চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ঈদের নতুন জামার লোভে কোলের সন্তান হারালেন শেফালী

নাজিম মুহাম্মদ

৩০ মে, ২০১৯ | ৩:০৬ পূর্বাহ্ণ

নিজের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। স্বামী আবদুর রবও তেমন নিয়মিত কাজ করে না। পেশায় টেম্পো চালক হলেও কোনদিন গাড়িতে যায় আবার কোনদিন যায় না। দুই মাস বয়সী শিশু সন্তান মোহাম্মদ আলিকে নিয়ে ভিক্ষা করেই জীবন চলে শেফালীর। নিজে না কিনলেও ঈদে শিশুটিকে নতুন জামা কিনে দেয়ার বেশ ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু সাধ থাকলেও সাধ্য ছিলো না। অবশেষে এক যুবক মা ছেলে দুজনকে নতুন জামা কিনে দেয়ার কথা বললে আনন্দে ভরে যায় দু’চোখ। কেই বা জানতো নতুন জামা নিতে গিয়ে কোলের শিশু সন্তানটি চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলবে? সন্তানকে হারানোর পর থেকে থানার দরজা ছাড়ছেন না ভিখারি শেফালী বেগম। নতুন জামা কিনে দেয়ার কথা বলে কৌশলে ভিখারীর দুই মাস বয়সী শিশু সন্তান নিয়ে চলে গেছে এক যুবক। শিশুটির নাম মোহাম্মদ আলী। নগরীর রিয়াজ উদ্দিন বাজার আমতল এলাকায় গত সোমবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটেছে। এবিষয়ে গত মঙ্গলবার রাতে কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন শিশুটির মা শেফালী বেগম। শেফালী বলেন, আমার স্বামী আবদুর রব টেম্পোচালক। কুমিল্লার চান্দিনা থানার সাতগাঁও গ্রামে আমাদের নিজ বাড়ি। নগরীর আমবাগান নালা পাড়ার আক্কাছ কোম্পানির বাসায় ভাড়া থাকি। স্বামী টেম্পোচালক

হলেও নিয়মিত গাড়ি চালান না। অধিকাংশ সময় বেকার বসে থাকেন। তাই বাধ্য হয়ে ভিক্ষা করি। কয়দিন আগে ভিক্ষা করার সময় সার্সন রোড এলাকায় আমার প্রচুর বমি হয়। এসময় এক যুবক আমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। গত ২৬ মে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় কাজীর দেউড়ি এপোলো শপিং সেন্টারের সামনে ভিক্ষা করার সময় এক যুবক আমার সাথে পরিচিত হয়। আনুমানিক ২৫ বছর বয়সী ওই যুবক আমাকে বলেন, কয়েকদিন আগে আপনি বমি করেছিলেন। আমার হাতে বমি লেগেছিলো। পরনের বোরকা দেখে আপনাকে চিনতে পেরেছি। আপনি আমার মায়ের মতো। আপনাকেও আপনার বাবুকে কাল (২৭ মে) ঈদের নতুন জামাকাপড় কিনো দেবো।
শেফালী বলেন, নতুন জামা কাপড় পাবার লোভে গত মঙ্গলবার বিকেল চারটায় শিশু মোহাম্মদ আলিকে কোলে নিয়ে কাজির দেউড়ি মোড়ে গিয়ে ওই যুবকের সাথে আমি দেখা করি। তিনি আমাকে রিয়াজউদ্দিন বাজার থেকে নতুন জামা কাপড় কিনে দেয়ার কথা বলে নিজে একটি রিকশায় উঠেন। সন্তান নিয়ে আমি আলাদা একটি রিকশায় উঠে কাজীর দেউড়ি থেকে তিনপুলের মাথায় আসি। বিকেল সাড়ে চারটার সময় (২৭ মে) জুবিলি রোডের আমতল এলাকার হোটেল সফিনার সামনে রাস্তার উপর বমি করলে যুবকটি আমাকে একটি পানির বোতল দেয়। আমাকে বললো, পানি দিয়ে কাপড়ে লাগা বমির ময়লা পরিষ্কার করে নেন। শিশুটি আমার কোলে দেন। সফিনা হোটেলের দ্বিতীয় তলায় বাথরুম আছে।
শেফালী জানান, শিশু মোহাম্মদ আলীকে যুবকটির কোলে দিয়ে সফিনা হোটেলে দ্বিতীয় তলায় গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে নেমে দেখি যুবকটি নেই।
কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন জানান, সংবাদ পাবার পরপরই আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এব্যাপারে শেফালী বাদি হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। শিশুটি উদ্ধারে আমাদের টিম কাজ করছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট