চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সুস্থ হলেও পুরোপুরি রক্ষা নেই

ইমাম হোসাইন রাজু

১৭ আগস্ট, ২০২০ | ১২:১১ অপরাহ্ণ

পঞ্চাশোর্ধ আব্দুল জলিল। দু’মাস আগেই করোনার সাথে লড়াই করে জিতেছেন তিনি। ফিরেছেন স্বাভাবিক জীবনেও। কিন্তু করোনা তাকে ছাড়লেও নতুন করে দেখা দিয়েছে শ্বাসকষ্টসহ অন্য সমস্যা। যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে ছুটে এসেছেন নগরীর জেনারেল হাসপাতালে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা গেলো সাম্প্রতিক সময়ে আব্দুল জলিলের ফুসফুসের একটি অংশে ক্ষত হয়ে গেছে।
শুধু আব্দুল জলিলই নয়, গত শনিবার জেনারেল হাসপাতালে চালু হওয়া (করোনা আক্রান্ত থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের সেবা দিতে) ‘পোস্ট কোভিড ওয়ার্ডে’ এমন আরও কয়েকব্যক্তি হাজির হয়েছেন চিকিৎসা নিতে। শুধু কি জেনারেল হাসপাতাল। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ও বেসরকারি এবং চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বারেও প্রতিদিন এমন অসংখ্য করোনা থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তি শারীরিক নানান সমস্যা নিয়ে ছুটে আসছেন।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যে, করোনা থেকে সেরে ওঠার পর কিডনি, হার্ট বা ফুসফুসের নানা সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ছুটে আসছেন অনেকেই। যাদের অধিকাংশের মধ্যেই হার্ট বা ফুসফুসের নানা সমস্যা নতুন করে দেখা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, করোনায় সুস্থতার হার বাড়লেও এই ভাইরাসে একবার আক্রান্ত হওয়ার পর তার ক্ষতিকর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে। তাদের আশঙ্কা, কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠলেও রেহাই মিলবে না ৫০ শতাংশ রোগীর। যাদের করোনা থেকে সেরে ওঠা পরবর্তী পরিস্থিতি বা শারীরিক সমস্যা আরও ভয়ঙ্কর হতে পারে। এরমধ্যে যাদের শরীরে আগে থেকেই কোন না কোন জটিল অসুখ রয়েছে, তাদের এ ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রামে গতকাল (রবিবার) পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৫ হাজার ৮০৯ জন। যাদের প্রায় ৭৫ শতাংশই ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন। তবে এদের অনেকে নানান সমস্যা নিয়ে ছুটে আসছেন হাসপাতাল বা চিকিৎসকদের চেম্বারে। যাদের মধ্যে হার্ট, ফুসফুস, কাশি, সর্দি ছাড়াও দেখা দিয়েছে নতুন অসুখও। বিষয়টি নজরে এসেছে স্বাস্থ্য বিভাগেরও। যার বিষয়ে কোভিড ও সরকারি হাসপাতালগুলোতে এসব ব্যক্তিদের সেবা দিতে পৃথক ‘পোস্ট কোভিড’ নামে নতুন ওয়ার্ড চালু করতে নির্দেশনা দেয়া হয়। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে গত শনিবার থেকে চালু করা হয়েছে এমন ওয়ার্ড। এছাড়া চমেক হাসপাতালেও পৃথক করোনা ওয়ার্ড-২ নামে চালু করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রব মাসুম এ প্রসঙ্গে পূর্বকোণকে বলেন, ‘সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের বেশিরভাগ রোগীর মধ্যেই এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে। যাদেরই আগে থেকে অন্য রোগ ছিল, তাদের এ সমস্যাটি বেশি জটিল হচ্ছে। বিশেষ করে লান্সে ক্ষতি করছে করোনা। তবে কেন এমন হচ্ছে, বিষয়টি এখনো অজনা। তবে এ ব্যাপারে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। আশা করি একটা ফল হয়তো জানা যাবে’।
এ চিকিৎসক ছাড়াও একই বক্তব্য ছিল স্বয়ং স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মুখেও। যা নিয়ে চিন্তা বাড়াচ্ছে তাদের। যার কারণ এসব সমস্যা দীর্ঘ হওয়ার শঙ্কা। শুধু তাই নয়, ইতোমধ্যে সুস্থ হওয়াদের অনেকেই মারা গেছেন এমন সমস্যা নিয়ে। যার বিষয়ে তথ্যও সংগ্রহ করছেন স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি পূর্বকোণকে বলেন, ‘কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠলেও অনেকের শরীরে সমস্যা নতুন করে মাথা চাড়া দিচ্ছে। অধিকাংশই সম্পূর্ণ রূপে সুস্থ হয়ে ওঠতে পারছে না। এসব রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা পেতে সরকারি হাসপাতালগুলোতে পৃথক পোস্ট কোভিড ওয়ার্ড চালু করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিষয়টি সকলকেই নজরে নিতে বলা হয়েছে’।
অন্যদিকে, আগে থেকেই যাদের অন্য কোন জটিল অসুখ ছিল, তাদের ঝুঁকির আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি বলে অভিমত চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবিরের। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘সুস্থ হয়ে ওঠাদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ ব্যক্তি পুরোপুরিই সুস্থ হতে পারছে না। তাদের অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে এমন আশঙ্কা বেশি। এমন সমস্যা দীর্ঘমেয়াদী হবে’। তাই অবশ্যই সবাইকে বেশি সতর্ক থাকার পরামর্শ এ চিকিৎসকের।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট