চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

গর্তে গর্তে ঘণ্টা পার !

আল-আমিন সিকদার

২৫ আগস্ট, ২০২০ | ১২:২৬ অপরাহ্ণ

নগরীর কাস্টমস মোড় থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত সড়কে প্রতিদিন অসহনীয় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এই যানজটের প্রভাব পড়ে ফ্রি-পোর্ট থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশে। এতে কয়েক কিলোমিটার যানবাহনের দীর্ঘলাইন পড়ে যায়। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছে এই সড়ক ব্যবহারকারীরা। ফ্রি-পোর্ট থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত পাঁচ মিনিটের দূরত্বের সড়কে এখন ঘণ্টার চেয়েও বেশি সময় লাগছে। ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের কারণে মূলত এই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান চালকরা। একই মন্তব্য নগর ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তাদের। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের (ফ্লাইওভার) কারণে এই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে এবং ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজের জন্য ভারি যানবাহন ব্যবহারের ফলে সড়কের এই বেহাল দশা (অসংখ্য গর্ত) হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ফ্রি-পোর্ট থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত অসহনীয় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। পানি জমে থাকা ও ভারি যানবাহন চলাচলের ফলে সড়কের উভয় পাশে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। সকালে গাড়ির চাপ কম থাকলেও দুপুর গড়ালেই শুরু হয় যানজট। বিকেল হতে হতেই সড়কের উভয় পাশে দাঁড়িয়ে যায় গাড়িগুলো। গতকালের এ যানজট চলে গিয়েছিল সল্টগোলা থেকে কাস্টমস মোড় পর্যন্ত। ‘এক পা, দু’পা’ করে গাড়ি সামনে এগোতে দেখা গেছে গাড়িগুলোকে। ফলে দীর্ঘ সময় জুড়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
বন্দরটিলা এলাকার মো. রাজু নামের চট্টগ্রাম ইপিজেডের এক চাকুরিজীবী জানান, প্রতিদিন এই সড়ক ব্যবহার করে অফিস যাতায়াত করি। সম্প্রতি খুব ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে সিমেন্ট ক্রসিং থেকে ফ্রি-পোর্ট পর্যন্ত এক ঘণ্টা লাগছে। আগে যেখানে সময় লাগতো মাত্র ৫ থেকে ১০ মিনিট। ফ্লাইওভারের কাজ চলায় সড়কের মাঝ অংশে ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে। এছাড়া, সামান্য বৃষ্টিতে সড়কের উভয়পাশে পানি জমে যায়। ফলে যান চলাচলের কোন উপায় নেই।

মাহিন্দ্র ট্যাক্সি চালক মো. সোহল জানান, আগে আমাদের গাড়ি ফ্রি-পোর্ট থেকে বিমানবন্দর সড়ক পর্যন্ত চলতো। এখন যানজটের কারণে সিমেন্ট ক্রসিং থেকে বিমান বন্দর পর্যন্ত যাতায়াত করতে হচ্ছে। এরপরও যানজটের কারণে গাড়ি চালাতে পারছি না। আগে যেখানে দৈনিক ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা ইনকাম হতো, এখন সেখানে ৫০০-৬০০ টাকাও ইনকাম করতে পারছি না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি নিয়ে যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে।
বন্দরটিলা এলাকার বাসিন্দা মো. শাকিল জানান, ‘সিমেন্ট ক্রসিং থেকে ফ্রি-পোর্ট এলাকা এখন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে গেছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানুষ যানজটে আটকা পড়ছে। কোথাও যে সঠিক সময়ে যাবো তার উপায় নেই। এই এলাকা থেকে বের হতে যেমন হাতে দু’ঘণ্টা অতিরিক্ত সময় নিয়ে বের হতে হয়, তেমনি প্রবেশও। কারণ, বন্দরের গাড়িগুলো এলোমেলোভাবে রাস্তায় পড়ে থাকায় কাস্টমস মোড় থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তায় অচলবাস্থার সৃষ্টি হয়। কোন কোন দিন এ যানজট মধ্যরাতেও লেগে থাকে। আমাদের এ দূরাবস্থা থেকে বাঁচানোর জন্য সরকারের একটা ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন’।

জনসাধারাণের অভিযোগের সাথে একমত পোষণ করেছেন নগর ট্রাফিক পুলিশের বন্দর বিভাগের ট্রাফিক পরিদর্শক (প্রশাসন) মো. মশিউর রহমান। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘এখন প্রতিনিয়ত যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। যেটার মাত্রাও অনেক বেশি। যা সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় আমাদের পুলিশ সদস্যদের। সাধারণত বর্ষার মৌসুমে সড়কে পানি জমে থাকায় গর্তের সৃষ্টি হয়। এই ছোট ছোট গর্তগুলো যেমন যানজটের অন্যতম কারণ, তেমনি বন্দরও ওই এলাকার যানজট সৃষ্টির জন্য দায়ী। যার কারণ হচ্ছে, বন্দরে এক একটি গাড়ি প্রবেশে সময় লাগে ৫ মিনিট। এই লম্বা সময় সড়কে গাড়ির চাপ আরও বেড়ে যায়। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বন্দর এ সমস্যার সমাধান করতে পারলে হয়ত বন্দর কেন্দ্রিক যে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে তা অনেকটাই কমে আসবে।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট