চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিদেশ যেতে স্বাস্থ্য সনদ সংগ্রহ করুন অনুমোদিত ল্যাব থেকে

ডা. ম. রমিজউদ্দিন চৌধুরী

১২ জুলাই, ২০২০ | ৩:২৯ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশ থেকে করোনার ভুয়া টেস্ট রিপোর্ট ও তথ্য গোপন করে ইতালিতে প্রবেশ করার ঘটনায় তোলপাড় চলছে ইতালিতে। সর্বশেষ দফায় গত ৮ জুলাই ইতালির রোমের দুই বিমানবন্দরে অবতরণ করা ১৮২ বাংলাদেশির মধ্যে ১৬৭ জনকে নামতে না দিয়ে বিমানবন্দর থেকেই ফেরত পাঠানো হয়েছে। এরই জেরে আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত কোন বাংলাদেশিকে সেদেশে ঢুকতে দিবে না, এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইতালি। এই সিদ্ধান্তের কারণে ইউরোপের এই দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশিরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন।

টাকার বিনিময়ে করোনার ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে বাংলাদেশিদের ইতালিতে যাওয়ার বিষয়টি সেই দেশের সংবাদমাধ্যমগুলোতে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হওয়ায় বাংলাদেশ পড়েছে মারাত্মক ইমেজ সংকটে।

এ পর্যন্ত যারা ইতালি থেকে ফেরত এসেছেন তাদের কয়েকজনই জানিয়েছেন, বহুল আলোচিত রিজেন্ট হাসপাতাল থেকে তারা করোনা নেগেটিভের সনদ নিয়েছেন। সেটি জানাজানি হওয়ার পর ইতালিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস বিষয়টি ঢাকায় জানায়। এর প্রেক্ষিতেই রিজেন্ট হাসপাতালের দুটি শাখায় অভিযান পরিচালনা করে করোনার ৬ হাজার ভুয়া সনদ জব্দ করে।

জানা যায়, ইতালির স্বাস্থ্য দপ্তর ঢাকা ত্যাগের ৭২ ঘণ্টা পূর্বে ইস্যু করা স্বাস্থ্য সনদ দেখানো বাধ্যতামূলক করায় অনেকে অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও বিদেশে কর্মস্থলে ফিরতে ভুয়া স্বাস্থ্য সনদ সংগ্রহ করছেন। সেই সনদ নিয়ে ইতালি গিয়েই বিমানবন্দর থেকে ফের দেশে ফেরত আসতে বাধ্য হয়েছেন।
দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক মানুষ নাগরিকত্ব কিংবা চাকরিসূত্রে ইতালিসহ বহু দেশে থাকেন। যাদের কেউ কেউ করোনা প্রাদুর্ভাবের সময় দেশে এসেছেন। আকাশ পথ উম্মুক্ত হওয়ার সুবাদে ইতোমধ্যে আবার যাওয়ারও উদ্যোগ নিচ্ছেন। তাদের সবাইকে ইতালিফেরতের ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার জন্য বহু দেশ শর্তসাপেক্ষে তাদের আকাশপথ খুলতে শুরু করেছে। তবে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে প্রত্যেক দেশ ‘সেদেশে ফেরত যাওয়া ব্যক্তিরা যে করোনামুক্ত’- সেটি নিশ্চিত হতে কড়াকড়ি ব্যবস্থা আরোপ করেছে। দেশ থেকে স্বাস্থ্য সনদ সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলেও প্রতিটি দেশ বিমানবন্দরে তাদের নিয়মে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারপর আগতদের ঢুকতে দিচ্ছে। এ অবস্থায় যারা চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন দেশে যাবেন, তারা সরকারি ৪টি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকার অনুমোদিত বেসরকারি দুটি ল্যাব ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল ও শেভরন থেকে করোনা রিপোর্ট নিয়ে যাবেন। চট্টগ্রামে সরকারি ৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ল্যাব, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাব। এসব প্রতিষ্ঠানের বাইরে চট্টগ্রামের কোন ল্যাবে যেহেতু করোনা পরীক্ষার অনুমোদন নেই, তাই কারও প্ররোচনায় প্রলুব্ধ হয়ে অননুমোদিত ল্যাব থেকে করোনার স্বাস্থ্য সনদ সংগ্রহ করা হলে তাদেরকে ইতালিফেরতদের পরিণতি বরণ করতে হবে। এতে একদিকে নিজের ক্ষতিতো হবেই দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হবে।

অন্যদিকে, যেসব অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান করোনার টেস্ট করছে, সেসব প্রতিষ্ঠানকে আরও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে কোন ভুল রিপোর্ট না আসে। অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলের কারণে যাতে কেউ বিব্রত অবস্থায় না পড়েন- সেদিকে ল্যাবগুলোকে সজাগ থাকতে হবে।

সবশেষে, সকল প্রবাসীর কাছে একটাই অনুরোধ, বিদেশে যাওয়ার সময় অনুমোদিত ল্যাব থেকে করোনার স্বাস্থ্য সনদ সংগ্রহ করুন। নিজে বিড়ম্বনামুক্ত থাকুন। দেশের সম্মান উর্ধ্বে তুলে রাখুন।
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট