চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

চুরির অভিযোগে মা-মেয়েকে নির্যাতন: গ্রেপ্তার ৩ অভিযুক্ত জেলে

ফেসবুকে ভাইরাল: তদন্ত কমিটি গঠিত

চকরিয়ায় গরু চোর সন্দেহে মা-মেয়েসহ ৪ জনকে রশিতে বেঁধে নির্যাতন

চকরিয়া-পেকুয়া সংবাদদাতা

২৩ আগস্ট, ২০২০ | ৬:৪৪ অপরাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়ায় গরু চোর সন্দেহে একই পরিবারের চারজনকে রশিতে বেঁধে নির্যাতনের পর পুলিশে দিয়েছে স্থানীয় জনতা ও ইউপি চেয়ারম্যান। শুক্রবার চকরিয়া উপজেলা হারবাং ইউনিয়নের পহরচাঁদা এলাকায় এ ঘটনা ঘটলেও পরে রশিতে বাঁধা অবস্থায় মা-মেয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি প্রকাশ পায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মা-মেযেসহ একই পরিবারের চারজনকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন।

এ ঘটনায় স্থানীয় মাহমুদুল হক বাদি হয়ে গরু চুরির অভিযোগে চকরিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার শান্তিরহাট এলাকার আবুল কালামের স্ত্রী পারভীন আক্তার, তার মেয়ে সেলিনা আক্তার, রোজিনা আক্তার, ছেলে আরমান ও পেকুয়া উপজেলার ছুট্টু নামের একজনকে আসামি করা হয়। পরে পুলিশ তাদের জেল হাজতে পাটিয়ে দেন।

এদিকে এঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি ঘটনা করা হয়েছে। এতে জেলা প্রশাসনের উপ-সচিব পদ মর্যাদার শ্রাবস্তী রায়কে প্রধান করা হয়েছে।

চকরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান জানান, এক পরিবারের তিন নারী সদস্যসহ গরু চোর সিন্ডিকেটের ৫ সদস্যকে এক কিলোমিটার ধাওয়া করে স্থানীয় জনতা আটক করেছে বলে জানতে পারি। পরে পুলিশ পাঠিয়ে ৩ নারী ও ২ পুরুষ সদস্যকে স্থানীয় ইউপি কার্যালয় থেকে আটক করে বাদির আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত তাদের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

তিনি আরো বলেন, এসময় তাদের কাছ থেকে একটি সিএনজি ও গরুর বাচুর ও একটি অজ্ঞান করার স্প্রে মেশিন উদ্ধার করা হয়।

স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, শুক্রবার জুমার নামাজের সময় একটি সিএনজি পহরচাঁদা এলাকায় অবস্থান করে। এসময় সিএনজি চালক গাড়ি নষ্ট হয়েছে ভান করে গাড়ি মেরামত করতে থাকে। ওইসময় গাড়িতে কয়েকজন মেয়ে দেখে কারও সন্দেহ হয়নি তারা গরু চোর। পরে ওই চোরের দল রাস্তার পাশে থাকা একটি গরু সিএনজিতে তুলে নেয়। ঘটনাটি মোটরসাইকেল আরোহী এক যুবক দেখে ফেললে তাদের পিছু নেয়। এক পর্যায়ে সিএনজিটি রেল লাইন এলাকার কাদা মাটিতে আটকে গেলে তারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় স্থানীয় লোকজন তাদের ধাওয়া দিয়ে ধরে পেলে এবং রশি দিয়ে বেধে প্রকাশ্যে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে তাদের উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন।

হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মিরানুল ইসলাম মিরান বলেন, অভিযুক্তদের আমি পরিষদের এনে মেরেছি বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সঠিক না। ওইদিন বিকেল তিনটার দিকে চট্টগ্রাম থেকে এলাকায় ফিরে আসি।

পরে গরু চোর আটকের ঘটনাটি জানতে পারি। ঘটনাটি চকরিয়া থানা পুলিশ ও ইউএনওকে ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, সামনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন তাই আমার বিরোধী পক্ষ আমাকে ফাসানোর জন্য নানা ধরনের তৎপরতা চালাচ্ছে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, ঘটনারদিন বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জেনেছি। আমি তখন গরু চোরদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার নির্দেশ দিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, এ ঘটনায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত টিম ঘটনা করা হয়েছে। এতে উপ-সচিব শ্রাবস্তী রায়কে প্রধান করা হয়েছে। এই কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন চকরিয়ার এসিল্যান্ড ও একজন হারবাং ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসারকে দেয়া হয়েছে।

বিষয়টি আমি নিজেই খতিয়ে দেখছি। অভিযুক্তরা যদি মনে করে তাদের অপমান বা হয়রানি করা হয়েছে তাহলে তাদের অভিযোগও আমলে নিয়ে মামলা নেয়া হবে।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট