চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

কোরবানির গরু

‘লাইভ ওয়েট’-এ ঝুঁকছেন ক্রেতারা

আল-আমিন সিকদার

২৫ জুলাই, ২০২০ | ১২:৪১ অপরাহ্ণ

কোরবান এলেই পশুর হাটে জমতো ক্রেতাদের ভিড়। সারাদিন হাট ঘুরে পছন্দের গরু ক্রয় করে বাড়ি ফিরতেন ক্রেতারা। আর গরু নিয়ে বাড়ি ফেরার পর শুরু হতো প্রতিবেশীদের প্রশ্ন। ‘গরু কত হলো?, কোন জায়গা থেকে নিলেন?, মাংস কতটুকু হবে? এমন নানা প্রশ্ন। যে প্রশ্নগুলোর উত্তর শোনার পর কেউ বলতো, ‘ভাই পানির দামে গরু পাইছেন’ আবার কেউ বলতো, ‘দাম বেশি হয়েছে’। কোরবানে গরু নিয়ে এসব প্রশ্নের সম্মুখীন হয়নি এমন মানুষ মিলবে না। তবে এবার গরু কিনতে গিয়ে লাভ-লোকসানের হিসেব নিজেরাই কষছেন ক্রেতারা। কারণ, গরু কিনছেন ওজন মেপে, কেজি দরে। যে পদ্ধতিটি পরিচিত ‘লাইভ ওয়েট’ নামে। চট্টগ্রামেও পরিচিতি পেয়েছে পদ্ধতিটি। বেশ কয়েকটি খামারে ‘লাইভ ওয়েট’ পদ্ধতিতে বিক্রি হচ্ছে কোরবানির গরু। যেখানে কেজি দরে গরু কিনতে ভিড় করতে দেখা গেছে ক্রেতাদের। যার প্রভাব পড়েছে পশুর হাটগুলোতে। অনেকটাই ক্রেতাবিহীন সময় পাড় করছে হাটগুলো।

নগরীর পতেঙ্গো থানাধীন বাটারফ্লাই পার্কের সামনে এবারো বসেছে কোরবানির পশুর হাট। কোরবানির কেবল ৭ দিন বাকি থাকলেও এখনও জমে উঠেনি বাজারটি। সরেজমিনে খবর নিয়ে জানা যায়, ক্রেতারা এবার কোরবানির পশু ক্রয়ে ঝুঁকছেন খামারে বিক্রি হওয়া ‘লাইভ ওয়েট’ পদ্ধতিতে। যার প্রমাণ মিলেছে পশুর হাটটির কয়েকগজ সামনে থাকা ‘মোল্লার ফার্ম’-এ গিয়ে। খামারটির সামনের অংশের বেশকিছু খুঁটিতে বেঁধে রাখা হয়েছে গরু। নানান গঠনের এ গরুগুলো দেখতে ভিড় জমিয়েছেন ক্রেতারা। পছন্দ হলেই দড়ি খুলে ওজন স্কেলে নেয়া হচ্ছে গরুগুলোকে। গরুর ওজনপ্রতি দাম হাঁকা হয়েছে ৩৫০ টাকা। এই পদ্ধতিটিকেই খামার ব্যবসায়ীরা বলছেন ‘লাইভ ওয়েট’ পদ্ধতি। যে পদ্ধতিতে এরইমধ্যে অর্ধশতাধিক গরু বিক্রি করেছে খামারটি।

তবে এ পদ্ধতিতে গরু ক্রয়ে কেজি প্রতি ৩৫০ টাকা পড়লেও পরিশেষে প্রতিকেজি মাংসের দাম পড়বে ৫৫০-৬০০ টাকা। কারণ, ক্রয় করা গরুর মোট ওজনের ৬০ শতাংশ মিলবে মাংস। মাংসের হিসেব থেকে বাদ পড়বে বাকি ৪০ শতাংশ। যেমন প্রতিবেদনটিতে ওজন স্কেলের ওপর যে গরুটিকে তোলা হয়েছে সেটার ওজন ৫৭২ কেজি। ৩৫০ টাকা কেজি দরে গরুটির মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ২ লাখ টাকা। তবে ৫৭২ কেজির এ গরুটি থেকে মাংস মিলবে কেবল ৩৪৩ কেজি। অর্থাৎ মূল ওজনের ৬০ শতাংশ। সে অনুযায়ী প্রতিকেজি মাংসের দাম পড়বে ৫৮৩ টাকা। যা খুচরা বাজারমূল্যের চেয়েও কম। তাইতো ‘লাইভ ওয়েট’ পদ্ধতিতে গরু ক্রয় করতে দেখা গেছে ক্রেতাদের।
খামারটি থেকে দুটি গরু ক্রয় করেছেন শাকিল নামে এক যুবক। যার একটির মূল্য ৫৫ হাজার অন্যটি ৬২ হাজার। এবারই প্রথম এ পদ্ধতিতে কোরবানির গরু ক্রয় করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। শাকিল পূর্বকোণকে বলেন, ‘ভাইরাসের কারণে পরিবারের বড় কাউকে হাটে পাঠাতে ভয় হচ্ছে। তাই চিন্তা করেছি নিজেই গরু কিনবো এবার। তবুও চেষ্টা করেছি হাটে না যেতে। কারণ, হাটে প্রচুর মানুষ আসে। খবর নিচ্ছিলাম কোথায় কম দামে ভালো গরু পাওয়া যায়। পরে জানতে পারলাম পতেঙ্গার একটি খামারে কেজি দরে গরু বিক্রি হচ্ছে। পরে সবকিছু মিলেয়ে ঝামেলা এড়াতে ৩৫০ টাকা কেজি দরে এখান থেকে কোরবানির জন্য দুটি গরু নিয়েছি।’

খামার মালিক মো. হানিফ মোল্লা পূর্বকোণকে বলেন, ‘লাইভ ওয়েট পদ্ধতি নতুন কিছু নয়। ঢাকায় অনেক আগে থেকেই এ পদ্ধতিতে গরু বিক্রি করে আসছে বিভিন্ন খামার। চট্টগ্রামেও কয়েকটি খামারে এ পদ্ধতিতে গরু বিক্রি হচ্ছে। তবে এবার ভালো সাড়া পাচ্ছি ক্রেতাদের। ৩৫০ টাকা কেজি দরে এরইমধ্যে ৫০টি গরু বিক্রি করেছি। শুধুমাত্র গত বুধবারই বিক্রি করেছি ৩০টি গরু। এখনও একশরও বেশি গরু রয়েছে। আশাকরছি এগুলোও বিক্রি হয়ে যাবে।’

এদিকে এ পদ্ধতিতে ক্রেতাদের লোকসান কম হওয়ায় ক্রেতারা হাটে না গিয়ে ঝুঁকছেন খামারের দিকে। যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশসহ খামারের গরু হাটে নিয়ে যেতে চাপ দিচ্ছেন হাট ইজারাদার বলেও অভিযোগ করেছেন এ পদ্ধতিতে গরু বিক্রি করা এক খামারের মালিক।
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট