চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

৪৫ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারকে এলপিজি সুবিধা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক

২ জুন, ২০১৯ | ৯:৪৩ অপরাহ্ণ

খায়ের হোসেনের স্মৃতিতে এখনো ভাসে যখন তাঁর পরিবারের খাবার রান্না করা মানেই ছিল লাকড়ি যোগাড় করতে পার্শ্ববর্তী উঁচু খাড়া পাহাড় বেয়ে জঙ্গলে যাওয়া। খায়ের অবশ্য নিশ্চিত নন কোনটা তার জন্য কষ্টকর ছিল। লাকড়ি সংগ্রহ করতে গ্রীষ্মের তাপদাহে ঘেমে নাকি বর্ষায় কাদা-পানিতে ভিজে দুর্গম বহুপথ পাড়ি দেওয়া। সময়ের সাথে সাথে একদিকে পাহাড়ি বনাঞ্চল কমতে থাকে অন্যদিকে দোকানিদের কাছে লাকড়ির দামও বাড়তে থাকে।

মায়ানমারের থিন বাউ-ক্যেই গ্রামের বাসিন্দা রোহিঙ্গা খায়ের বলেন: কাঠের লাকড়ি কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এখন। তাই এলপিজি গ্যাসই আমাদের অন্যতম অবলম্বন।” খায়ের ২০১৭ সালে তার পরিবারের ছয়জন সদস্যসহ মায়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছিল।
শুধু খায়েরই নয়, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা এখন কাঠের লাকড়ি ব্যবহার থেকে সরে এসে গ্যাসের চুলা ব্যবহারে অভ্যস্ত হচ্ছে যা এ অঞ্চলের বনাঞ্চল রক্ষায় প্রয়োজন ছিল।

২০১৭ সালের মাঝামাঝিতে মায়ানমার সীমান্ত এলাকা রাখাইনে সহিংসতার ঘটনা ঘটলে প্রায় ১০ লাখের অধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে আসে। বিপুল সংখ্যক এই জনগোষ্ঠী কক্সবাজারের উখিয়া- টেকনাফে বসবাসের অনুপযোগী পাহাড়ী জায়গায় আশ্রয় নেয়। বিভিন্ন সংস্থা থেকে পাওয়া নানা খাদ্যসামগ্রী রান্না করার জন্য রোহিঙ্গা পরিবারগুলো লাকড়ির প্রয়োজন অনুভব করছিল যার ফলে গোটা এলাকায় লাকড়ির ব্যাপক চাহিদা দেখা দেয়। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-র তথ্যমতে, প্রায় সাত হাজার হেক্টর বনাঞ্চল নষ্ট হয়। যেহেতু মৌসুম ও সাইক্লোনের সময় এগিয়ে আসছে, তাই গাছবিহীন ক্যাম্প এলাকার পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ। মাটি রক্ষায় ক্যাম্পের জন্য এখন একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা এবং ভারী বৃষ্টিপাতে ক্যাম্পে মারাত্মক পাহাড়ধ্বসের আশংকা আছে। ২০১৮ সালে মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলো এই সমস্যা চিহ্নিত করে এবং শরণার্থী ক্যাম্পে লাকড়ির চাহিদা কমিয়ে ক্যাম্পে বৃক্ষরোপণে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে।
আইওএম, এফএও (ফুড এন্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন) এবং ডব্লিউএফপি (ওয়ার্ল্ড ফুট প্রোগ্রাম) মিলে ‘সেইফ প্লাস’ নামে একটি কর্মসূচি গ্রহণ করে যার মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীদের মাঝে এলপিজি গ্যাস এবং চুলা বিতরণ করা হয় পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত বনাঞ্চলের জন্য বনায়ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়।
এই কর্মসূচির আওতায় শরণার্থী ও স্থানীয়দের গ্যাসের চুলা, এলপিজি গ্যাসের পাশাপাশি গ্যাস পুনরায় রিফিল করার সুবিধাও দিচ্ছে। ইতোমধ্যে, ৪৫,০০০ পরিবারকে এলপিজি সুবিধা দেওয়া হয়েছে এবং জুনের মধ্যে ৮০,০০০ পরিবারকে এই সুবিধার আওতায় আনা হবে।

সেইফ প্লাসের আইওএম ইউনিটের প্রধান প্যট্রিক কেরিগনন বলেন, এখন পর্যন্ত এই কর্মসূচিটি খুবই সফল। কিন্তু তিন-বছর মেয়াদি এই কর্মপরিকল্পনার জন্য ৩০ শতাংশেরও কম অর্থসাহায্য পাওয়া গেছে। পাশাপাশি তিনি এফএও-র সাথে যৌথভাবে চালানো ক্যাম্পের ভিতরে ও চারদিকে বৃক্ষরোপনের উপরও সমান গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, এই উদ্যোগ সফল হবে কারণ এটি লাকড়ির চাহিদা মেটাবে পাশাপাশি এই অঞ্চলে বনায়নও হবে।

আইওএম-এর প্রোগ্রাম অফিসার সাইফুল ফুয়াদ বলেন, মৌসুমী ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ভয়ংকর মাটিক্ষয়  রোধে বৃক্ষরোপন জরুরী। ভাটিবার ও ব্রুম ঘাস এবং স্থানীয় ঔষধি গাছগুলো পাহাড়ের মাটি ধরে রেখে পাহাড়ের পাশগুলোকে রক্ষা করবে। অন্যান্য গাছ-গাছড়াও ঔষধি হিসেবে কাজ করবে।
তিনি আরো বলেন, স্থানীয় প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে নিম, সেগুনসহ এ এলাকার বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপন করা হচ্ছে যাতে তা এখানকার জনগোষ্ঠীর কাজে আসে।

সামগ্রিকভাবে এলপিজি কর্মসূচি শরণার্থী ও স্থানীয়দের নজর কেড়েছে। তারা বলছে এটি তাদের কাঠের লাকড়ি খোঁজার সময় বাঁচাচ্ছে এবং তাদের ঘরবাড়িগুলোকে পরিচ্ছন্ন বাতাস প্রবাহে সাহায্য করছে। পাশাপাশি নারীদের লাকড়ির জন্য ক্যাম্প ছেড়ে দূরে জঙ্গলের যাওয়ার ঝুঁকিও কমিয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট