চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রামে হঠাৎ নমুনা সঙ্কট
চট্টগ্রামে হঠাৎ নমুনা সঙ্কট

চট্টগ্রামে হঠাৎ নমুনা সঙ্কট

ইমাম হোসাইন রাজু

১৪ জুলাই, ২০২০ | ১:২৭ অপরাহ্ণ

চলতি মাসের শুরুতেও নমুনার জটে নাকাল ছিল চট্টগ্রামের সরকারি চার ল্যাব। এক প্রকার বাধ্য হয়ে প্রায় আড়াই হাজার নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠাতে হয়েছে ঢাকাতেও। তারও আগে তিন থেকে সাত জুনের সংগ্রহকৃত প্রায় সাড়ে তিনহাজার নমুনাও জটের কারণে ঢাকা থেকে পরীক্ষা করানো হয়। যার ফলাফল পেতে সময় লেগেছিল দুই সপ্তাহ। এমন নাকাল জটের মধ্যেই হঠাৎ গেল চারদিন থেকেই নমুনার অভাব দেখা দিয়েছে স্বয়ং জটপড়া ল্যাবগুলোতে। ইতোমধ্যে নমুনা না পাওয়ায় গেল তিনদিন ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ বন্ধ রয়েছে বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ একটি সরকারি ল্যাবে। 

শুধু তাই নয়, বেশ কিছুদিন ধরেই নমুনা না পাওয়ায় সক্ষমতার অর্ধেকও পরীক্ষা করতে কষ্ট হচ্ছে এসব ল্যাবে। ফলে কিছু ল্যাবে এক শিফট কিংবা দেড় শিফট পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা চালিয়ে নিলেও বাকি সময় কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। তবে এমন অবস্থা হওয়ার কারণ হিসেবে সরকারি ফি নির্ধারণের পাশাপাশি মানুষের আগ্রহ কমে এসেছে বলে অভিমত স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের।

যদিও স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, নমুনা সংগ্রহের জন্য আগের মতোই তাদের কার্যক্রম বিদ্যমান। তবে সাধারণ মানুষ নমুনা দিতে অনাগ্রহী হওয়ায়, তা কমে এসেছে। এরপরও নমুনা সংগ্রহ বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন। অন্যদিকে, নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা বাড়ানোর মাধ্যমে রোগী শনাক্ত করা না গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। তাই আরও অধিকতর নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা বাড়ানোর তাগিদ তাঁদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি বিদ্যমান ৬টি ল্যাব গড়ে ১৩ শ’ থেকে ১৪ শ’ নমুনা পরীক্ষা করে আসছিল এতদিন। কিন্তু গেল চারদিন থেকেই তা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এরমধ্যে ২৪ ঘণ্টায় তথা ১২ জুলাই নমুনা পরীক্ষা হয়েছে মাত্র ৫৯৭টি। তার আগের দিন ১১ জুলাইতে পরীক্ষা হয় ৪২৫টি। ১০ জুলাই ১০৯৯টি নমুনা পরীক্ষা হলেও তার আগের দিন ৯ জুলাইতে নমুনা পরীক্ষা হয় মাত্র ৭৮১টি।
এরমধ্যে চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিভাসু) গেল তিনদিন থেকেই বন্ধ রয়েছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা কার্যক্রম। যেখানে প্রতিদিন আড়ইশ’র কাছাকাছি নমুনা পরীক্ষা করা হতো, নমুনা না পাওয়ায় গেল তিনদিন থেকে বন্ধ রাখতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন ল্যাব সংশ্লিষ্টরা। ল্যাব ইনচার্জ অধ্যাপক ড. জুনায়েদ সিদ্দিকী পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি পূর্বের মতোই আছে। যেহেতু বিআইটিআইডি থেকে নমুনা প্রস্তুত করে আমাদের এখানে পাঠানো হতো কিন্তু তিনদিন ধরে তা পাঠানো হচ্ছে না। যার কারণে পরীক্ষার কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়েছে।’

জানতে চাইলে ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) ল্যাব প্রধান ডা. শাকিল আহমেদ পূর্বকোণকে বলেন, ‘আগে প্রতিদিন নমুনার চাপে আমাদের হিমশিম খেতে হতো কিন্তু কিছুদিন ধরে চাপ নেই। নমুনাও কম সংগ্রহ হচ্ছে। সামন্য কিছু নমুনা সংগ্রহ হচ্ছে। যা এখানেই পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে সিভাসুতে পাঠাতে হচ্ছে না। আজও (সোমবার) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাত্র ৩৬টি নমুনা প্রস্তুত করা হয়েছে। যদিও বিকেলে কিছু নমুনা পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে শতের কাছাকাছি নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।’

হঠাৎ নমুনা কমে যাওয়া বা পরীক্ষা না হওয়ায় অশনিসংকেত দেখছেন জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘নমুনা পরীক্ষা কমে যাওয়া এটা মোটেও ভাল লক্ষণ নয়। এতে পরিষ্কার বোঝা যায় সবাই পরীক্ষার আওতায় আসছে। আর পরীক্ষার আওতায় সবাইকে না আনা গেলে কিংবা অসুস্থ-সুস্থ পৃথক করা না গেলে একসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এমন আশঙ্কা করে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা বাড়ানোর তাগিদ এ বিশেষজ্ঞের।’

এদিকে নমুনা পরীক্ষা কমে গেলেও তা সামনে বাড়াতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি পূর্বকোণকে বলেন, ‘সরকার কর্তৃক ফি নির্ধারণ হওয়ার পর নমুনা পরীক্ষাও কমতে শুরু করেছে। তারমধ্যে অনেকেই অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা করাতেন, সেটিও বন্ধ। এছাড়া দ্বিতীয় নমুনা পরীক্ষাও বন্ধ আছে। যার কারণে পূর্বের চেয়ে নমুনা সংগ্রহ কম হচ্ছে। তবে অনেক দরিদ্র, প্রতিবন্ধী, মুক্তিযোদ্ধাসহ সামর্থ্যহীন ব্যক্তিদের ফ্রিতে পরীক্ষা করাতে সমস্যা নেই। এছাড়া সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বুথে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, যাতে নমুনা সংগ্রহ আগের মতোই চালিয়ে যায়। আশা করছি, সেটি সামনে বাড়বে।’
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট