিলছে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই। চট্টগ্রামের সরকারি চার ল্যাব থেকে প্রাপ্ত তথ্যে এমনটি জানা যায়।

তথ্য মতে, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্তের পর চট্টগ্রামে প্রথম নমুনা পরীক্ষা শুরু হয় গত ২৫ মার্চ। ফৌজদারহাটস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) হাসপাতালের ল্যাবে সর্বপ্রথম পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু হয়। যদিও বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি মিলে ছয়টি ল্যাবে চলছে এ পরীক্ষা কার্যক্রম। যার দুটির কার্যক্রম বেসরকারিভাবে নিয়ন্ত্রিত হলেও বাকি চারটি ল্যাবই সরকারি। বিআইটিআইডি ছাড়া বাকি তিনটি ল্যাব হচ্ছে, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু), চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। এসব ল্যাবেই নগরীসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সংগ্রহকৃত নমুনা পরীক্ষা করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব ল্যাবে পরীক্ষা শুরুর পর থেকেই নমুনার তীব্র জট ছিল। যার কারণে ল্যাব টেকনোলজিস্টদের রাত-দিন পর্যন্তও কাজ চালিয়ে যেতে হতো। যদিও চলতি আগস্ট মাসের শুরু থেকেই যেমন পরীক্ষার জট কমে এসেছে, তেমনি মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ফলাফল দিতেও সক্ষম হচ্ছে ল্যাবগুলো।

জানতে চাইলে বিআইটিআইডি ল্যাব প্রধান ডা. শাকিল আহমেদ পূর্বকোণকে বলেন, ‘মাসখানেক আগেও রাত-দিন পরীক্ষা করার পরও সঠিক সময়ে ফল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে। কিন্তু সেই পরিস্থিতি এখন আর নেই। নমুনা আসা মাত্রই তা পরীক্ষা শেষে একদিনের মধ্যে ফল দিতে সক্ষম। যদিও আগের তুলনায় নমুনার সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণেই এমন হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।’
নমুনা পরীক্ষা কমার কারণ হিসেবে জানতে চাইলে এ চিকিৎসক বলেন, ‘আগে ফ্রিতে নমুনা পরীক্ষা করা যেত, কিন্তু বর্তমানে টাকা দিয়েই পরীক্ষা করাতে হয়। এছাড়া মানুষের মধ্যে সচেতনতাও বেড়েছে। যার কারণে অনেকেই এখন আর নমুনা পরীক্ষায় আগ্রহ দেখাচ্ছে না।’

এদিকে, পরীক্ষায় আগ্রহ কমলে কিংবা পরীক্ষার সংখ্যা না বাড়লে সংক্রমণ ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের। তাদের মতে, নমুনা পরীক্ষা ও সংগ্রহ বাড়ানোর মাধ্যমে রোগী শনাক্ত করা না গেলে সামনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। তাই নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি সংগ্রহও বাড়ানোর তাগিদ তাদের।

এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মাহফুজুর রহমান পূর্বকোণকে বলেন, ‘নমুনা পরীক্ষা বা সংগ্রহ কমে যাওয়া মোটেও ভাল লক্ষণ নয়। মূলত ল্যাবগুলোতে অতীতে নমুনা পরীক্ষা নিয়ে যে ভীতি তৈরি হয়েছে, সে কারণেই এখন আর সাধারণ মানুষ পরীক্ষায় আগ্রহ দেখাচ্ছে না। যত বেশি নমুনা পরীক্ষা বাড়ানো যাবে, ততই উত্তম। তবে এটিও মাথায় রাখতে হবে- যেন ফলাফল পেতে ভোগান্তি না হয়।’

অন্যদিকে, কারও সন্দেহ হলে সাথে সাথে নমুনা পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি পূর্বকোণকে বলেন, ‘অতীতে নমুনার জট ছিল, কিন্তু সেটি এখন নেই। সরকার পরীক্ষার ফি-ও কমিয়ে এনেছে। তাই যাদের সন্দেহ হবে মাত্র একশ’টাকা দিয়ে করোনা পরীক্ষা করানো উচিত। এতে করে ব্যক্তির যেমন ভালো, তেমনি সংক্রমণ রোধ দ্রুত নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।’
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট